অর্থবছর ২০২২-২৩

৫ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস বিশ্বব্যাংকের

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে এনেছে প্রধান উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটির ভাষ্যমতে, চলতি অর্থবছর দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে পাঁচ দশমিক দুই শতাংশ, যা গত অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির তুলনায় প্রায় দুই শতাংশীয় পয়েন্ট কম। চলতি অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে সাত শতাংশ। সেই হিসাবে সরকার ও বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসের মধ্যে ব্যবধান ৩০ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেটে এমন তথ্য জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। গতকাল সংস্থাটির ঢাকা কার্যালয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর বসন্তকালীন হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক। এতে জানানো হয়, গত অর্থবছরের তুলনায় এবার বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কম হবে। আর কী কারণে কম হবে, সে বিষয়েও ব্যাখ্যা দিয়েছে সংস্থাটি। এ ব্যাখ্যায় জানানো হয়, জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমার পেছনে প্রধানত চারটি কারণ কাজ করছে। এগুলো হলোÑমূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী থাকা, দেশের আর্থিক অবস্থায় মন্দাভাব, আমদানি কার্যক্রমে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা।

বিশ্বব্যাংক জানায়, গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ধস নামতে শুরু করে। আর এ ধস ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানি নিয়ন্ত্রণের জন্য নানা পদক্ষেপ নেই। এর ফলে আমদানি হ্রাস পায়। এমন পণ্যের আমদানি হ্রাস পেয়েছে, যা দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদন কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পর্কিত। এ ধরনের নিয়ন্ত্রণের ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য যে ধরনের মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে, তা কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। আর ডলারের বাজারে একাধিক বিনিময় হার অর্থনীতিতে আরও বেশি অস্থিরতা বাড়িয়েছে। এসবের পাশাপাশি বিগত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলতি হিসাবে বড় ধরনের ঘাটতি বিদ্যমান। বর্তমানে এ ঘাটতির পরিমাণ সাত বিলিয়ন ডলারের ওপরে। আর সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে কৃচ্ছ্রসাধনের নীতি গ্রহণ করেছিল, তাও কার্যকর হয়নি; বরং সরকারি ভোগ বেড়েছে। এর ফলে বাজেট ঘাটতি অনেক বেড়ে গেছে। সার্বিকভাবে অর্থনীতি সুস্থভাবে কাজ করছে না বলে অভিমত বিশ্বব্যাংকের।

গতকাল সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট আপডেট ট্রেড রিফর্ম: অ্যান আর্জেন্ট এজেন্ডা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ বার্নার্ড হ্যাভেন। হ্যাভেন বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি মধ্যমেয়াদে ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সে সময়ে ধীরে ধীরে মূল্যস্ফীতির চাপ কমে আসবে, অভ্যন্তরীণ অবস্থার

উন্নতি হবে এবং সংস্কার বাস্তবায়নে গতি আসবে। তবে বর্তমানে অর্থনীতি বড় ধরনের চাপের মধ্যে আছে। যার খড়্গ পড়বে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে।

শেষ পৃষ্ঠার পর

আগামী অর্থবছর থেকে ধীরে ধীরে এ প্রবৃদ্ধি বাড়তে থাকবে। বিশ্ব্যাংকের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ২ শতাংশ। আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এটি দাঁড়াবে ৬ দশমিক ৪ শতাংশে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন ও বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা বিশ্বের দেশগুলোকে প্রভাবিত করেছে। বাংলাদেশের মহামারি-পরবর্তী সময়ে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে উন্নয়ন ব্যাহত হয়েছে। শক্তিশালী কাঠামোগত সংস্কার

বাংলাদেশকে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সাহায্য করতে পারে বলেও জানান তিনি।

বার্নার্ড হ্যাভেন বলেন, ‘বাংলাদেশের রপ্তানির প্রায় ৮৩ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। দেশের অর্থনীতি একটি একক খাতের ওপর দাঁড়িয়ে, এটি ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।

এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশকে এখন একটি ভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। তবে সরকার যে আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছে, তা দীর্ঘস্থায়ী হলে উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটবে। মূলকথা হলো জোগান কমলে বিনিয়োগ কমবে, উৎপাদনও ঠিকমতো হবে না, প্রবৃদ্ধিও ত্বরান্বিত হবে না। এ সময় বিনিময়হারকে বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে।