চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ

৩৮ বছর আগের ট্যারিফে সেবার মাশুল আদায়!

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের প্রায় ৯২ শতাংশ সম্পাদিত হয়। নিকটতম কলম্বোতে এক টিইইউ’র আনলোডিং চার্জ ১০০ ডলার, সিঙ্গাপুরে ৭৫ ডলার, আর চট্টগ্রামে মাত্র ৪৩ দশমিক ৪০ ডলার। আবার বন্দরে আসা মাদার ভেসেলগুলোর সাপোর্টে একটি টার্গ বোট সার্ভিস দিয়ে পায় ৬০০ ডলার, আর ভারতের বন্দরগুলোয় একটি টাগ বোর্ট সার্ভিস ফি পায় ছয় হাজার ডলার।

মূলত ১৯৮৭ সালের ট্যারিফ রেটে সেবা দিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে রাজস্ব আয় যুগোপযোগী হচ্ছে না।

চট্টগ্রাম বন্দর ও বন্দর ব্যবহারকারী সূত্রে জানা যায়, দেশের আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য কার্যক্রমে বন্দর কর্তৃপক্ষ ৬০টি খাতে মাশুল বা চার্জ আদায় করে। এসব সেবার বেশিরভাগ ১৯৮৭ সালের ট্যারিফ রেটে সেবা ফি আদায় করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ২০০৮ সালে কয়েকটি সেবার বিপরীতে মাশুল বাড়ানো হয়েছিল। তবে ৩৮ বছর পর আবারও পুনর্গঠন করা হচ্ছে মাশুল বা ট্যারিফ কাঠামো। প্রায় তিন বছর ধরে কাজ চালিয়ে ট্যারিফ কাঠামো পুনর্র্নিধারণ করেছে দেশি-বিদেশি দুটি প্রতিষ্ঠান। চূড়ান্ত হয়েছে খসড়া। সরকারের অনুমোদনের পর গেজেট প্রকাশিত হলে তা কার্যকর হবে।

বন্দরের হিসাব শাখার কর্মকর্তারা বলেন, ১৯৮৭ সালে ট্যারিফ চালুর পর থেকে ২০০৭ সালে আটটি আইটেম ছাড়া আর কোনো ট্যারিফ চার্জ পরিবর্তন করা হয়নি। ফলে বন্দরের ক্যাপিটাল আইটেমের খরচ বাড়লেও ট্যারিফের সঙ্গে সমন্বয় না করায় তা এক জায়গায় স্থির হয়ে আছে। ফলে বন্দর কর্তৃপক্ষের রাজস্ব আয় যুগোপযোগী নয়। তা ছাড়া বন্দরের ভেতরের জায়গার ভাড়াও তুলনামূলকভাবে কম। তাই ট্যারিফ হার বাড়ানোর উদ্যোগ নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। শুল্কের এই সংশোধন প্রক্রিয়া প্রায় ৫০টি সেবাকে প্রভাবিত করবে। এর মধ্যে রয়েছে বন্দর কর, বার্থিং ফি, ফর্কলিফট চার্জ ও অন্যান্য ইউটিলিটি খরচসহ ২০০৭-০৮ অর্থবছরে এ পাঁচটি সেবার সামান্য পরিবর্তন হলেও বাকি সব শুল্ক তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে অপরিবর্তিত রয়েছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চট্টগ্রামের বর্তমান হ্যান্ডলিং চার্জ এখনো আঞ্চলিক অন্যান্য বন্দরের তুলনায় অনেক কম। অপরদিকে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা বলেন, একটি ২০ ফুটের কনটেইনার (টিইইউ) হ্যান্ডলিংয়ে বর্তমানে আমদানিকারকের খরচ পড়ে প্রায় ১৫ হাজার টাকা (বা ১২৩ ডলার)। প্রস্তাবটি বাস্তবায়িত হলে এই খরচ বেড়ে ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। সেবার মাশুল বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়ে অসন্তোষ আছে বন্দর ব্যবহারকারীদের।

তাদের দাবি, তাদের মতামতের কোনো প্রতিফলন ঘটেনি খসড়ায়। প্রস্তাবিত কাঠামোয় এমন অনেক উপধারা যোগ করা হয়েছে, যা অত্যন্ত জটিল। অনেক ক্ষেত্রে মাশুল বাড়ানো হবে এক শতাংশেরও বেশি, যার চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ব্যবসা ও পণ্যমূল্যে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ শেয়ার বিজকে বলেন, ৩৮ বছরে তো অনেক কিছুর দাম বেড়েছে। সেভাবে বন্দর সেবার মাশুল বৃদ্ধি করা হয়নি। সুতরাং সহনীয় মাত্রায় বাড়ানো উচিত। তবে এত বাড়ানো উচিত হবে না যাতে ব্যবসা ও বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ দিনশেষে খরচ কিন্তু জনগণের বাড়বে। এটা বিবেচনায় রেখে বাড়াতে হবে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র নাসির উদ্দিনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংযোগটি কেটে দেন।

উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরের মে পর্যন্ত ১১ মাসে চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্যবাহী তিন হাজার ৭৫৫টি মাদার ভেসেল আসে। এসব জাহাজ থেকে মোট ৩০ লাখ ৪২ হাজার ৫২১ টিইইএস কনটেইনার এবং ১২ কোটি মেট্রিক টন কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে।