Print Date & Time : 6 July 2025 Sunday 5:37 am

শামসুল আলম, ঠাকুরগাঁও : ঠাকুরগাঁও জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে গবাদিপশুর ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ’ (এলএসডি)। জেলার বিভিন্ন এলাকায় ইতোমধ্যে প্রায় অর্ধশতাধিক গরু এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। তবে স্থানীয়দের মতে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।

গরুর শরীরে গুটি ওঠা, জ্বর, ওজন কমে যাওয়া এবং দুধের পরিমাণ কমে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। বর্তমানে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রমণ।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড় খোঁচাবাড়ি এলাকার খামারি মতিউর রহমান বলেন, লাম্পি স্কিন রোগে আমার দুটি গরু মারা গেছে। গরিব মানুষ, এগুলোয় ছিল একমাত্র অবলম্বন। এখন সব শেষ।’

বেগুনবাড়ী গ্রামের খামারি আবু তালেব জানান, আমার একটা বিদেশি জাতের বাছুর মারা গেছে। পশু হাসপাতালে নিয়েও কোনো লাভ হয়নি। দামি ছিল বাছুরটা। হাবুসপাড়া, মাঝিপাড়া, নতুনপাড়া ও মালিপাড়ায় তার তত্ত্বাবধানে অন্তত ১৫
থেকে ১৬টি গরুর চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি গরুর অবস্থা সংকটজনক বলে জানান সদর উপজেলার লাইভস্টক অ্যাসিস্ট্যান্ট মনোরঞ্জন রায়।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের অতিরিক্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রেজওয়ানুর হক বলেন, জেলার ২৪১টি খামারে তদারকি চালানো হয়েছে এবং তিন হাজার ৮৭৮টি গৃহস্থালি খামারে নজরদারি চলছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইতোমধ্যে ২০ হাজার ডোজ টিকা

দেয়া হয়েছে। গরুর স্বাস্থ্যসেবায় চারটি মেডিকেল ক্যাম্প চালু রয়েছে। সচেতনতা তৈরিতে ২৪টি উঠান বৈঠকেরও আয়োজন করা হয়েছে।

স্থানীয় পশু চিকিৎসক নজরুল ইসলাম জানান, গরু লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগে আক্রান্ত হলে প্রথমে প্যারসিটামল ও জিংক সিরাপ দিতে হবে। প্রথমে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা ঠিক হবে না এত গরু দুর্বল হয়ে মারা যেতে পারে। গরুকে প্রচুর পরিমাণে, ঘাস ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে।

সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাইদুর রহমান বলেন, খামারিদের বলা হয়েছে আক্রান্ত গরু আলাদা রাখতে, মশা, মাছি আক্রমণ থেকে বাসস্থান পরিষ্কার রাখতে এবং নিয়মিত টিকা দিতে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, লাম্পি ভাইরাসে মৃত্যুহার তুলনামূলকভাবে কম হলেও অর্থনৈতিক ক্ষতি বড়। দুধ উৎপাদন ও বাজারমূল্য হ্রাস পাওয়ায় খামারিরা চরম ক্ষতির মুখে পড়ছেন। আগাম প্রতিরোধ, টিকাদান এবং সচেতনতাই হতে পারে এই রোগ মোকাবিলার কার্যকর উপায় বলে মনে করছেন তারা।