সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের জাহাজ ভাঙা ব্যবসায়ী, মধুমতি ব্যাংকের পরিচালক, আওয়ামী লীগ নেতা ও সীতাকুণ্ডের সাবেক সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের মালিকানাধীন তাসিন স্টিলস লিমিটেড ইউসিবিতে খেলাপি ৩৪০ কোটি টাকা। এ খেলাপি ঋণ আদায়ে ইউসিবি আগ্রাবাদ শাখায় ঋণের বিপরীতে বন্ধক থাকা ১ হাজার ৯৮০ বর্গফুটে ফ্লোর স্পেস নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। এ সম্পত্তির বাজারমূল্য দুই কোটি টাকার মতো। খেলাপি ঋণের বিপরীতে এ বন্ধকি যৎসামান্য সম্পদ নিয়ে ব্যাংক-সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ব্যাপক নেতিবাচক আলোচনা চলছে।
ইউসিবি সূত্রে জানা যায়, দিদারুল আলম ইউসিবি আগ্রাবাদ শাখা থেকে ঋণ নিয়ে পুরোনো জাহাজ আমদানি করে ব্যবসা করলেও ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করেননি। এমনকি গত এক বছর ধরে পাওনা পরিশোধের তেমন উদ্যোগ নেননি। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুসারে গত ১২ মে ঋণটি খেলাপি হয়ে পড়ে। এ সময়ে ব্যাংকটির কাছে সুদাসলসহ খেলাপি পাওনার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৪০ কোটি টাকা। যদিও এ সময়ে পাওনা পরিশোধে চেক দিলেও তা নগদায়ন হয়নি। ফলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পাওনা আদায়ে একাধিক চেক প্রত্যাখ্যানের জন্য মামলা করেছে। আর পাওনা ঋণ সমন্বয় করার জন্য ঋণের বিপরীতে চট্টগ্রাম মহানগরে কোতোয়ালি থানার এনায়েতবাজার মৌজায় এপিক ইতিহাদ পয়েন্ট নামের একটি বিল্ডিংয়ের ষষ্ঠ তলার ১৯৮০ বর্গফুটে ফ্লোর স্পেস (বন্ধকি সম্পত্তি) নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সংশ্লিষ্ট শাখা। এ নিলাম আগামী ১৬ জুন আগ্রাবাদ শাখায় অনুষ্ঠিত হবে। এতে আগ্রহী ক্রেতা উপস্থিত হয়ে নিলামে এসব জমি কিনতে পারবেন। তবে সম্পত্তি ঋণের তুলনায় যৎসামান্য। জমি ও ফ্ল্যাট ব্রোকাররা জানান, এ বন্ধকি সম্পত্তির বাজারমূল্য দুই কোটি টাকার বেশি হবে না।
অপরদিকে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, দিদারুল আলমের মালিকানাধীন কুমিরা শিপ ব্রেকার্সের নামে নেয়া ঋণ ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায় খেলাপি। তার কাছে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি ব্যাংকটির আগ্রাবাদ শাখার খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৯ কোটি ৩৯ লাখ ৫৮ হাজার ৪৮৯ টাকা। এক বছর ধরে তিনি ঋণ পরিশোধ করেননি।
সংশ্লিষ্ট ব্যাংকাররা বলেন, দিদারুল আলম ঋণখেলাপি হয়েও মধুমতি ব্যাংকের পরিচালক পদে আছেন। এমনকি ব্যাংকটির ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটিরও সদস্য হিসেবে। অথচ ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুসারে তিনি পরিচালক হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না।
অপরদিকে মধুমতি ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, এ ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক জাহাজ ভাঙা, অক্সিজেন, পরিবহন ও ট্রেডিং খাতের ব্যবসায়ী এবং আওয়ামী লীগের সীতাকুণ্ড আসনের সাবেক সংসদ সদস্য দিদারুল আলম। বর্তমানে তিনি ব্যাংকটির ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য। তার ৯৩ লাখ পাঁচ হাজার ১০০টি শেয়ারে মালিকানা রয়েছে। অর্থাৎ ব্যাংকটির মাত্র এক দশমিক ৭৭ শতাংশ শেয়ার মালিকানায়।
এ বিষয়ে ইউসিবির আগ্রাবাদ শাখার কর্মকর্তারা শেয়ার বিজকে বলেন, আমরা পাওনা আদায়ে এনআই অ্যাক্টে মামলা করেছি। এখন বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছি। তবে বন্ধকি সম্পত্তির ঋণের তুলনায় অনেক কম হলেও আমরা তার মালিকানায় থাকা জমি, ভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শেয়ার মালিকানাসহ সব ধরনের সম্পত্তির খোঁজখবর নিচ্ছি, যাতে অর্থঋণ আদালতে মামলায় এসব সম্পত্তি যুক্ত করা যায়।
অপরদিকে খেলাপি ঋণের বিষয়ে জানার জন্য দিদারুল আলমের ব্যবহূত মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সংযোগটি বন্ধ পাওয়া যায়। জানা যায় তিনি কানাডায় অবস্থান করছেন।
বিষয়ে ইউসিবির ব্যবস্থাপনা পরািচলক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মামদুদুর রশিদের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি সংযোগটা রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, দিদারুল আলমের মালিকানাধীন জাহাজ ভাঙা প্রতিষ্ঠান তাসিন স্টিল, কদম রসুল স্টিল শিপব্রেকিং, টিআর শিপব্রেকার্স, কুমিরা শিপব্রেকার্স, এ রাজ্জাক দোভাষ অ্যান্ড সন্সেস, সিল্ক লাইন ট্রাভেলাস, আমেনা ফিশিং, মোস্তফা হাকিম শিপিং লাইন, গোল্ডেন অটো ওয়ার্কশপ, গোল্ডেন অক্সিজেন, তাহের অ্যান্ড কোম্পানি, গোল্ডেন ইস্পাত, মোস্তফা হাকিম সিমেন্ট, মোস্তফা হাকিম হাউজিং অ্যান্ড রিয়েল এস্টেট, দিদারুল আলম অ্যান্ড ব্রাদার্স, গোল্ডেন বিক্রস, এসবি করপোরেশন প্রভৃতি। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ ফিন্যান্স লিমিটেডের একজন উদ্যোক্তা পরিচালক।