ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড

৫৭ বছরেও বাড়েনি পরিশোধন সক্ষমতা

দেশের একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি ১৯৬৮ সালে নির্মিত হয়। তখন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিশোধনের সক্ষমতা ছিল ১৫ লাখ টন। এর মধ্যে তেলের চাহিদা বছরে ৭৫ লাখ টন, যার ৮০ শতাংশ আমদানির মাধ্যমে পূরণ হচ্ছে। অর্থায়ন জটিলতায় নানা সময়ে উদ্যোগ নিয়ে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপনের কাজ শুরু করতে পারেনি বিপিসি।

জানা যায়, ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড বিপিসির একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমানে পরিশোধন করার সক্ষমতা বছরে ১৫ লাখ টন হলেও পরিশোধন হয় ১৩ লাখ ৮০ হাজার টন। আর এ সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ২০১০ সালে ইআরএল-২ নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয় এবং ২০১৩ সালে সরকার প্রকল্পের জন্য ১৩ হাজার কোটি টাকা অনুমোদন করে। কিন্তু প্রকল্পটির কোনো অগ্রগতি হয়নি। ২০২২ সালে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) নিজস্ব অর্থায়নে নতুনভাবে উদ্যোগ নিলে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৩ হাজার কোটি টাকা, তবু কাজ শুরু হয়নি। যদিও ২০২৪ সালের শুরুতে এস আলম গ্রুপ ২৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ইআরএল-২ নির্মাণের আগ্রহ দেখালে ৯ জুলাই জ্বালানি বিভাগ প্রস্তাবটি অনুমোদন করে। কিন্তু আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলে প্রকল্পটি স্থগিত হয়ে যায়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বিপিসি নতুন করে প্রকল্পটি সচল করার উদ্যোগ নেয়, তবে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬ হাজার ৪১০ কোটি টাকা।

ইআরএল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পরিশোধন সক্ষমতা বাড়লে তেল আমদানি ব্যয় কমবে। পণ্যের দাম হ্রাস পাবে এবং বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য জ্বালানি আরও সাশ্রয়ী হবে। এ ছাড়া পরিশোধিত তেল আমদানির ওপর নির্ভরতা যেমন কমবে, তেমনি প্রতিবছর কমপক্ষে দুই বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে।

জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞরা বলেন, স্বাধীনতার আগেই নির্মিত এই শোধনাগার বছরে মাত্র ১৫ লাখ টন অপরিশোধিত তেল পরিশোধন করতে পারে। অথচ দেশের বার্ষিক চাহিদা এখন ৭৭ লাখ টন। অর্থাৎ দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা সক্ষতার পাঁচগুণ। এত সম্ভাবনার পরও ১৯৬৮ সালে প্রথম ইউনিট চালু হওয়ার পরও বাংলাদেশ দ্বিতীয় শোধনাগার নির্মাণ করতে পারেনি। ফলে বিপিসিকে ব্যয়বহুল পরিশোধিত জ্বালানি আমদানি করতে হচ্ছে। এতে ডলারের অপচয় হচ্ছে। অথচ বিগত সরকারগুলো কখনো ইআরএল-২ প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দেয়নি।

বিপিসি’র পরিকল্পনা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ইআরএল-২ নির্মাণে আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬ হাজার ৪১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিপিসি ৩০ শতাংশ অর্থায়ন করবে, বাকি ৭০ শতাংশ ফান্ড সরকার কিংবা উন্নয়ন অংশীদারের কাছ থেকে ঋণ নেয়া হবে।

এ বিষয়ে বিপিসির মহাব্যবস্থাপনা আমিন মামুন শেয়ার বিজকে বলেন, দেশের একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিশোধনের সক্ষমতা ১৫ লাখ টন। এর মধ্যে দেশে চাহিদা তেলের চাহিদা বছরের ৭৫ লাখ টন। আর পরিশোধনের সক্ষমতা আরো ৩০ লাখ টন বাড়ানোর জন্য ইআরএল ইউনিট-২ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা খুবই জরুরি। এ প্রকল্পের জন্য আমরা বিনিয়োগকারী খুঁজছি। এতে বিপিসি’র নিজস্ব বিনিয়োগ থাকবে ৩০ শতাংশ, বাকি ৭০ সরকার থেকে ঋণ নেয়া হবে। মূলত অর্থায়নের জটিলতায় প্রকল্পটি দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে।