Print Date & Time : 6 July 2025 Sunday 6:44 am

বিশ্বের জ্বালানি নিরাপত্তার ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন গতকাল বৃহস্পতিবার লন্ডনে শুরু হয়েছে। তবে বৈশ্বিক জ্বালানি চাহিদা মেটাতে নবায়নযোগ্য শক্তির ভূমিকা নিয়ে তীব্র মতবিরোধের মধ্যেই এ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে।

লন্ডন থেকে এএফপি জানায়, দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ)-র সম্মেলন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধজনিত কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতি টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে। খবর বাসসের।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতিকে ঘিরে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা সম্মেলনের প্রেক্ষাপটকে আরও জটিল করে তুলেছে। আইইএ জানিয়েছে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জ্বালানি নিরাপত্তায় ভূ-রাজনৈতিক, প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলো কীভাবে প্রভাব ফেলে, তা পর্যালোচনার লক্ষ্যেই এ সম্মেলন।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশের জ্বালানি মন্ত্রীসহ ১২০ জন শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী নেতা ও বিশেষজ্ঞ এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র এ সম্মেলনে কেবল একজন ভারপ্রাপ্ত উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে প্রতিনিধিত্ব করছে, আর চীন, সৌদি আরব ও রাশিয়া পুরোপুরি অনুপস্থিত।

ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি উরসুলা ফন ডের লায়েন ইউরোপের সাশ্রয়ী ও টেকসই জ্বালানি প্রচেষ্টার বিস্তারিত তুলে ধরবেন বলে জানা গেছে। তবে নবায়নযোগ্য শক্তির গুরুত্ব এই সম্মেলনে কতখানি দেয়া হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে। পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংস্থা ওপেক এই সম্মেলনকে স্বাগত জানিয়েছে।
সংগঠনটি বুধবার জানিয়েছে, সম্মেলনের সামগ্রিক বিষয়বস্তু ওপেক সমর্থন করে। আইইএ আবারও জ্বালানি নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিচ্ছে, এটা ইতিবাচক। তারা আরও বলেছে, ‘অনেক ‘নেট-জিরো’ নীতিই অবাস্তব সময়সীমা নির্ধারণ করেছে কিংবা জ্বালানি নিরাপত্তা, সাশ্রয় বা বাস্তবতা বিবেচনায় নেয়নি।’ আগে থেকেই ওপেক জীবাশ্ম জ্বালানি পরিত্যাগের পরিকল্পনাকে ‘কল্পনা’ হিসেবে বর্ণনা করে আসছে।

ওপেকের মতে, জ্বালানি নিরাপত্তা অর্জন করতে হলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি জীবাশ্ম জ্বালানির পাশাপাশি যুক্ত করতে হবে, প্রতিস্থাপন নয়। অন্যদিকে ইউরোপের দেশগুলোর বিশ্বাস, পারমাণবিক ও নবায়নযোগ্য শক্তিই আমদানিকৃত তেলের ওপর নির্ভরতা কমাতে সহায়ক। বিশেষ করে ২০২২ সালে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পর থেকে এসব জ্বালানির দাম অস্থির হয়ে উঠেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বহুবার বলেছেন, তিনি ‘ড্রিল বেবি ড্রিল’ নীতির মাধ্যমে খনিজ তেল ও গ্যাস উত্তোলন বাড়িয়ে জ্বালানির দাম কমাতে চান এবং বাতাসচালিত বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর বিকাশ সীমিত রাখতে চান। ১৯৭৪ সালে প্রথম তেল সংকটের পর প্রতিষ্ঠিত আইইএ এখনো ‘জ্বালানি সার্বভৌমত্বের একটি উপায় হিসেবে জ্বালানি রূপান্তওমশ’ উৎসাহিত করাকে নিজের লক্ষ্য বলে উল্লেখ করে ফরাসি জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

বলা হয়েছে, ‘এই সম্মেলনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো নির্দিষ্ট এজেন্ডা নেই, এবং ইউরোপীয় দেশগুলোও তা নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়।’ তবে ইউরোপের একটি বড় জ্বালানি কোম্পানির এক সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আইইএ এবং এর নির্বাহী পরিচালক ফাতিহ বিরোল নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে তাদের বক্তব্য অনেকটাই নরম করেছেন।
উল্লেখ্য, ‘ট্রাম্প প্রশাসনকে ক্ষুব্ধ না করা এবং ওপেকের সঙ্গে উত্তেজনা প্রশমিত করাই’ এর মূল উদ্দেশ্য বলে সেই সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে।