Print Date & Time : 1 October 2025 Wednesday 1:02 am

৩৮ বছর গুদামে পড়ে থাকা ডিডিটি পাঠানো হলো ফ্রান্সে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ম্যালেরিয়ার জীবাণুবাহী মশা মারতে আশির দশকে পাকিস্তান থেকে দেশে আনা প্রায় ৫০০ মেট্রিক টন ক্ষতিকর ডাইক্লোরো ডাফেনাইল ট্রাইক্লোরেথেন বা ডিডিটি পাউডার ধ্বংসের জন্য ফ্রান্সে পাঠিয়েছে সরকার।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন গতকাল রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, পরিবেশ ও মানবদেহের জন্য ব্যাপক ক্ষতিকর এই পাউডার চট্টগ্রাম থেকে সরানো হয়েছে।

মশা নিধনে ১৯৮৫ সালে পাকিস্তান থেকে তিন কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে বিপুল পরিমাণ এই পাউডার আমদানি করেছিল বাংলাদেশ সরকার। জীববৈচিত্র্যের জন্য ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’ এই রাসায়নিক ১৯৮৯ সালে নিষিদ্ধ হয়ে যায়।

কিন্তু বাংলাদেশে ওই পাউডার ধ্বংসের ব্যবস্থা না থাকায় ৪৮০ টন ডিডিটি আগ্রাবাদ কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের গুদামে থেকে গিয়েছিল। বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ওই পাউডার জাহাজে করে ফ্রান্সে নিয়ে ধ্বংস করার উদ্যোগের কথা গত বছরের শুরুতে জানিয়েছিল সরকার।

পরিবেশ বন ও জলবায়ুমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেন, ডিডিটি আমদানির কিছুদিন পরেই গবেষণায় বেরিয়ে আসে, ডিডিটি বিষাক্ত পাউডার। মানুষের শরীরে বিন্দু পরিমাণ ঢুকলেও তা হয়ে ওঠে প্রাণঘাতী।

‘এই কীটনাশককে মানুষের জন্য বিপজ্জনক ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। আর এই বিপজ্জনক জৈব রাসায়নিক কীটনাশক থেকে বাংলাদেশ এখন মুক্ত।’

বাংলাদেশে এ পাউডার ধ্বংসের ব্যবস্থা না থাকার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা একটি এনজিওর সহযোগিতা নিয়েছি, খরচের প্রায় ২৩ কোটি টাকা এনজিও নিজেরাই দিচ্ছে। ডিডিটি পাউডার পাঠানো হয়েছে ফ্রান্সে, সেখানে ধ্বংস করার ব্যবস্থা আছে।’

এর আগে ডিডিটি পরিবেশসম্মতভাবে অপসারণের জন্য ‘পেস্টিসাইড রিস্ক রিডাকশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রকল্প হাতে নিয়েছিল সরকার। তাতে সহযোগিতা করেছিল জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)।

প্রকল্পের আওতায় ডিডিটি পাউডার ফ্রান্সে পাঠাতে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় প্যাকেজিংয়ের কাজ শুরু হয় গত বছর। পলিয়েকো নামে একটি বিদেশি কোম্পানি ডিডিটি অপসারণের কাজটি করছিল।

প্রকল্প পরিচালক পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ফরিদ আহমেদ বলেছিলেন, অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এই ডিডিটি বাংলাদেশে আনার পর তা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০০১ সালে বাংলাদেশ স্টকহোম কনভেনশনে চুক্তিতে স্বাক্ষর করে, যেখানে ডিডিটিসহ ক্ষতিকারক জৈব দূষণকারী কীটনাশক উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ বা সীমিত করার কথা আছে।

সচিবালয়ে পরিবেশ-বিষয়ক মন্ত্রী মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের কারণে বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির প্রসঙ্গ নিয়েও কথা বলছিলেন।

তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে ১০ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত নাগরিক বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের ফলে উপকূলীয় বন, পাহাড়ি প্রতিবেশ এবং জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এই বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা চেয়েছি।

‘বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল, জনবহুল ও জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো যাতে খাদ্য নিরাপত্তা এবং জীববৈচিত্র্যের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর বিকল্প জীবিকায়ন নিশ্চিত করে, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং এর টেকসই ব্যবহার নিশ্চিতকরণে পর্যাপ্ত আর্থিক, কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সহায়তা পেতে পারে, সে লক্ষ্যে উন্নত বিশ্বকে এগিয়ে আসতে হবে।’

পরিবেশ সুরক্ষায় চলতি বছরেই ‘গ্লোবাল বায়োডাইভারসিটি ফ্রেমওয়ার্ক তহবিল’ প্রতিষ্ঠিত হবে বলেও জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এরই মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এই তহবিল বাস্তবায়নে তথা জীববৈচিত্র্য এবং প্রতিবেশ সংরক্ষণের জন্য ৩৫০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা দিতে অঙ্গীকার করেছেন। আমরা আশা করি, অন্যান্য উন্নত দেশগুলোও কানাডার পথ অনুসরণ করে এ তহবিল বাস্তবায়নে সার্বিক সহযোগিতার পরিমাণ বাড়াবে।’