খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করলেও পুষ্টি নিরাপত্তা ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে আমরা এখনও অনেক পিছিয়ে। সবার জন্য পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করা সহজ নয়। খাদ্যের সব উপকরণ নিয়ে সচেতন করা গেলে নাগরিকরা সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান হতে পারবেন। তখন প্রত্যেক নাগরিকই হয়ে উঠবেন জনসম্পদ। সুস্বাস্থ্য ও সুস্থ মনের জন্য প্রতিদিন পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্যের প্রয়োজন। দেহের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে হলে ছয়টি উপাদানবিশিষ্ট খাদ্য গ্রহণ আবশ্যক। এর একটি হলো ভিটামিন, বাংলায় যা খাদ্যপ্রাণ হিসেবে পরিচিত। ভিটামিনও কয়েক ধরনের। একেকটি একেক ধরনের পুষ্টি জোগায়। ভিটামিন শ্রেণিকরণে প্রথমটি ‘এ’। এটির অভাবে দেখা দিতে পারে নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা। যেমন, চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যায়, চোখের রোগ হয়, চামড়ায় গুটি ওঠে, চুলকানি প্রভৃতি সমস্যা দেখা দেয় এ ভিটামিনের অভাবে। ভিটামিনের অভাব যে প্রকট, তা বোঝা যায় কমবয়সী শিশুদের চশমার ব্যবহার দেখে।
ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় সরকার ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ ও ভিটামিন ‘এ’-সমৃদ্ধ ভোজ্যতেল বিক্রি, সংরক্ষণ, সরবরাহ, বিপণন বা বাজারজাত করা বাধ্যতামূলককরণ এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়ে বিধানে ২০১৩ সালে আইনও পাস করেছে। এ আইন অনুযায়ী মাত্রা অনুযায়ী ভোজ্যতেল ভিটামিন ‘এ’ দ্বারা সমৃদ্ধ করায় বাধ্যবাধকতা রয়েছে এবং তা লঙ্ঘনে রয়েছে নানা ধরনের শাস্তির বিধান। জনগণের পুষ্টিমান উন্নয়নে সব ধরনের ভোজ্যতেলে মানবস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী ভিটামিন ‘এ’ মেশানোর নির্দেশ দিয়েছে সরকার। ২০১৫ সালের ১০ ডিসেম্বর ভিটামিন ‘এ’ না মেশানো সব ভোজ্যতেল পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বাজার থেকে তুলে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিল শিল্প মন্ত্রণালয়।
তবে সরকারের এ নির্দেশ সত্ত্বেও বাস্তবচিত্র ভিন্ন। দেশে ভোজ্যতেলের ৬৫ শতাংশই বিক্রি হয় খোলা বা লুজ আকারে। এসব তেলে কখনোই ভিটামিন এ মেশানো হয়নি। এ ক্ষেত্রে ভোক্তাদের আস্থার জায়গা হলো বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বোতলজাত করা তেল। এ আস্থায়ও চিড় ধরবে। গতকাল গণমাধ্যমে খবর ছিল, সঠিক মাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ সংযোজন না করে ‘ফর্টিফায়েড’ ভোজ্যতেল বাজারজাত করায় বিএসটিআইয়ের মামলায় সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিচার শুরু করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এখন সতর্ক হতে হবে আমাদের। দেশের যেসব রিফাইনারি প্রতিষ্ঠান প্যাকেট কিংবা কনটেইনারে ভোজ্যতেল বাজারজাত করে, সেগুলোর যথানিয়মে ভিটামিন ‘এ’ সংযোজন করছে কি না, সেজন্য তদারকি জোরদার করতে হবে। কয়টি প্রতিষ্ঠান ভিটামিন ‘এ’-সমৃদ্ধ ভোজ্যতেল বিক্রির অনুমোদন পেয়েছে, সেগুলোর নামও গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে জনসাধারণকে অবহিত করা দরকার। শিল্প মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতি লিটার তেলে ভিটামিন ‘এ’ মেশাতে ২০-২৫ পয়সা খরচ হয়। ব্যবসায়ীরা কেন সামান্য খরচের কারণে এটি মেশাবেন না; এটি দুঃখজনক। সব ভোজ্যতেলে ভিটামিন-এ মেশালে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়বে, এমন কথা প্রচার আছে বাজারে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে মাত্রায় ভিটামিন মেশানোর কথা বলা হচ্ছে, তা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর নয়। ‘অতিরিক্ত’ হলে ক্ষতি হতেই পারে। তাই সঠিক মাত্রার ভিটামিন সংযোজনে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সবাই তা করছে কি না, সে লক্ষ্যে তদারকিও জোরদার করতে হবে।