Print Date & Time : 5 July 2025 Saturday 4:55 am

কৃষকের জন্য ব্রি’র ২৪ ঘণ্টা হেল্পলাইন চালু

প্রতিনিধি, গাজীপুর : দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও টেকসই কৃষি ব্যবস্থাপনায় বড় এক পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)। ধান চাষে কৃষকদের সার্বক্ষণিক সহায়তা দিতে প্রতিষ্ঠানটি চালু করেছে ২৪ ঘণ্টার হেল্পলাইন বা কলসেন্টার সেবা। এখন থেকে দেশের যেকোনো প্রান্তের কৃষকরা ০৯৬৪৪৩০০৩০০ নম্বরে ফোন করে বিনা মূল্যে ধান চাষ-সংক্রান্ত পরামর্শ নিতে পারবেন, তাও সরাসরি বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে। গাজীপুরে ব্রি’র প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত আবহাওয়ার পূর্বাভাসভিত্তিক ‘কৃষি পরামর্শ প্রচারে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ভূমিকা’ শীর্ষক কর্মশালায় গতকাল বুধবার এই সেবার উদ্বোধন করা হয়।

কর্মশালায় প্রধান অতিথি ব্রি’র মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বলেন, আবহাওয়ার হঠাৎ পরিবর্তন, রোগবালাই বা সারের সঠিক প্রয়োগে ভুলের কারণে কৃষকরা বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এসব সমস্যা সমাধানে সময়মতো পরামর্শ নিশ্চিত করতে আমরা ধানের হেল্পলাইন চালু করেছি। এই কলসেন্টারে পরামর্শ দেবেন ব্রি’র এগ্রোমেট ল্যাবের প্রশিক্ষিত বিজ্ঞানীরা, যাদের অভিজ্ঞতা ও গবেষণা কৃষকদের বাস্তব সমস্যার সমাধানে কাজে লাগবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মহাপরিচালক।

ব্রি এ পর্যন্ত ১২১টি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে, যার মধ্যে আটটি হাইব্রিড। এই উদ্ভাবনের মাধ্যমে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম ধান উৎপাদনকারী দেশ। ব্রি উদ্ভাবিত ৩৭টি জাত বৈরী পরিবেশে, যেমন বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতায়ও উচ্চ ফলন দিতে সক্ষম।

ধান চাষ শুধু কৃষকের পেশা নয়, এটি আমাদের জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তার ভিত্তি বলে মন্তব্য করেন ড. খালেকুজ্জামান।

ব্রি’র পরিচালক (গবেষণা) ড. মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ১৯৭১ সালে যেখানে মাথাপিছু জমি ছিল ২০ শতাংশ, বর্তমানে তা নেমে এসেছে ১০ শতাংশে। অথচ খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে ৪ গুণ। দেশের ২৫ শতাংশ জমি এখনো পতিত পড়ে আছে, যা চাষের আওতায় আনলে উৎপাদন আরও বাড়ানো সম্ভব। তিনি জানান, ১৯৭১ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ব্রি ৩৭টি জাত উদ্ভাবন করলেও ১৯৯১ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত উদ্ভাবিত জাতের সংখ্যা ৮৪টি। বর্তমানে গবেষণার মাধ্যমে আয়রন, জিংক ও পুষ্টিসমৃদ্ধ জাতের উন্নয়নে কাজ করছে ব্রি।

ব্রি এগ্রোমেট ল্যাবের সমন্বয়ক ড. এবিএম জাহিদ হোসেন জানান, দেশে এখনো কৃষকদের জন্য কোনো জাতীয় ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডার তৈরি হয়নি। তবে ব্রি ইতোমধ্যে স্মার্ট এগ্রো-অ্যাডভাইজরি সিস্টেমের আওতায় ২৯ হাজার ৩৫৪ কৃষক ও সম্প্রসারণ কর্মীর তথ্যভাণ্ডার গড়ে তুলেছে। লক্ষ্য হলো তা বাড়িয়ে ১ দশমিক ৫ লাখে পৌঁছানো, যাতে কৃষকদের হাতে আরও দ্রুত সেবা পৌঁছে দেয়া যায়। তিনি বলেন, আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে চাষাবাদে শীত কমে যাচ্ছে, বর্ষার সময় পরিবর্তন হচ্ছে। এ বাস্তবতায় বিজ্ঞানভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও পরামর্শই হবে ভবিষ্যতের কৃষির মূল চাবিকাঠি।

বক্তারা জানান, ভবিষ্যতে ব্রি অ্যাপ এবং এসএমএসের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে আবহাওয়াভিত্তিক চাষাবাদের পরামর্শ পৌঁছে দেবে। গত ৫ বছরে ব্রি ৫০ হাজারের বেশি কৃষককে প্রশিক্ষণ দিয়েছে, যা তথ্যনির্ভর কৃষির জন্য একটি শক্ত ভিত গড়ে দিয়েছে।