৪ বছর পর দ্বিতীয়বারের মত মুন্সীগঞ্জ-গজারিয়া নৌরুটে ফেরি চালু

শেখ মোহাম্মদ রতন, মুন্সীগঞ্জ : চার বছর পর মুন্সীগঞ্জ-গজারিয়া রুটে আবারও চালু হয়েছে ফেরি চলাচল। এতে গজারিয়া উপজেলা থেকে জেলা শহরের সাথে যোগাযোগ পুনরায় শুরু হলো। এসময় ৪টি প্রাইভেটকার শর্ণচাপা ফেরি দিয়ে গজারিয়া থেকে মুন্সীগঞ্জে পার করা হয়। গজারিয়ার কাজিপুরা ফেরি ঘাট এলাকায় এর উদ্বোধন করেন মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস ও বিআইডব্লিউটিসি পরিচালক মো. রাসেদুল ইসলাম।

বিআইডব্লিউটিসির পক্ষ থেকে নৌরুটের বহরে আনা হয়েছে সন্ধ্যামালতি, স্বর্ণচাঁপা ও কর্ণফুলী নামের তিনটি ফেরি। বেলা ১১টার দিকে এ রুটে ফেরি চালুর উদ্বোধন করা হয়৷ বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক (বাণিজ্য) এস এম আশিকুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, ফেরি সার্ভিসটি চালুর মাধ্যমে নদী পারাপারে স্থানীয়দের দুর্ভোগ শেষ হবে। একই সঙ্গে দক্ষিণ বঙ্গ থেকে পদ্মা সেতু হয়ে আসা যানবাহন ঢাকার যানজট এড়িয়ে মুন্সীগঞ্জ হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাতায়াত করতে পারবে।

এস এম আশিকুজ্জামান অরও বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও মাঝিকান্দি নৌরুটের ফেরিগুলো স্থানান্তরের মাধ্যমে অন্য রুটে ফেরি সেবা চালু করা হচ্ছে। মুন্সীগঞ্জ-গজারিয়া রুটে আবার ফেরি সার্ভিস পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এ ফেরি সার্ভিসটি নিয়ে আমরা আশাবাদী। দক্ষিণবঙ্গ থেকে পদ্মা সেতু হয়ে আসা যানবাহন শহরে না ঢুকে মুন্সীগঞ্জ হয়ে ফেরি দিয়ে ভবেরচর হয়ে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে উঠেতে পারবে। এসব যানবাহনের ৭০-৮০ কিলোমিটার দূরত্ব কমে যাবে। এতে আর্থিকভাবেও লাভবান হবে তারা।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে এ রুটে তিনটি ফেরি থাকছে, আমরা যদি দেখি গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যায় তাহলে ভবিষ্যতে ফেরির সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। তিনটি ফেরির মধ্যে কর্ণফুলী ফেরিটি ছোট। যখন গাড়ির সংখ্যা কম থাকবে তখন কর্ণফুলী ফেরিটি দিয়ে পারাপার করা হবে। অন্যান্য রুটে যে হারে ভাড়া নির্ধারিত সে হারেই এখানে ভাড়া নেওয়া হবে।

ফেরি ঘাটি ঘুরে দেখা যায়, উদ্বোধনের জন্য মেঘনা নদীর গজারিয়া অংশ কাজিপুরা ও মুন্সীগঞ্জ অংশের চর-কিশোরগঞ্জ পাড়ে ঘাট নির্মাণ সম্পূর্ণ। স্বর্ণচাঁপা ও সন্ধ্যামালতি নামের দুটি ফেরি দুটি ঘাটে নোঙর করা আছে।

নতুন করে ফেরি সার্ভিস চালু প্রস্তুতিতে উচ্ছ্বসিত মেঘনা নদীর এপার মুন্সীগঞ্জের ও উপারের গজারিয়া উপজেণার স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থানীয়য়া জানান, মেঘনা নদীতে বিচ্ছিন্ন গজারিয়া উপজেলা থেকে জেলা সদরে যাতায়াতে প্রতিদিন ভোগান্তি আর জীবনের শঙ্কা নিয়ে উত্তাল নদী পারি দিতে হয় যাত্রীদের। ঝড়-ঝঞ্ঝা আর সন্ধ্যার পর দুর্ভোগ বাড়ে বহুগুণে। মানুষজন পারাপার করতে পারলেও ফেরি না থাকায় পারাপার হয়না কোন যানবাহন। ৭-৮কিলোমিটার দূরত্বের সদর উপজেলায় সড়ক পথে আসতে হয় নারায়ণগঞ্জ হয়ে অর্ধশতকিলোমিটার পথ পারি দিয়ে। ফেরি চালু হলে যাতায়াতের ঝক্কি ও দুর্ভোগ এড়িয়ে পারাপার করা যাবে।

ফেরি স্বর্ণচাঁপার ইংল্যান্ড মাস্টার অফিসার মো. ইখলাস জানান, সন্ধ্যামালতি আর স্বর্ণচাঁপা ফেরিতে যাত্রীসহ পাঁচটি ট্রাক ও চারটি ছোটগাড়ি এক সঙ্গে পারাপার করা যাবে। নদী পারি দিতে সময় লাগবে ২৫-৩০মিনিট। উদ্বোধনের পর ২৪ ঘণ্টাই সচল রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।
এদিকে ৪ বছর পর মুন্সীগঞ্জের-গজারিয়া নৌপথে ফেরি চালু হওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের ২১টি জেলার ৬০ কিলোমিটার দূরত্ব কমেছে। গজারিয়ায় ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, বাস্তবায়নাধীন শিল্পপার্ক, গার্মেন্টস ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের বিষয়গুলো বিবেচনায় এনে ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, এরআগে ২০১৮ সালের ৩ জুন এ নৌরুটে ভিডিও কন্ফারেন্সেরে মাধ্যমে ফেরি উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে দুই পাড়ের যাতায়াতের সড়কের বেহাল দশা, যানবাহন সংকটসহ নানা প্রতিকূলতার মুখে কয়েক মাস না যেতেই বন্ধ হয়ে যায় সার্ভিসটি। এরপর সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল ঘাটের পন্টুন।