Print Date & Time : 8 September 2025 Monday 7:07 pm

৫,৬০০ কোটি টাকার নির্মাণ ব্যয় ১০,৬৯০ কোটিতে

বিশেষ প্রতিনিধি: চীনের অর্থায়নে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু টানেল। জিটুজি ভিত্তিতে এটি নির্মাণ করছে চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি)। এজন্য উচ্চ সুদে ঋণ দিয়েছে চীনের এক্সিম ব্যাংক। ২০১৫ সালের নভেম্বরে অনুমোদিত প্রকল্পটি আগামী ২৮ অক্টোবর উদ্বোধনের কথা রয়েছে। তবে এরই মধ্যে কয়েক দফা বেড়েছে এর নির্মাণব্যয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে টানেলটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল পাঁচ হাজার ৬০০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। তবে গত জানুয়ারিতে সর্বশেষ হিসাবে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা। অর্থাৎ টানেল নির্মাণব্যয় বেড়েছে পাঁচ হাজার ৮৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা বা ৯০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। টোল দিয়ে চলতে হবে এ টানেলে।

সেতু বিভাগের সূত্রমতে, দেশের প্রথম টানেল নির্মাণে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) চূড়ান্ত করা হয় ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে। সিসিসিসি ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান হংকংয়ের ওভিই অরূপ কনস্ট্রাকশন যৌথভাবে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই করে। এর ভিত্তিতেই এর নির্মাণব্যয় চূড়ান্ত করা হয়েছিল। তখন টানেল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় পাঁচ হাজার ৬০০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। তবে অর্থায়নের নিশ্চয়তা না থাকায় সে সময় ডিপিপি ফেরত দেয় পরিকল্পনা কমিশন। পরে টানেলটি নির্মাণে সিসিসিসির সঙ্গে নির্মাণ চুক্তি সই করে সেতু বিভাগ।

সিসিসিসির প্রস্তাবনার ভিত্তিতে ২০১৫ সালে জুনে প্রকল্পটি ব্যয় ধরা হয় সাত হাজার ৭৮৪ কোটি ছয় লাখ টাকা। তবে সিসিসিসির কিছু প্রস্তাবে আপত্তি তুলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি)। এরপরও নির্মাণব্যয় না কমে উল্টো বেড়ে দাঁড়ায় আট হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। ২০১৫ সালের নভেম্বরে ওই ব্যয়েই প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়।

এদিকে ঋণচুক্তি সম্পাদনে দেরি হওয়ায় টানেলের নির্মাণকাজ শুরু হয় দুই বছর পর। তবে জমি অধিগ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি, ভ্যাট ও কর পরিশোধের হার বৃদ্ধি, সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি, পরিষেবা সংযোগ লাইন স্থানান্তর ইত্যাদি খাতে ব্যয় বৃদ্ধির অজুহাতে ২০২০ সালে টানেলটি নির্মাণব্যয় বেড়ে যায়। সে সময় এ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৯ হাজার ৮৮০ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

ওই সময় প্রকল্পটিতে পাঁচ হাজার ৯১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা ঋণ দেয়ার কথা ছিল চীনের এক্সিম ব্যাংকের। বাকি তিন হাজার ৯৬৭ কোটি ২১ লাখ টাকা সরকারের তহবিল থেকে সরবরাহ করতে হবে। দুই শতাংশ সুদে ২০ বছরে চীনের ঋণ শোধ করতে হবে। তবে পরবর্তীতে ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

নির্মাণ শুরুর পরও টানেল ব্যয় স্থির থাকেনি। এর মধ্যে একবার জরুরি ভিত্তিতে ৪৯৪ কোটি দুই লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব বিশেষ অনুমোদন দেয়া হয়। তবে নির্মাণব্যয় বৃদ্ধির পরিমাণ প্রকল্প ব্যয়ের পাঁচ শতাংশের মধ্যে থাকায় তা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) পাঠানো হয়নি। পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (অবকাঠামো) এ প্রস্তাব অনুমোদন করেন।

অন্যদিকে, গত জানুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু টানেলের ব্যয় আরেক দফা বাড়ানো হয়। সে সময় এ নির্মাণব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন চার হাজার ৬১৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং চায়না এক্সিম ব্যাংকের ঋণ ছয় হাজার ৭০ কোটি টাকা। ব্যয় বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলা হয়Ñপ্রাইজ কন্টিনজেন্সি খাতে প্রদত্ত অতিরিক্ত অর্থ রাখা, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার পরিবর্তনের কারণে ব্যয় বৃদ্ধি, প্রকল্পের কার্যক্রমের পরিধি পরিবর্তন, সার্ভিস এরিয়ার তৈজসপত্র, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, আসবাবপত্র এবং গৃহসজ্জা সামগ্রী ক্রয়, নতুন অঙ্গ সংযোজন/বিয়োজন, ভ্যাট ও আইটি বৃদ্ধি এবং প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি।

এরই মধ্যে কর্ণফুলীর কাজ প্রায় শেষ। এখন চলছে উদ্বোধনের আগে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। এছাড়া গত জুলাইয়ে টানেলটির টোল নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু টানেল পারাপারে সর্বনি¤œ

 টোল ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রাইভেটকার, জিপ ও পিকআপের জন্য। আর সর্বোচ্চ টোল দিতে হবে ট্রাক ও ট্রেইলারকে। ট্রেইলারের ক্ষেত্রে নির্ধারিত টোলের সঙ্গে প্রতিটি এক্সেলের জন্য আরও ২০০ টাকা করে বাড়তি দিতে হবে। তবে টানেলে বাইক চলাচলের অনুমতি নেই।

অন্যান্য যানবাহনের মধ্যে মাইক্রোবাসের টোল ২৫০ টাকা, বাস (৩১ সিটের কম) ৩০০ টাকা, বাস (৩২ আসনের বেশি) ৪০০ টাকা, বাস (৩ এক্সেল) ৫০০ টাকা, ট্রাক (৫ টন পর্যন্ত) ৪০০ টাকা, ট্রাক (৫ দশমিক ০১ থেকে ৮ টন) ৫০০ টাকা, ট্রাক (৮ দশমিক ০১ থেকে ১১ টন) ৬০০ টাকা, ট্রাক ও ট্রেইলার (৩ এক্সেল) ৮০০ টাকা, ট্রাক ও ট্রেইলার (৪ এক্সেল) ১০০০ টাকা এবং চার এক্সেলের বেশি ট্রাক ও ট্রেইলারগুলোকে ১০০০ টাকার সঙ্গে প্রতি এক্সেলের জন্য আরও ২০০ টাকা করে টোল দিতে হবে।

উল্লেখ্য, কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের আওতায় তিন দশমিক ৪০ কিলোমিটার মূল টানেল ছাড়াও পূর্ব (আনোয়ারা) প্রান্তে ওপেন কাট ২০০ মিটার, কাট অ্যান্ড কাভারের ১৯৫ মিটার, সংযোগ সড়ক ৫৫০ মিটার এবং ২৫ মিটার ওয়ার্কিং শ্যাফট নির্মাণ করা হবে। আর টানেলের পশ্চিম (পতেঙ্গা) প্রান্তে ওপেন কাট ১৯০ মিটার, কাট অ্যান্ড কাভারের ২৩০ মিটার, সংযোগ সড়ক চার হাজার ৮০ মিটার এবং ২৫ মিটার ওয়ার্কিং শ্যাফট নির্মাণ করা হয়েছে।