সিজার বাটস ও প্রাতিষ্ঠানিক অপরিহার্যতা

মিজানুর রহমান শেলী: বার্কশায়ারের সামনে আসছে আরেক শুভ সংবাদ। তারা কিছুদিনের জন্য ইকুইটি মার্কেটে কিছু ক্যাশ ছড়ানোর সুযোগ পেতে চলেছে। আমরা এ ব্যাপারে যেমন নিশ্চিত, তেমনি আত্মবিশ্বাসও রয়েছে চনমনে। কিন্তু গানের সুরে বর্তমান পরিস্থিতিটাকে আমার ব্যক্ত করতে হচ্ছে: ‘কে জানে কোথায় এবং কখন?’ হ্যাঁ, ইতোমধ্যে হয়তো কেউ আপনাকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে শোনাতে শুরু করবে যে, এই ‘মায়াময় বাজারে’র সত্যিকার খেদোš§ত্ত ভাগে কী কী ঘটতে চলেছে। তখন আপনি মনে মনে স্মরণ করতে থাকুন ওই গানটি, যে গানটি এই তো এখনই আমি গুনগুন করে গেয়ে নিলাম। সে গানের পরের পঙ্ক্তিখানি: ‘বোকারা তোমাকে যুক্তি দেয়, জ্ঞানীরা কখনোই চেষ্টা চালায় না’।
সময় সময় দামদর যখন ব্যবসা ও স্টক উভয়ের জন্য বৃদ্ধি পায়, তখন আমরা টেড উইলিয়ামের এক ধরনের শাস্ত্র থেকে কিছু জ্ঞান আহরণ করে আনার চেষ্টা করি। তার বই ‘দ্য সায়েন্স অব হিটিং’। এ বইয়ে টেড ৭৭টি সেলের মধ্যে বাঁকানো স্ট্রাইক জোনকে ব্যাখ্যা করেছেন। এর প্রতিটিই হলো একটি বেজবলের আকার। তার সবচেয়ে ভালো সেলের মধ্যে থাকা বলগুলোর দিকে দোদুল্যমানতা তাকে ব্যাট করার অনুমোদন দেয়Ñএটা তিনি জানতেন। তার সবচেয়ে খারাপ বিন্দুতে যদি পৌঁছে যায়, তবে ৪০০। এই বিন্দুটি স্ট্রাইক জোনের বাইরে নিচের কোণে অবস্থিত, যা তাকে .২৩০-এ নামিয়ে আনে। এটাকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করতে গেলে বলতে হবে, ফ্যাট পিচের জন্য অপেক্ষা করার মানেই হলো হল অব ফেইমের দিকে পরিভ্রমণ করা। আর এলোমেলো সুইং করার মানেই হলো আপনি কোনো সামান্য কিছুর জন্য টিকিট হাতে পেতে চলেছেন।
মোটের ওপর তারা যদি স্ট্রাইক জোনে থাকে, তবে আমরা দেখি ব্যবসায় ‘পিচগুলো’ এখন লোয়ার আউটসাইড কর্নার দখল করছে। এ মুহূর্তে যদি সুইং করি, তবে আমরা নি¤œ রিটার্নে আটকে যাব। আর যদি সবগুলো বলকেই ছেড়ে দিই, তবে সেখানে আর এমন কোনো নিশ্চয়তা অবশিষ্ট থাকবে না; যে বাকি বলগুলো আসবে, সেগুলো আমাদের খুব পছন্দসই হবে। সম্ভবত অতীতের সব আকর্ষণীয় দাম ছিল খুব বিকারগ্রস্ত বা অস্বাভাবিক; সেগুলো আজকের পুরো দামের সমান নয়। টেডের মতো নয়, বরং এটি ব্যতিক্রম: আমরা যদি তিনটি পিচে বাধা দিতে থাকি, তবে নিশ্চয়ই আমাদের কেউ ডাকবে না, আর সেটা হবে স্ট্রাইক জোনের শূন্যতা। তবে ওই পিচে দিনের পর দিন একা ব্যাট কাঁধে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার ধারণাটি নিশ্চয়ই কৌতুক-জাতীয় কিছু হবে না।
শুরুতেই রবার্ট ব্যাঞ্চলির একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করতে চাই: ‘একটি বালক একটি কুকুর পেলে তাকে বিশ্বস্ততা, অধ্যবসায় আর ঘুমানোর আগে তিনবার পায়চারি দেওয়ার শিক্ষা দিয়ে থাকে’। এটি হলো অভিজ্ঞতার ঘাটতি। তবে এটি নতুন কোনো চুক্তি করার আগে পুরোনো কোনো ভুলের ভালো মূল্যায়ন ধারণা বলতেই হবে। আর তাই আমাদের ২৫ বছরের ইতিহাসের দিকে একটু ভালো করে তাকিয়ে দেখা উচিত।
