ইসমাইল আলী: দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ১৫২টি। এর মধ্যে বেসরকারি মালিকানায় রয়েছে ৯২টি ও একটি সরকারি-বেসরকারি যৌথ মালিকানায়। এসব কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ১০ হাজার ৮৪৯ মেগাওয়াট। তবে এ সক্ষমতার অর্ধেকও ব্যবহার হয় না। তার পরও বসিয়ে রেখে গুনতে হয় মোটা অঙ্কের ক্যাপাসিটি চার্জ।
প্রতি বছর এ খাতে ব্যয় বেড়েই চলেছে। বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ বেড়েছে প্রায় ১৯ শতাংশ।
পিডিবির তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে ১২ হাজার ২৮ কোটি ১১ লাখ টাকা। এর আগের (২০২০-২১) অর্থবছরের একই সময়ে এ চার্জ ছিল ১০ হাজার ১৪৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকার বেশি। অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছরের ৯ মাসে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ বেড়েছে এক হাজার ৮৭৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা বা ১৮ দশমিক ৫২ শতাংশ।
এর বাইরে ভারত থেকে আমদানি করা হয় ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এ খাতে গত অর্থবছর ৯ মাসে ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয়েছে ৮৬৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
এদিকে ২০১১-১২ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য (১০ বছরে) প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে। আর বিদায়ী অর্থবছর শেষে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ রেকর্ড ১৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে উপস্থাপিত তথ্যমতে, বিদায়ী অর্থবছর ৯ মাসে সর্বোচ্চ ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয়েছে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির জন্য। কয়লাভিত্তিক এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল দুই হাজার ২৭৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা। যদিও বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ না হওয়ায় কেন্দ্রটির সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার হচ্ছে না।
৬৬০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট নিয়মিতই বসিয়ে রাখতে হচ্ছে। অপর ইউনিটে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে। তবে মাসে কেন্দ্রটির জন্য গড়ে ২৫৩ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয় পিডিবিকে।
এদিকে বিদায়ী অর্থবছর ৯ মাসে সামিট গ্রুপের সাতটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয়েছে এক হাজার ১১০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। আর ইউনাইটেড গ্রুপের পাঁচ কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল ৯৩২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এছাড়া বাংলা ক্যাটের পাঁচ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয়েছে ৭০০ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
পিডিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়ায় (আমদানিসহ) ২৫ হাজার ৬৫ মেগাওয়াট। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা ছিল ৯ হাজার ৭৩৪ মেগাওয়াট। এজন্য ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয় ১৩ হাজার ১৫৫ কোটি ২১ লাখ টাকা।
এর আগের (২০১৯-২০) অর্থবছর জুন শেষে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ১৮ হাজার ৯৬৬ মেগাওয়াট। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে ছিল আট হাজার ৪১১ মেগাওয়াট। বেসরকারি এসব কেন্দ্রের জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয় ১০ হাজার ৮৫২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছর বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল পাঁচ হাজার ৭৪১ মেগাওয়াট। এজন্য ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয় আট হাজার ৭২২ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
একইভাবে ২০১৭-১৮ অর্থবছর বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল পাঁচ হাজার ২১৩ মেগাওয়াট। বেসরকারি এসব কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল ছয় হাজার ২৪১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছর বেসরকারি খাতের পাঁচ হাজার ৪৫৯ মেগাওয়াটের জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ পরিশোধ করা হয় পাঁচ হাজার ৭৬৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।
এর আগের (২০১৫-১৬) অর্থবছরে বেসরকারি খাতে স্থাপিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা ছিল পাঁচ হাজার ১৯৪ মেগাওয়াট। সে অর্থবছর ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয় পাঁচ হাজার ৩৭৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে স্থাপিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা ছিল চার হাজার ৪৪৮ মেগাওয়াট। সে অর্থবছর ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয় চার হাজার ৬৬৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
এদিকে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে স্থাপিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা ছিল চার হাজার ৯৬ মেগাওয়াট। সে অর্থবছর ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল চার হাজার ৭১৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। একইভাবে ২০১২-১৩ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে স্থাপিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা ছিল তিন হাজার ৬৮৫ মেগাওয়াট। সে অর্থবছর ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয় পাঁচ হাজার ৪৯০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
আর ২০১১-১২ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে স্থাপিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা ছিল তিন হাজার ৫৮৩ মেগাওয়াট। সে অর্থবছর ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল পাঁচ হাজার এক কোটি ২৩ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ২০১১-১২ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত ১০ বছরে বেসরকারি খাত থেকে বিদ্যুৎ কিনতে গিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে ৬৯ হাজার ৯৮৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।