আবদুল হাকিম আবির: ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন এবং সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্তি না করে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদের হাতাহাতির ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত ৩০ জুলাই তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তদন্ত কার্যক্রমে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। কবে নাগাদ এ ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে সে সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু জানাতেও পারেননি কমিটির সদস্যরা। এদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করছেন উপাচার্যপন্থী শিক্ষকদের অপরাধ আড়াল করতেই তদন্তে ধীরগতি অবলম্বন করা হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অফিস সূত্রে জানা যায়, উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে বিশৃঙ্খলার ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করতে গত ৩০ জুলাই রোববার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেনÑবিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ফজলুর রহমান ও অধ্যাপক মাকসুদুর রহমান এবং লেদার টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আফতাব আলী শেখ।
তদন্ত কমিটির কার্যক্রম সম্পর্কে কমিটির প্রধান অধ্যাপক ফজলুর রহমান বলেন, আমরা কম সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন প্রকাশ করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে কমিটির সদস্যের অন্যান্য ব্যস্ততার কারণে পর্যাপ্ত সময় আমরা পাই না। কবে নাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে, সে সম্পর্কেও নিশ্চিত করে তিনি কিছু বলতে পারেননি।
তদন্ত কমিটি গঠনের পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা কমিটিতে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি না থাকায় সংবাদ সম্মেলন করে তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের মতে, ‘বিশ্ববিদ্যালেয়ের প্রক্টর ঘটনার পর থেকেই শিক্ষার্থীদের দোষী সাব্যস্ত করছেন। তাই স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে একটি প্রহসনের তদন্ত হবে। ফলে এ কমিটি থেকে নিরপেক্ষ প্রতিবেদন আশা করা বাতুলতা। কেবল শিক্ষক প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত এ কমিটির প্রতিবেদনে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বহিষ্কারসহ নানা শাস্তির খড়্গ নেমে আসতে পারে বলেও আশঙ্কা করেছেন তারা। তদন্ত কমিটি গঠনের দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনও প্রতিবেদন দাখিল না করায় তারা বলছেন উপাচার্যপন্থী শিক্ষকদের অপরাধ আড়াল করতেই তদন্তে ধীরগতি অবলম্বন করা হচ্ছে।’
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মাসুদ আল মাহাদী বলেন, সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্তি এবং ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে আমরা সেদিন মুখে কালোকাপড় বেঁধে মানববন্ধন করতে চেয়েছিলাম। সেদিনের পুরো ঘটনাটাই ঘটেছে শিক্ষকদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে এটা প্রমাণিত। এ ঘটনা তদন্তের জন্য যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেখানেও ছাত্রদের কোনো প্রতিনিধি রাখা হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আন্দোলনকারী আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, তদন্ত কমিটির কর্মকাণ্ড দেখে বোঝাই যাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আসলে উপাচার্যপন্থী শিক্ষকদের অপরাধ আড়াল করতে চায়। এ কারণেই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতেও বিলম্ব করছে তদন্ত কমিটি।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও এ ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষকদের একটা অংশ। তারা বলছেন, উপাচার্যপন্থী শিক্ষকদের সেদিনকার আচরণের কারণে সব শিক্ষকই লজ্জিত। সব শিক্ষকই চান সঠিক তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের শাস্তি হোক। সঠিকভাবে তদন্ত হলে শিক্ষকরা দায়মুক্তির সুযোগ পাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক নেতা বলেন, শিক্ষার্থীদের সেদিনের আন্দোলনে যেসব শিক্ষক প্রকাশ্যে শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়েছেন তারা সবাই উপাচার্যের আশীর্বাদপুষ্ট। এ কারণেই হয়তো তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন প্রকাশে সময় ক্ষেপণ করছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এ বিষয়ে নীরব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আমজাদ আলী এ বিষয়ে শেয়ার বিজকে বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের এ অভিযোগ সম্পর্কে তারা নিজেরাই ভালো বলতে পারবে। তদন্ত চলাকালে এ বিষয়ে আমি কিছু বলবো না। এছাড়া প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য কমিটিকে সময় নির্দিষ্ট করে না দিলেও খুব কম সময়ের মধ্যে যেন তারা প্রতিবেদন প্রকাশ করে সে বিষয়ে তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।