তিস্তা ও তিতাসের ওপর দুই সেতু উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: রংপুরে তিস্তা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিতাস নদীর ওপর নতুন দুটি সেতুর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা সেতু’ এবং ‘শেখ হাসিনা তিতাস সেতুর’ উদ্বোধন করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গঙ্গাচড়ায় সেতু নির্মাণের ফলে রংপুরের গঙ্গাচড়ার সঙ্গে লালমনিরহাটের যোগাযোগ সহজ হবে। আর ‘ওয়াই আকৃতিতে’ নির্মিত বাঞ্ছারামপুরের সেতুটি ওই এলাকার সঙ্গে হোমনা ও মুরাদনগরের যোগাযোগের পথ সুগম করবে। সেই সঙ্গে বাঞ্ছারামপুরের সঙ্গে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের যোগাযোগ তৈরি হবে।
তথ্যমতে, রাজধানী ঢাকা এবং বিভাগীয় শহর রংপুরের সঙ্গে লালমনিরহাটের কয়েকটি উপজেলার দূরত্ব কমিয়ে আনতে কাকিনা-মহিপুর এলাকায় দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে (এলজিইডি) ৮৫০ মিটার দীর্ঘ ও ফুটপাতসহ ৯ দশমিক ছয় মিটার প্রস্থের সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১২৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
সেতুর সংযোগ সড়কটি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের রুদ্রেশ্বর থেকে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের মহিপুর এলাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক মোড়ে যুক্ত হয়েছে। মূল সেতুর সংযোগ সড়কের কাকিনা অংশে তিনটি কালভার্ট ও দুটি ছোট সেতু রয়েছে। এছাড়া মূল সেতু ও পুরো সড়কজুড়ে রয়েছে আলোর ব্যবস্থা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিন উপজেলার সবাই সেতু চায়। তখন তাদের নিয়ে বসি আমি। পরে এমন ডিজাইন করা হয় যাতে সবার সুবিধা হয়। নতুন ডিজাইনে ওয়াই আকৃতির সেতু হলো, সব এলাকার মানুষ এখন সুবিধা পাবে।’
বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে দেশে সার্বিক উন্নয়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সারা দেশে যোগাযোগের নেটওয়ার্ক তৈরি করে দিচ্ছি। মানুষের যাতায়াত সহজ হচ্ছে। এর মধ্যে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে, দারিদ্র্য হ্রাস পাবে।’
অন্যদিকে শেখ হাসিনা তিতাস সেতুটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর ও কুমিল্লার হোমনা উপজেলার তিতাস নদীর ত্রিমোহনায় নির্মিত দেশের প্রথম ওয়াই আকৃতির সেতু। এটি চালুর ফলে বদলে যাবে বাঞ্ছারামপুর, হোমনা ও মুরাদনগর উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা। এলজিইডির তত্ত্বাবধানে ৯৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হয়েছে ৭৭১ দশমিক ২০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং আট দশমিক ১০ মিটার প্রস্থের এ সেতুটি। সেতুটিতে ২৫টি পিলার, ২৪টি দৃষ্টিনন্দন স্প্যান রয়েছে। তিতাস নদীর ওপর এ সেতু চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কের বিকল্প পথ হিসেবেও কুমিল্লা দিয়ে তা ব্যবহƒত হবে বলে জানায় এলজিইডি।
সেতুটি উদ্বোধনের আগেই গত বৃহস্পতিবার সংযোগ সড়কে ধস নামে। এর কারণ হিসেবে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের কথা বলেছেন প্রকৌশলীরা। সড়কে ধসে পড়া অংশের মেরামতের মধ্যেই সেতুটির উদ্বোধন হলো রোববার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার জনগণের চলাচলের সুবিধার্থে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করার লক্ষ্যে একটি উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। একটি দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা যত উন্নত হবে ততই জনগণের অর্থনৈতিক অবস্থারও উন্নয়ন ঘটবে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য বিমোচনকে মাথায় রেখেই সরকার দেশের সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে চলেছে।
তার সরকারের সময়ে দেশের উন্নয়নের উল্লেখযোগ্য চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ নৌকায় ভোট দিলেই কেবল উন্নয়নের দেখা পায় এবং এটা এখন প্রমাণিত যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই শুধু দেশের উন্নতি হয়। এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এ সময় রংপুর প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন। প্রাক্তন মন্ত্রী এবিএম তাজুল ইসলাম, স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা বাঞ্ছারামপুর প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে একদা উত্তরবঙ্গের অবহেলিত থাকার কথা স্মরণ করে বলেন, একসময় উত্তরবঙ্গের বহু এলাকার মতো গঙ্গাচড়াও মঙ্গাপ্রবণ এলাকা ছিল। কিন্তু তার সরকারের পরিকল্পিত উন্নয়নে আজ আর মঙ্গা নেই এ শব্দটিই যেন হারিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের শাসনেই দেশ থেকে মঙ্গা চির বিদায় নিয়েছে বলেন তিনি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এলজিআরডি ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান ভিডিও কনফারেন্স সঞ্চালনা করেন।