নিজস্ব প্রতিবেদক: নিয়ম অনুযায়ী যোগদানের ৫ বছর পর পদোন্নতি হয়। কিন্তু যোগদানের ৯ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও পদোন্নতি পাননি বিসিএস (শুল্ক ও আবগারি) ক্যাডারের ৯১ জন সহকারী কমিশনার। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পরও উপকমিশনার (ডেপুটি কমিশনার বা ডিসি) পদে পদোন্নতি মেলেনি তাদের। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক ও ভ্যাট প্রশাসনে দুই বছরের বেশি সময় ধরে পদোন্নতির ফাইল আটকে আছে। এতে সহকারী কমিশনারদের মধ্যে হতাশা ও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
তারা বলেন, পদোন্নতি না হওয়ার ফলে ভুক্তভোগী সহকারী কমিশনারদের দৈনন্দিন কাজেও বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে পদোন্নতি না পাওয়ায় তারা পারিবারিক ও সামাজিক চাপে পড়ছেন। অনেকে মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছেন। আর এনবিআর কর্মকর্তা বলছেন, পদোন্নতির ফাইল প্রক্রিয়াধীন।
ভুক্তভোগী একাধিক সহকারী কমিশনার জানিয়েছেন, জটিলতার জালে আটকে যায় এসব কর্মকর্তার পদোন্নতি। অথচ একই ব্যাচের অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা অনেক আগেই পদোন্নতি পেয়েছেন। একই ব্যাচের অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি হওয়া এবং সময়মতো পদোন্নতি না পাওয়ায় শুল্ক ও আবগারি ক্যাডারের মেধাবী এসব কর্মকর্তা সামাজিকভাবে হেয় হচ্ছেন; আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ৩১তম ব্যাচের এক কাস্টমস কর্মকর্তা বলেন, ২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি সহকারী কমিশনার পদে তারা ৯১ জন যোগদান করেন। নিয়ম অনুযায়ী, ৫ বছর পর ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি থেকে তাদের উপকমিশনার হিসেবে পদোন্নতি হওয়ার কথা। কিন্তু পদোন্নতির সময় পেরিয়ে গেছে দুই বছর ৯ মাস আগেই। প্রায় ৯ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও পদোন্নতি মিলছে না। দুই বছর পদোন্নতির ফাইল আটকে থাকায় পারিবারিক, সামাজিক ও দাপ্তরিকভাবে আমরা মর্যাদার সংকটে ভুগছেন বলে জানান এ কর্মকর্তা।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, দ্রুত পদোন্নতি দিতে ইতোমধ্যে উপকমিশনারের ৫৩টি ‘সুপারনিউমারারি (সংখ্যাতিরিক্ত পদ সৃষ্টি)’ পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। চলতি বছরের ১ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটির অনুমোদন দেন। এরপর গত ৯ আগস্ট অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়। তবে যাচাই শেষে ৮৭ জনকে উপকমিশনার হিসেবে পদোন্নতি দিতে সুপারিশ করে এনবিআর। পদোন্নতি দিতে গত ২৬ আগস্ট ডিপার্টমেন্টাল প্রমোশন কমিটি (ডিপিসি) গঠিত হলেও অজ্ঞাত কারণে গেজেট না হওয়ায় সহকারী কমিশনারদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
গত ৯ আগস্টের ওই আদেশের শর্তের মধ্যে রয়েছেÑজারির তারিখ থেকে এ আদেশ কার্যকর হবে। সুপারনিউমারারি উপকমিশনারের পদগুলো পর্যায়ক্রমে সমন্বয় করতে হবে। পদোন্নতি বা অবসরজনিত কারণে উপকমিশনারের পদগুলো শূন্য হলে সমসংখ্যক সুপারনিউমারারি উপকমিশনারের পদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিলুপ্ত হবে। এক্ষেত্রে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ২০০৩ সালের ৩ মে জারি করা আদেশ অনুসরণ করতে হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগের সম্মতি, প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটির সুপারিশ ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ জারি করা হয়েছে বলে এতে উল্লেখ করা হয়। আদেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের প্রধান হিসাব ও অর্থ কর্মকর্তাকে অনুরোধ করা হয়।
এনবিআর সূত্র মতে, চলতি বছরের ২৮ জুন ২৩ জন উপকমিশনারকে যুগ্ম কমিশনার হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়। ফলে ২৩টি উপকমিশনারের পদ খালি হয়। আর ৩১তম ব্যাচের ৯১ জনের মধ্যে যাচাই শেষে ৮২ জন এবং অন্য ব্যাচের ৫ জনসহ মোট ৮৭ জনকে উপকমিশনারের পদোন্নতির জন্য এনবিআর থেকে সুপারিশ করা হয়।
এ বিষয়ে এনবিআরের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেয়ার বিজকে বলেন, পদোন্নতির ফাইল প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় রয়েছে। সিদ্ধান্ত হলে যে কোনো সময় আদেশ জারি করা হবে।