নিজস্ব প্রতিবেদক: কভিড-১৯ মহামারির মাঝে মানুষের আয় কমলেও বেড়েছে সঞ্চয় প্রবণতা। আর গ্রাহকরা সঞ্চয়ের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য স্থান হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন সঞ্চয়পত্র। ফলে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বাড়ায় সরকারের ঋণের পরিমাণও বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ৮৫ হাজার ৯৯০ কোটি ১৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। একক মাস হিসেবে শুধু মার্চেই বিক্রি হয়েছে ১০ হাজার ৭৬২ কোটি ৫৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জুন থেকে মার্চ পর্যন্ত ৮৫ হাজার ৯৯০ কোটি ১৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ ৫২ হাজার ৯৬৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা শোধ করা হয়েছে। এ হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ২০২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। অন্যদিকে মার্চে ১০ হাজার ৭৬২ কোটি ৫৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। সুদ-আসল বাবদ গ্রাহকদের শোধ করা হয় ছয় হাজার ৮৭১ কোটি ২৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৮৯১ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্যে জানা গেছে, চলতি ২০২০-২১ পুরো অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা নেবে বলে লক্ষ্য ঠিক করে সরকার। কিন্তু প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয়েছে ৩৩ হাজার ২০২ কোটি টাকার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি। এর আগে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে এ খাত থেকে সরকারকে দুই হাজার ২৪০ কোটি ১৬ লাখ টাকা ঋণ নিতে হয়েছিল।
জাতীয় বাজেটে ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ উৎসাহের মধ্যে অন্যতম সঞ্চয়পত্র। চলতি (২০২০-২১) অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। বিশাল ঘাটতি মেটাতে এবার সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে যার লক্ষ্য ছিল ২৭ কোটি টাকা।
সঞ্চয়পত্র যত বিক্রি হয় সরকারের ঋণও এ খাত থেকে তত বাড়ে। কারণ বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর প্রতি মাসে যে অর্থ অবশিষ্ট থাকে, তাকে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি বলা হয়। অর্থনীতির পরিভাষায় নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রিকে সরকারের ঋণ হিসেবে ধরা হয়। ধারণা করা হয়েছিল, করোনা মহামারিতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমবে, সেইসঙ্গে এ খাত থেকে সরকারের ঋণের বোঝাও কমে আসবে; কিন্তু হয়েছে উল্টো। ব্যাংকগুলোয় আমানতের বিপরীতে সুদের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ফলে দীর্ঘ মেয়াদে ব্যাংকে টাকা রাখার বদলে সঞ্চয়পত্রে ঝুঁকছে মানুষ। এসব বিষয় আমলে নিয়ে আগামী অর্থবছরে এ খাত থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়াচ্ছে সরকার।
বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক শূন্য চার শতাংশ, পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ ও পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ২০১৫ সালের ২৩ মের পর থেকে এ হার কার্যকর রয়েছে। এর আগে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ছিল ১৩ শতাংশেরও বেশি।
প্রসঙ্গত, সরকারের পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্র শুধু বাংলাদেশ জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের আওতাধীন সঞ্চয় ব্যুরো থেকে কেনার বিধান রেখে আদেশ জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি)।আগে এটি দেশের যে কোনো তফসিলি ব্যাংক ও ডাকঘর থেকে কেনার সুযোগ ছিল। গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) থেকে এ-সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়েছে। আদেশ জারির দিন থেকে নতুন এ আদেশ কার্যকর করা হয়েছে।