Print Date & Time : 6 July 2025 Sunday 3:46 am

৩২ কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ ধারণ বাধ্যতামূলক করে বিএসইসি। আর যাদের ৩০ শতাংশ শেয়ার হোল্ডিং নেই তাদের ৬ জানুয়ারি ২০২১ সাল পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ৩২টি কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা সম্মিলিতভাবে কোম্পানির ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হয়েছে। এসব বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ অ্যান্ড কমিশনের কোনো ধরণের তদারকি নেই।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের পুঁজিবাজার ধসের পরের বছর উদ্যোক্তা পরিচালকদের মিলিতভাবে কোম্পানির সর্বনিম্ন ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ বাধ্যতামূলক করা হয়। স্বতন্ত্র পরিচালক ছাড়া অন্যদের প্রত্যেককে সর্বনিম্ন ২ শতাংশ শেয়ারধারণ করার শর্ত দেয়া হয়। পরে ২০১৯ সালের মে মাসে আইনে সম্পূরক সংযোজনী এনে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের শর্ত পূরণ না হলে শেয়ার বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া বা উপহার হিসেবে শেয়ার হস্তান্তর এবং বোনাস শেয়ার দেয়া নিষিদ্ধ করা হয়। তখন (২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে) ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ারধারণের শর্ত পূরণ না করে পদে থাকায় ৯টি কোম্পানির ১৭ জন পরিচালককে সরিয়ে দেয়া হয়। উদ্যোক্তা পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ারধারণের শর্ত পূরণে ব্যর্থ কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছিল। তাদের ২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর ২৫টি কোম্পানিকে ওই শর্ত পূরণের জন্য এক মাস সময় বেঁধে দিয়েছিল বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। ওই সময়ের মধ্যে কেবল একটি কোম্পানি তা করতে পেরেছে।

বাকি ৩০ শতাংশ ধারণে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানগুলো হলো স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক, আফতাব অটো, অ্যাপোল ইস্পাত, আজিজ পাইপ, বিডি থাই, কপারটেক, অলম্পিক অ্যাসোসরিজ, আরএসআরএম, সুহƒদ ইন্ডাস্ট্রিজ, বে লিজিং, ফাস ফাইন্স্যাস, জিএসপি ফাইন্স্যাস, ফিনিক্স ফাইন্স্যাস, পিপলস লিজিং, প্রিমিয়ার লিজিং, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, ফাইন ফুড, ফুওয়াং ফুড, ইনফেরসেশন সার্ভিস, নর্দান জুট, একটিভ ফাইন, এএফসি বায়োটেক, সেন্ট্রাল ফার্মা, ইন্দো বাংলা ফার্মা, সালবো ক্যামিকেল, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল, ডেল্টা স্পিনারস, ফ্যামিলি টেক্সটাইল, জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন, মিথুন নিটিং, পপুলার লাইফ এবং সন্ধানী লাইফ ইত্যাদি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়ায় এসব ব্যাংকের পরিচালক শেয়ার ধারণে ৩০ শতাংশের কম আছে।

ডিএসইয়ে ওয়েবসাইট পর্যালেচনা করে দেখা যায়, দীর্ঘ সময় ধরে ৩২টি কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা সম্মিলিতভাবে কোম্পানির ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হয়েছে। এরমধ্যে সিরামিক খাতে স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকের উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় শেয়ার ধারণে আরো ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ, প্রকৌশল খাতে আফতাব অটো শূন্য দশমিক ৬৮ শতাংশ, অ্যাপোল ইস্পাতে ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ, আজিজ পাইপের ১৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ, বিডি থাইয়ের শূন্য দশমিক শূন্য দশমিক ৮২ শতাংশ, কপারটেকের ২ দশমিক ৪৩ শতাংশ, অলম্পিক অ্যাসোসরিজের ৪ দশমিক ১৯ শতাংশ, আরএসআরএমের শূন্য ৭ শতাংশ, সুহƒদ ইন্ডাস্ট্রিজের ১৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ, বে লিজিংয়ের ১০ দশমিক ৩৬ শতাংশ, ফাস ফাইন্স্যাসের ১৬ দশমিক ৮০ শতাংশ, জিএসপি ফাইন্স্যাসের ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ, ফিনিক্স ফাইন্স্যাসের তিন দশমিক ১৩ শতাংশ, পিপলস লিজিংয়ের ১১ দশমিক ৮৫ শতাংশ, প্রিমিয়ার লিজিংয়ে ছয় দশমিক ৫৫ শতাংশ, ইউনিয়ন ক্যাপিটালে ১ দশমিক ৬ শতাংশ, খাদ্য খাতে ফাইন ফুডের ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ফু ওয়াং ফুডের ২২ দশমিক ১৫ শতাংশ, আইটি খাতে ইনফেরসেশন সার্ভিসের ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ, পাট খাতে নর্দান জুটের ১৪ দশমিক ৯১ শতাংশ, ওষুধ ও রসায়ন খাতের অ্যাকটিভ ফাইনে ১৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ, এএফসি বায়োটেকের ২ দশমিক ১৬ শতাংশ, সেন্ট্রাল ফার্মার ২২ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ইন্দো বাংলা ফার্মার ২ দশমিক ১১ শতাংশ, সালবো ক্যামিকেলের ৪ দশমিক ৭২ শতাংশ, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের ২২ দশমিক ৯০ শতাংশ, ডেল্টা স্পিনারসে ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ, ফ্যামিলি টেক্সটাইলের ২৫ দশমকি ৯৮ শতাংশ, জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনে ১৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ, মিথুন নিটিংয়ে ১২ দশমিক ৮০ শতাংশ এবং জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে পপুলার লাইফে ৬ দশমকি ৩০ শতাংশ ও সন্ধানী লাইফের শূন্য দশমিক ৫৫ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার কিনতে হবে।

এ বিষয়ে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কোম্পানির সচিব ও অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা হেলাল কবিরের বক্তব্য জানার জন্য একাধিকবার ব্যবহƒত মুঠোফোন নম্বরের যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে বার্তার পাঠানো হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি। ফলে উনার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পরে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কোম্পানির চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনিও ফোন রিসিভ করেননি। ফলে উনারও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে সেন্টাল ফার্মার কোম্পানি সচিব সাম্প্রতিক আলাপকালে শেয়ার বিজকে বলেন, সেন্ট্রাল ফার্মার মালিকানা বদলে প্রক্রিয়ার কার্যক্রম অনেক এগিয়ে গেছে। তবে কারা মালিকানায় আসছে তা এখন বলা যাচ্ছে না। আর ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ বিষয় তো আসলে বোর্ড সিদ্ধান্তের বিষয় তা এখন বলা যাচ্ছে না। তবে হবে না তা কিন্তু নই। এছাড়া ব্যাংক ও এনবিআরের সঙ্গে সমস্যাগুলো সমাধানের পথে। আশা করছি, তাড়াতাড়ি এসব বিষয়গুলো ক্লিয়ার হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কামাল শেয়ার বিজকে বলেন, কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে কোম্পানির সর্বনিম্ন ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। এখন অনেক কোম্পানি সেই শর্ত পরিপালন করেনি। এ বিষয়ে কমিশন অবগত আছে। কমিশন ৩০ শতাংশ কম উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার আছে এমন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।