Print Date & Time : 13 September 2025 Saturday 3:59 am

৫০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা অ্যাপলের

অ্যাপলের শেয়ারের দাম ১ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে

শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রে ৫০০ বিলিয়ন বা ৫০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে প্রযুক্তি খাতের মহীরুহ প্রতিষ্ঠান অ্যাপল। একই সঙ্গে গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে ২০ হাজার কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা করছে অ্যাপল। আগামী চার বছর ধরে তাদের এ কর্মসূচি চলবে। খবর: রয়টার্স।

এ বিশাল বিনিয়োগের মধ্যে টেক্সাসে একটি বৃহৎ কারখানা তৈরি করা হবে, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) সার্ভারের জন্য ব্যবহার করা হবে। আরও রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সরবরাহকারীদের কাছ থেকে পণ্য কেনা, অ্যাপল টিভি+ পরিষেবার জন্য টেলিভিশন শো ও সিনেমা তৈরি। তবে আইফোনের গ্লাস প্রস্তুতকারক কোম্পানি কর্নিংয়ের মতো প্রতিষ্ঠানসহ যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ খাতে ব্যয়ের পরিকল্পনা আগে থেকেই করা আছে কি না এ সম্পর্কে অ্যাপল কিছু জানায়নি। গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে অ্যাপলের সিইও টিম কুকের সাক্ষাতের পর এমন ঘোষণা এলো। ট্রাম্প নিজের সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে এক পোস্টে অ্যাপল ও সিইও টিম কুককে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এ পদক্ষেপ অ্যাপলের তার প্রশাসনের প্রতি আস্থার প্রতিফলন।

এরই মধ্যে অ্যাপলের শেয়ারের দাম ১ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অ্যাপলের বেশিরভাগ ভোক্তা পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে সংযোজন করা হয়, তবে ব্রডকম, স্কাইওয়ার্কস সল্যুশনস ও কোরভোর মতো কোম্পানির তৈরি চিপসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি হয়। অ্যাপল জানিয়েছে, তারা গত মাসে অ্যারিজোনায় তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির (টিএসএমসি) মালিকানাধীন একটি কারখানায় নিজস্ব নকশার চিপগুলোর ব্যাপক উৎপাদন শুরু করেছে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিল্পনীতি উদ্যোগ ছিল, টিএসএমসিকে অ্যারিজোনায় কারখানা নির্মানে সহায়তা করা এবং পরবর্তী সময়ে ইউএস সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনকে উৎসাহিত করার জন্য তৈরি হওয়া চিপস অ্যাক্ট প্রণয়নের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা।

অ্যাপল আরও জানায়, তারা ফক্সকনের সঙ্গে হিউস্টনে ২ লাখ ৫০ হাজার বর্গফুটের একটি নতুন কারখানা নির্মাণ করবে। সেখানে ডেটা সেন্টারের জন্য সার্ভার সংযোজন করা হবে, যা অ্যাপলের নতুন অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স নামে পরিচিত এআই ফিচার চালানোর জন্য ব্যবহৃত হবে। বর্তমানে এ ধরনের সার্ভার যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে তৈরি করা হয়, তবে নতুন কারখানার মাধ্যমে তা দেশের ভেতরেই উৎপাদনের পরিকল্পনা করছে অ্যাপল। অ্যাপল জানিয়েছে, তারা অ্যাডভান্সড ম্যানুফ্যাকচারিং ফান্ড ৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ১০ বিলিয়ন ডলারে বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। এর অংশ হিসেবে, অ্যাপল টিএসএমসির অ্যারিজোনা কারখানায় উন্নত সিলিকন উৎপাদনের জন্য বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।টিএসএমসির সঙ্গে চুক্তির বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি অ্যাপল। তবে, এর আগে এই ফান্ড ব্যবহার করে কোম্পানি তাদের অংশীদারদের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তুলতে সহায়তা করেছে, যাতে তারা অ্যাপলের জন্য পণ্য ও পরিষেবা সরবরাহ করতে পারে।

এছাড়া, অ্যাপল মিশিগানে একটি ম্যানুফ্যাকচারিং একাডেমি খুলবে। সেখানে অ্যাপলের প্রকৌশলীরা এবং স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীরা যৌথভাবে ছোট ও মাঝারি আকারের উৎপাদন সংস্থাগুলোর জন্য বিনামূল্যে কোর্স পরিচালনা করবেন। কোর্সগুলো প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ও উৎপাদন প্রক্রিয়া উন্নয়নের ওপর কেন্দ্রীভূত থাকবে। ট্রাম্প চলতি মাসের শুরুর দিকে চীনের ওপর যে শুল্ক আরোপ করেছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাপলের চীনে সংযোজিত অনেক পণ্য ১০ শতাংশ শুল্কের মুখে পড়তে পারে। তবে অ্যাপল এর আগের ট্রাম্প প্রশাসনের সময় চীন থেকে আমদানি শুল্কের কিছু ছাড় পেয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ পরামর্শ ও বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ডি. এ. ডেভিডসনের বিশ্লেষক গিল লুরিয়ার অনুমান, অ্যাপল এরইমধ্যে প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য উৎপাদন খরচ ও মূলধনী ব্যয়সহ ১৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তিনি বলেন, এ প্রতিশ্রুতি ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি একটি রাজনৈতিক অঙ্গীকার প্রকাশ করে। ব্যয় খুব বেশি না বাড়ালেও, তারা মাত্র ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যে তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারবে।