এসডিজি অর্জনে গুরুত্ব পাক মানব উন্নয়ন

নদী ভাঙনে বিস্তীর্ণ জনপদ বিলীন, হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বেড়ে যাওয়া প্রভৃতির মধ্যে শুক্রবার একটি ভালো খবর পেল দেশবাসী। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মানব উন্নয়ন সূচকে (এইচডিআই) ১৮৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৩৬তম হয়েছে। এর মানে, তালিকার নিচের দিকেই রয়েছে বাংলাদেশ। তবে আশার কথা, ক্রমে এগোচ্ছে বাংলাদেশ। গত বছরের তুলনায় তিন ধাপ অগ্রগতি হয়েছে। এর আগের বছর বাংলাদেশ ছিল ১৪২তম অবস্থানে। চিকিৎসা, শিক্ষা, মাথাপিছু আয়, গড় আয়ুসহ বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে উন্নতির হিসাব ধরে মানুষের অগ্রগতি তুলে ধরতে ইউএনডিপি প্রতিটি দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আয় ও সম্পদের উৎস, বৈষম্য, লৈঙ্গিক সমতা, দারিদ্র্য, কর্মসংস্থান, নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও আর্থিক প্রবাহ, যোগাযোগ, পরিবেশের ভারসাম্য ও জনমিতির তথ্য বিশ্লেষণ করে থাকে। এসব মানদণ্ড মিলিয়ে এবার বাংলাদেশের এইচডিআই স্কোর দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৬০৮, যা গতবার ছিল শূন্য দশমিক ৫৭৯।
এ সূচকে আসা ১৮৯টি দেশকে অতি উন্নত, উন্নত, মধ্যম ও নিম্ন মানব উন্নয়নের স্তরে বিন্যস্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ রয়েছে নিম্ন মানব উন্নয়নের স্তরে। এ স্তরে থাকা আমাদের জন্য স্বস্তিকর নয়। সার্কভুক্ত দেশের মধ্যেও আমাদের অবস্থান ভালো নয়। প্রকাশিত সূচকে ভারত এক ধাপ এগিয়ে অবস্থান করছে ১৩০তম স্থানে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ নেপাল (১৪৯তম) ও পাকিস্তানের (১৫০তম) চেয়ে এগিয়ে থাকলেও শ্রীলঙ্কা (৭৬), মালদ্বীপ (১০১)
ও ভুটানের (১৩৪) চেয়ে পিছিয়ে। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের গড় মান ০.৬৩৮-এর ঊর্ধ্বে অবস্থান করছে ভারতের মান।
এইচডিআই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল ৭২ থেকে ৭২ দশমিক ৮ বছর হয়েছে; শিশুদের স্কুলে কাটানোর প্রত্যাশিত সময় গড়ে ১০ দশমিক ২ বছর থেকে ১১ দশমিক ৪ বছর হয়েছে এবং মাথাপিছু আয় (জিএনআই) বছরে তিন হাজার ৩৪১ ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে তিন হাজার ৬৭৭ ডলার।
এমন অর্জনে সন্তুষ্ট থাকলে কিন্তু দেশ এগোবে না। প্রাথমিক শিক্ষা ও মাধ্যমিক শিক্ষায় অগ্রগতি হয়েছে। এসব পরীক্ষার মান নিয়ে প্রায়ই কথা ওঠে। এ অবস্থায় ঝরে পড়া রোধ কিংবা নারীর এগিয়ে থাকার পাশাপাশি শিক্ষার মান উন্নয়ন করতে হবে। মাথাপিছু আয়ের সূচকে আমরা কিন্তু পিছিয়ে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর গড় মাথাপিছু আয় যেখানে ১০ হাজার ডলার (ক্রয়ক্ষমতা সমতাসম্পন্ন ডলারের পরিমাপে), ভারতে সেখানে তা ৬ হাজার ডলারÑআমাদের তা মাত্র সাড়ে ৩ হাজার ডলার। এটি বৃদ্ধিতে মনোযোগ বাড়াতে হবে।
মানব মূলধনও একটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ মূলধন। আমাদের প্রবৃদ্ধির একটি চালিকাশক্তি রেমিট্যান্সÑ দেশের বৈদেশিক আয়ের বড় একটি খাত। এটিকে এগিয়ে নিতে দক্ষ ও স্বাস্থ্যবান জনশক্তি তৈরি করতে হবে। এ লক্ষ্যে সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা জরুরি। অথচ এ খাতে বাংলাদেশের ব্যয় জাতীয় আয়ের ৩ শতাংশের কম; যেখানে উন্নয়নশীল দেশে এটা ৫ শতাংশের বেশি।
মানব উন্নয়ন সূচকের নিম্ন স্তরে আমাদের অবস্থান। এটিকে এক লাফে অতি উন্নত বা উন্নত করাও সম্ভব নয়, এগোতে হবে ধাপে ধাপে। সে ক্ষেত্রে লক্ষ্য থাকবে বর্তমান স্তরের পরের ধাপ মধ্যম মানব উন্নয়ন। এটি করতে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন বা লক্ষ্য নির্ধারণেরও প্রয়োজন নেই বলে মনে হয়। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জিত হলেই এইচডিআইয়ে আমাদের অগ্রগতি হবে। যেমন, ১৭টি এসডিজির মধ্যে রয়েছে দারিদ্র্য বিমোচন ও ক্ষুধামুক্তি, খাদ্যনিরাপত্তা ও উন্নত পুষ্টির লক্ষ্য অর্জন, স্বাস্থ্যকর জীবন নিশ্চিত করা, সব বয়সের সবার কল্যাণে কাজ করে যাওয়া, অন্তর্ভুক্তি ও সমতাভিত্তিক মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা, লিঙ্গসমতা অর্জন, নারীর ক্ষমতায়ন প্রভৃতি।
এইচডিআইয়ে এগিয়ে যেতে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ থেকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। সবার সংশ্লিষ্টতা, রাষ্ট্রের অঙ্গীকার ও প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় থাকলে আগামী বছরই মধ্যম মানব উন্নয়ন স্তরে উন্নীত হওয়া সম্ভব।