অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন

এনবিআর এখনই ‘বিলুপ্ত’ হচ্ছে না

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজস্ব নীতি সংস্কার-সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটিসহ সব অংশীজনের সঙ্গে বিশদ আলোচনা করে জারি করা ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ প্রয়োজনীয় সংশোধন আনার পর অধ্যাদেশটি বাস্তবায়ন করা হবে। ফলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এখনই বিলুপ্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা গাজী তৌহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অধ্যাদেশটি জারি করার পর তা বাস্তবায়নের জন্য অনেক কাজ, যেমন দুটি বিভাগের নতুন করে সাংগঠনিক কাঠামো প্রণয়ন করা, পদ সৃজনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগ, বাস্তবায়ন অনুবিভাগ, সচিব কমিটি কর্তৃক চূড়ান্ত অনুমোদন প্রভৃতি সম্পাদন করতে হবে, যা যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ বিষয়।

তা ছাড়া দুটি নতুন বিভাগের জন্য অ্যালোকেশন অব বিজনেস এবং আয়কর আইন, কাস্টমস আইন, মূল্য সংযোজন আইন এবং এসব আইনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিধি ও প্রবিধানেও পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হবে। এ কাজগুলোও সময়সাপেক্ষ কাজ। যেহেতু এই কাজগুলো সম্পাদন না করে কোনোভাবে অধ্যাদেশটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়, সেহেতু জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এখনই বিলুপ্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

এদিকে গত ২০ মে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে অর্থ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন বলেন, রাজস্ব নীতি সংস্কার-সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটিসহ সব অংশীজনের সঙ্গে বিশদ আলোচনা করে জারি করা অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনার পর এটি বাস্তবায়ন করা হবে। এমন ফলপ্রসূ আলোচনার পর যে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে তা মেনে না নিয়ে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ আবার অসহযোগ আন্দোলনের যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, তার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই বলে মনে করে অর্থ মন্ত্রণালয়।

গত ১২ মে রাতে এনবিআর বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। অধ্যাদেশে এটি কার্যকর করার সময়ের ক্ষেত্রে বলা ছিল, পরে প্রজ্ঞাপন করে যে তারিখ নির্ধারণ করা হবে তখন থেকে এটি কার্যকর হবে।

তবে আয়কর ও শুল্ক ক্যাডারের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাদের ‘মতামত প্রতিফলিত’ না হওয়ার দাবি করে অধ্যাদেশটি বাতিলে ১২ দিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন তারা। সবশেষ তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর বৃহস্পতিবার স্মারকলিপিও দেয়া হয়েছে।

বিকালে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় গিয়ে সংগঠনের পক্ষে এনবিআরের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সহকারী একান্ত সচিব শাব্বীর আহমদের কাছে স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হলেনÑকর পরিদর্শক মুতাসিম বিল্লাহ, রাজস্ব কর্মকর্তা মো. শফিউল বসর, উপ কর কমিশনার শিহাবুল ইসলাম কুশল, অতিরিক্ত কর কমিশনার সেহেলা সিদ্দিকা ও অতিরিক্ত কমিশনার (কাস্টমস) হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার।

অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপিতে অভিযোগ করা হয়, ‘দেশের উন্নয়নের অক্সিজেন, রাজস্ব আহরণের প্রাণভোমরা এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশটি ‘অত্যন্ত গোপনে’, ‘অতি দ্রুততার’ সঙ্গে এবং প্রত্যাশী সংস্থা, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনকে অজ্ঞাত রেখে জারি করা হয়েছে।’

এর মধ্য দিয়ে একটি ‘নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা প্রভাবশালী মহলের স্বার্থকে অগ্রাধিকার’ দেয়া হয়েছে বলে এতে তুলে ধরা হয়।

স্মারকলিপিতে আরও লেখা হয়, ‘অধ্যাদেশে জাতীয় স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করে নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা প্রভাবশালী মহলের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। অধ্যাদেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাংগঠনিক স্বাতন্ত্র্য ও পেশাগত স্বকীয়তাকে অস্বীকার করা হয়েছে এবং রাষ্ট্রের অর্থনীতির মূল কাঠামো বিনষ্ট করে রাজস্ব আহরণের প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয়া হয়েছে। কার্যক্রমটি বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামোর সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। পাশাপাশি রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় অযাচিত হস্তক্ষেপের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় রাজস্ব ব্যবস্থাপনার সার্বিক কার্যকারিতা বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’