৪৪ বছরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

সামী আল সাদ আওন, ইবি : ৪৩ পেরিয়ে ৪৪ বছরে পা দিল উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষার আলো বিতরণ করে আসছে ৪৩ বছর ধরে। ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর যাত্রা করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা প্রতিকূলতা ও বাধা পেরিয়ে ইবি তার সুনাম অক্ষুণ্ম রেখেছে জাতীয় ও বিশ্বাঙ্গনে। অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৯৪ কর্মকর্তা, ১৩২ সহায়ক কর্মচারী ও ১৫৮ সাধারণ কর্মচারী।

এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশ ও বিশ্ব অঙ্গনে প্রতিনিয়তই রেখে যাচ্ছে সাফল্যের স্বাক্ষর। হাজার প্রজাতির তরু-পল্লবের আচ্ছাদিত ছায়ায় ঘেরা সুনিবিড় ক্যাম্পাস যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ বৈচিত্র্য। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি সংস্কার চর্চায়ও নেই পিছিয়ে। সারাদিনই এ ক্যাম্পাস মেতে থাকে শিক্ষার্থীদের গান আড্ডার সুরে। প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাচ্ছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

ক্যাম্পাস ও স্থাপনা: ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া এ দুই জেলার প্রান্তসীমায় ১৭৫ একরের এ ক্যাম্পাস জুড়ে রয়েছে দুটি প্রশাসনিক ভবন, ছয়টি একাডেমিক ভবন, শিক্ষার্থীদের জন্য আটটি হল, একটি প্রকৌশল ভবন, কেন্দ্রীয় মসজিদসহ দুটি খেলার মাঠ। এছাড়া দ্বিতীয় প্রশাসনিক ভবনের সম্প্রসারণ, একটি একাডেমিক ভবন, চারটি হল ও শেখ রাসেল হলের সম্প্রসারণের কাজ নির্মাণাধীন রয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এদেশের স্বাধীনতার ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে ক্যাম্পাসে নির্মিত হয়েছে মুক্তবাংলা, শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ ও মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরাল।

শিক্ষা কার্যক্রম: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালে দুটি অনুষদের চারটি বিভাগ নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে আটটি অনুষদের অধীনে ৩৬টি বিভাগে মোট ১৩ হাজার ৪৬৮ শিক্ষার্থী রয়েছেন। আগে সেশনজট থাকলেও ২০১৮ সালে পুরোপুরি সেশনজটমুক্ত ভার্সিটি হিসেবে গড়ে উঠে ইবি। ২০২০ সালে করোনার প্রভাবে প্রায় এক বছর আট মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও পরে নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষার মাধ্যমে আবারও সেশনজট নিরসনের প্রচেষ্টায় নতুন উদ্যমে ফিরেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

গবেষণা কার্যক্রম: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কার্যক্রমের দিক দিয়েও প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত ইবি থেকে ৫৯৯ জনকে পিএইচডি এবং ৭৫৮ জনকে এমফিল ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে ২৫০ জন পিএইচডি এবং ৯৫ জন এমফিল গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন। ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা সংস্থা এডি সায়েন্টিফিক ইনডেক্সে বিশ্বসেরা গবেষকদের তালিকায় বিভিন্ন বিভাগের ১৭ শিক্ষক স্থান পেয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ শিক্ষক ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় কর্তৃক ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’ বিষয়ে বিশেষ গবেষণা প্রকল্প অনুদানের জন্য মনোনীত হয়েছেন। তারা ছয়টি প্রজেক্টের আওতায় কাজ করবেন। এছাড়া শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করতে কাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠন রিসার্চ সোসাইটি।

সমাবর্তন: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৪ বছরের যাত্রাপথে মাত্র চারটি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৩ সালে, দ্বিতীয় সমাবর্তন ১৯৯৯ সালে, তৃতীয় সমাবর্তন ২০০২ সালে এবং সর্বশেষ চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালে। বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী পঞ্চম সমাবর্তনের অপেক্ষায় রয়েছেন।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন: পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রম হিসেবে সংস্কৃতিচর্চা শিক্ষার্থীদের সৃষ্টিশীল ও আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে। এরই ধারাবাহিকতায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে ২৫টি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। এ সংগঠনগুলো শিক্ষার্থীদের পুঁথিগত শিক্ষার বাইরে নানা দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। এর মধ্যে বিএনসিসি, আইটি সোসাইটি, ক্যারিয়ার ক্লাব, তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, ছায়া জাতিসংঘ, থিয়েটার, ডিবেটিং সোসাইটি, আবৃত্তি, তরুণ্য, ক্যাপ, বুনন, রিসার্চ সোসাইটি, কনজুমার ইয়ুথ বাংলাদেশসহ নানা সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নসহ মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ৪৩ বছর পেরিয়ে ৪৪ বছরে পদার্পণ করবে। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের শৈশবকাল শেষ করে এখন যৌবনের মাঝামাঝি সময় পার করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৪ বছরের খতিয়ানগুলো ইতিহাসের অংশ হয়ে আছে। আমি মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয় একটি প্রবহমান প্রতিষ্ঠান। ৪৪ বছরের মতো ১০০ বছরে এসেও এটি সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নেবে।