৫ হাজার টাকা পুঁজিতে শুরু কোয়েল পাখি পালন করে সফল সোহেল রানা

জুনায়েদ আহম্মেদ, লক্ষ্মীপুর: পড়াশোনা করে চাকরির পেছনে না ঘুরে কোয়েল পাখি পালন করে এখন আত্মনির্ভরশীল লক্ষ্মীপুরের সোহেল রানা। বছর পাঁচেক আগে একটি খামারে মাত্র ২০০ কোয়েল পাখি দিয়ে শুরু করে বর্তমানে তার তিনটি খামারে প্রায় পাঁচ হাজারেরও বেশি কোয়েল পাখি রয়েছে। পাখি পালনের আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করায় অল্প পুঁজিতেই মাত্র এক মাসের মাথায় দেখতে পান সাফল্য।

এদিকে নিজস্ব পদ্ধতি ব্যবহার করে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে তা বাজারে বিক্রি করেও লাভবান হয়েছেন তিনি। কোয়েল পাখির রোগবালাই কম হওয়ায় ও বাজারে এর চাহিদা থাকায় বাণিজ্যিকভাবে এ ব্যবসা শুরু করেন তিনি। বর্তমানে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বিক্রির জন্য অহনা বার্ডস অ্যান্ড ফিজিয়ন গ্যালারি নামে তার একটি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।

সোহেল রানা জানান, পড়াশোনা শেষ করে চাকরির পেছনে ঘুরতে ঘুরতে পরে বিদেশে পাড়ি জমান তিনি। প্রবাসে কঠোর পরিশ্রম করে যে অর্থ উপার্জিত হয় তার চেয়ে কম কষ্টে দেশেই তা উপার্জন করা সম্ভব মনে করে তিন মাসের মাথায় দেশে ফিরে আসেন। পরে কোয়েল পালনের পদ্ধতি নিয়ম-কানুন জেনে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা পুঁজি দিয়ে গড়ে তোলেন কোয়েল পাখির একটি ছোট খামার।

তিনি জানান, কোয়েল পাখির মাংস সুস্বাদু হওয়ায় লক্ষ্মীপুরের বাজারে এর চাহিদাও রয়েছে বেশ। ২০১৫ সালে একটি খামার দিয়ে মাত্র ২০০টি কোয়েল পাখি পালন শুরু করেন লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের জেবি রোডের মো. সোহেল রানা। এক মাসের মাথায় দেখা পান সাফল্যের। এখন তার পাঁচটি শেডে (খামার) প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি কোয়েল পাখি রয়েছে। খামার থেকে এখন প্রতি মাসে দুই থেকে আড়াই হাজার ডিম এবং প্রায় দুই হাজার পাখি বিক্রি উপযোগী হচ্ছে।

পাশাপাশি জেবি রোডে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বিক্রির জন্য গড়ে তুলেছেন অহনা বার্ডস অ্যান্ড ফিজিয়ন গ্যালারি নামে একটি প্রতিষ্ঠানও। বর্তমানে তার এসব খামার ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন পাঁচজন শ্রমিক। মাসে সব খরচ বাদ দিয়ে গড়ে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা লাভ হয় তার।

খামারি সোহেল জানান, কোয়েল পাখির নর মর্দা (পুরুষ) পাখি এবং মাদী (মেয়ে) পাখি জšে§র ২২ দিন পর মাংস খাওয়ার উপযুক্ত হয়ে ওঠে। তখন থেকে মর্দা পাখিকে বাজারে বিক্রি শুরু করেন এবং মাদী পাখি পালন শুরু করে। আর এসব পাখি ৪২ দিনের মাথায় ডিম দেওয়া শুরু করে এবং টানা ১৮ মাস ডিম দেয়। এক হাজার ডিম পাইকারি বিক্রি করে দুই হাজার টাকা পাওয়া যায়। কিন্তু একই পরিমাণ ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদন করে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পাওয়া যায়।

তিনি জানান, ডিম বিক্রির চেয়ে বাচ্চা উৎপাদনে বেশি লাভ হয়। এজন্য ডিম বিক্রির পাশাপাশি খামারে বাচ্চা উৎপাদন এবং একদিনের ফুটানো বাচ্চা ১৫-১৬ টাকা দরে বিক্রি করেন তিনি। এখন তাকে অনুসরণ করে কোয়েল চাষে উদ্ধুদ্ধ হয়েছেন এলাকার অনেক বেকার যুবক।

এদিকে প্রতিদিন পাখি ও ডিম কিনতে ব্যবসায়ী ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে ছোট-বড় খামারিরাও আসেন অনেকে। খামারে প্রতিটি পাখির দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রায় ২০০ টাকা জোড়া। আবার খাঁচাসহ চারটি পাখি বিক্রি করছেন ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকায়। নিজস্ব পদ্ধতি ব্যবহার করে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে তা বাজারেও বিক্রি করছেন সোহেল। প্রতিটি ডিম খামার থেকে বিক্রি হয় আড়াই টাকায়।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জোবায়ের হোসেন জানান, কোয়েল পাখির রোগ-বালাই কম এবং সুস্বাদু হওয়ার কারণে এটির চাহিদা থাকায় লাভবান হওয়া যায় খুব সহজে। বেকার যুবকদের সোহেলের মতো উদ্বুদ্ধ হয়ে কোয়েল পালনের পরামর্শও দেন এ কর্মকর্তা। প্রশিক্ষণ নিতে চাইলে তা দেওয়ার পাশাপাশি সরকারি সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাসও দেন তিনি।