সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আকিজ গ্রুপ। শিল্পগ্রুপটির ৩০টির অধিক অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড অন্যতম একটি। সম্প্রতি এই প্রতিষ্ঠানটি বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির মাধ্যমে ৪৬ লাখ টাকা সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করে। তবে মিথ্যা এইচএস কোড উপস্থাপন করে শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা করলেও চট্টগ্রাম কাস্টমসের হাতে আটক হওয়ায় শেষ রক্ষা হয়নি প্রতিষ্ঠানটির। ফলে ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়ে পণ্য খালাস করতে বাধ্য হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
সূত্রে জানা যায়, দেশের বৃহৎ শিল্পগ্রুপটির বেভারেজ পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড চলতি বছরের ২২ মার্চ ডেনমার্ক থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এক লাখ ২১ হাজার ৪২৪ কেজি পণ্য আমদানির ঘোষণা দেয়, যার আমদানিমূল্য দেখানো হয়েছে দুই লাখ ৪৬ হাজার ৩১৭ মার্কিন ডলার এবং পণ্য চালানটি খালাসের জন্য দি সিটি ব্যাংক লিমিটেড থেকে এলসি করা হয়েছিল।
এদিকে আমদানিকারকের ঘোষণামতে, এসএসএল কোচি জাহাজে করে পণ্যগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। তারপর ওই চালান খালাসের জন্য আমদানিকারকের মনোনীত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠান কেএ ট্রেডার্স ১৭ জুন কাস্টম হাউসে আমদানিকারকের পক্ষে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে। অপরদিকে পণ্যচালানটির বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে আগে থেকে গোপন সংবাদ থাকায় অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল£ সিস্টেমে বিল অব এন্ট্রি লক করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অডিট, ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখা। পরে এআইআর শাখার কর্মকর্তারা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে পণ্যচালানটির শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করে। একই সঙ্গে পণ্যগুলোর নমুনা রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য কাস্টম হাউসের রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। তারপর রাসায়নিক পরীক্ষাগার থেকে জুলাই মাসের ৫ তারিখে দেয়া তথ্যে দেখা যায়, আমদানিকারকের দেয়া তথ্য সঠিক নয়। অর্থাৎ আমদানিকারকের ঘোষিত এইচএস কোড পরিবর্তন হবে। তাতে শুল্কের পরিমাণও বাড়বে।
৯৮৫৭৬৯ সি-নং (তারিখ ১৭.০৬.২০২১) আমদানিকৃত চালানের বিপরীতে আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড এইচএস কোড উল্লেখ করে (২১১২.৯০.০০), যার বিপরীতে সরকারি রাজস্বের হার দাঁড়ায় ৩৭ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ। কিন্তু চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাসায়নিক পরীক্ষায় প্রকৃত এইচএস কোড পাওয়ার (৩২১৪.৯০.০০) বিপরীতে সরকারি রাজস্বের হার দাঁড়ায় ৬৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ। অর্থাৎ আমদানিকারকের ঘোষণা অনুযায়ী এই চালানের বিপরীতে শুল্ক আসে মাত্র ৭৮ লাখ ৫৬ হাজার টাকা, আর কাস্টমসের ল্যাবের দেয়া প্রতিবেদনের এইচএস কোডের বিপরীতে শুল্ক আসে এক কোটি ২৪ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।
এদিকে এআইআর শাখার কর্মকর্তারা বলেন, রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদন অনুযায়ী পণ্য অসত্য ঘোষণায় আমদানি হওয়ায় সঠিক এইচএস কোড ও যথাযথ শুল্কায়নযোগ্য মূল্যে শুল্কায়ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সেকশনকে (সেকশন-৭এ) অনুরোধ করা হয়েছে।
অপরদিকে কেমিক্যাল আমদানি গ্রুপের (সেকশন-৭এ) কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এরই মধ্যে আমদানিকারক প্রায় ৪৬ লাখ টাকা ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়ে পণ্য খালাস করেছে। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাসায়নিক পরীক্ষাগারের প্রতিবেদনকে প্রত্যাখ্যান করে বহিঃল্যাবে পরীক্ষার জন্য আবেদন করেছে আমদানিকারক।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাসায়নিক পরীক্ষাগারের ইনচার্জ মো. হান্নান বলেন, ‘আমরা ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অরগানাইজেশনের (ডাব্লিউসিও) সম্পাদিত এক্সপ্লেনেটরি নোটের আলোকে রাসায়নিক পরীক্ষা করি, যা বহিঃল্যাব কখনও করে না। সে ক্ষেত্রে আমাদের রিপোর্টে ভুল হওয়ার আশঙ্কা নেই। এছাড়া আমাদের যে রকম বাধ্যবাধকতা আছে, সেটাও তাদের নেই। অনেক সময় দেখা গেছে বহিঃল্যাবের রিপোর্ট আমদানিকারকের পক্ষে যায়, কারণ আমদানিকারকরা তাদের মতো করে রিপোর্ট করিয়ে নেয়। বহিঃল্যাবের রিপোর্টে ভুল পাওয়া গেছে, এমন অনেক প্রমাণ আছে আমাদের কাছে। আমরা প্রতিটি রিপোর্টে ডব্লিউসিও এক্সপ্লেনেটরি নোটের আলোকে ব্যাখা ও কারণ উল্লেখ করে থাকি।’
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অডিট, ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ শাখার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার রেজাউল করিম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘কিছুদিন আগে আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের একটি চালান আটক করেছিল এআইআর শাখা। চালানটিতে ভুল এইচএস কোড উপস্থাপন করেছিল আমদানিকারক, যা কাস্টমস আইন অনুযায়ী একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ফলে তাদের পরিশোধিত শুল্কের অতিরিক্ত অর্থাৎ অবশিষ্ট শুল্কের সমপরিমাণ ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়ে পণ্য ছাড় করেছে আমদানিকারক।’