আমার প্রথম ভুল: অবশ্যই ছিল বার্কশায়ারের নিয়ন্ত্রণে খরিদ করা। যদিও আমি জানতাম এটা হলো একটি আশ্বাসজনক পোশাক প্রস্তুতকারী ব্যবসা। আমি এটা খরিদ করতে লোভে যেন কাতর ছিলাম। কেননা, তার দাম ছিল খুবই কম। একেবারেই সস্তা। আমার প্রথমকালের বছরগুলোয় এমন সস্তা দরের ক্রয়কর্মগুলো বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিল। যদিও এ সময়ে বার্কশায়ার একাই এসেছিল। তখন ১৯৬৫ সাল। তখন আমি সচেতন হয়ে গেলাম, আসলে আমার এ কৌশলটি আদতে কোনো আদর্শ কৌশল নয়।
যদি আপনি খুব নি¤œদরে একটি স্টক কিনে থাকেন, তাহলে সেখানে ব্যবসায়িক সৌভাগ্যগুলোর মধ্যে কিছু হেঁচকি তৈরি হবে, যাতে করে একটি মানসম্মত মুনাফার মাধ্যমে আপনার কাঁধে চাপানো ভার উগড়ে পড়বে। এমনকি দীর্ঘমেয়াদি ব্যবসায় নৈপুণ্য কখনও কখনও খুব ভয়ংকর রূপ ধারণ করে। আর আমি এটাকে বিনিয়োগের ‘সিজার বাঁট’ বা চুরুটের কুঁদা কৌশল বলে থাকি। রাস্তায় কোনো সিজার বাঁট কুড়িয়ে পাওয়া যেতে পারে। তাতে খুব সামান্য পরিমাণ পাফ অবশিষ্ট থাকে, যা দিয়ে খুব বেশি পরিমাণ ধোঁয়া বের হয় না; কিন্তু ‘দরকষাকষির ক্রয়ে’ এ সামান্য পাফেই অনেক মুনাফা চলে আসতে পারে। যতক্ষণ না আপনি একজন তারলীকরণকারী, ততক্ষণ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যবসার বিভিন্ন খরিদ প্রক্রিয়াগুলো অর্থহীন। প্রথমত, মোটের ওপর এ রকম হরিলুট হয়ে যাওয়ার জন্য মূল চুক্তি বা বার্গেইন দর কলুর বলদের মতো অপব্যবহƒত হবে না। কোনো একটি কঠিন ব্যবসায় বিভিন্ন সংকট সমাধান হয়ে যাওয়ার পাটাতনের ওপর দাঁড়িয়ে কোনো নতুন সমস্যা সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়ে যায় না। একটি রান্নাঘরে কেবল একটি মাত্র তেলাপোকা থাকবেÑএমন কখনোই ঘটা সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, কোনো প্রাথমিক সুবিধা যা আপনি কোনোভাবে নিশ্চিত করেন, তা ওই ব্যবসায় আহরিত নিচু মানের রিটার্নে ক্ষয়িভূত হতে থাকে। উদাহরণ হিসেবে বলতে হয়, ধরুন আপনি আট মিলিয়ন ডলার দিয়ে একটি ব্যবসা খরিদ করেছেন। এটা ১০ মিলিয়ন ডলারে বিক্রিও হতে পারে; আবার তারলীকরণও করা যেতে পারে। আর আপনি যে কোনো একটি কাজ সম্পন্ন করলেন, এতে হয়তো আপনি খুব লাভ করেছেন বলে খোশমেজাজ অনুভব করছেন। কিন্তু তা নয়, তাতে করে আপনার বিনিয়োগ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়বে। যদি ১০ বছর পর আপনি এই ১০ মিলিয়ন ডলারে তা বিক্রি করেন অথচ এই অন্তর্বর্তীকালে আপনি খুব সামান্য শতকরা হারে মুনাফা ঘরে তুলে থাকেন। একটি চমৎকার ব্যবসার জন্য সময় তার অন্তরঙ্গ বন্ধু। তবে মাঝারি ব্যবসার জন্য সময় হলো শত্রু।
আবার আপনি ভাবতে পারেন এই মূলনীতি অকাট্য দলিল। কিন্তু আমাকে এটা খুব কাঠিন্যের মধ্য দিয়ে শিখতে হয়েছিল। কার্যত আমি এটা কয়েকবারের অভিজ্ঞতায় শিখতে বাধ্য হয়েছি। বার্কশায়ার খরিদের খুব কম সময় পরই আমি বাল্পিমোর ডিপার্টমেন্ট স্টোর অধিগ্রহণ করি। আরও খরিদ করি হৎচাইল্ড, কোন। এগুলো ডাইভারসিফাইড রিটেইলিং নামের এক কোম্পানির মাধ্যমে কিনেছিলাম। পরবর্তীকালে এগুলো বার্কশায়ারের মধ্যে একীভূত হয়ে গেছে। আমি এটাকে বুক ভ্যালুর চেয়ে বিশাল কম মূল্যে বা ছাড়ে খরিদ করি। এই কোম্পানিগুলোর লোকবল ছিল এক কথায় বলতে হবে প্রথম শ্রেণির। আবার এই লেনদেনে আমরা কিছু অতিরিক্ত নথিবহির্ভূত সম্পদও লাভ করেছিলাম।

এই দর্শন রচনাবলি সম্পাদনা করেছেন লওরেন্স এ. কানিংহ্যাম
অনুবাদক: গবেষক, শেয়ার বিজ