নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্বের কোনো পুঁজিবাজারে গুজবের ভিত্তিতে বিনিয়োগে ধারাবাহিক মুনাফা করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের পুঁজিবাজারেও এটি সম্ভব নয়। গুজবে কান দিয়ে শেয়ার কিনলে হয়তো একটি নির্দিষ্ট সময়ে লাভ করা যায়; কিন্তু এক সময় এসে ক্ষতির আশঙ্কাই তৈরি হয় বেশি। এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কর্মকর্তারা। গতকাল বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এমন কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ আহমেদ বলেন, গুজবে বিনিয়োগ করলেই মুনাফা হবেÑএমনটি ভাবা ঠিক নয়। বিশ্বের কোথাও গুজবের বিনিয়োগে মুনাফা করা সম্ভব নয়। আর এমন বিনিয়োগে বাংলাদেশেও মুনাফা করা সম্ভব নয়। এ জাতীয় বিনিয়োগের একটি লেনদেনে মুনাফা করা গেলেও দিনশেষে লোকসান হয়।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে রুলস, রেগুলেশন, করপোরেট গভর্ন্যান্স গাইডলাইনস (সিজিজি) পরিপালনে অতিরিক্ত লোকবল দরকার হয়। এছাড়া পুঁজিবাজারে এলে কোম্পানিগুলোকে অনেক জবাবদিহিতার মধ্যে আসতে হয়, যেটাকে যুক্তি দেখিয়ে অনেক উদ্যোক্তা পুঁজিবাজারে আসতে চান না। এটা তাদের ভুল ধারণা। আমাদের দেশে পুঁজিবাজারে আসার মাধ্যমে একটি কোম্পানির যে পরিমাণ ভ্যালুয়েশন তৈরি হয়, সেটি পৃথিবীর অন্য কোথাও সম্ভব নয়। এ বিষয়টি হয়তো উদ্যোক্তারা এখন বুঝতে পারছেন না। তবে ভবিষ্যতে তারা বুঝতে পারবেন। আর রুলস, রেগুলেশন পরিপালনে একটি কোম্পানির ক্ষতি নয়, শৃঙ্খলা বজায় থাকে বলে জানান তিনি
অনুষ্ঠানে নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান বলেন, শেয়ারে ঝুঁকির পরিমাণ বোঝানোর জন্য তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে যোগ্যতা অনুযায়ী ‘এ’ ‘বি’ ‘এন’ ও ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে সাজানো হয়েছে, যা পৃথিবীর অনেক দেশেই নেই। বিনিয়োগকারীদের সুবিধার জন্যই আমরা এটা করেছি।
তিনি বলেন, ‘জেড’ ক্যাটেগরির শেয়ার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হলেও বিনিয়োগকারীদের এমন ক্যাটেগরিতেই বেশি আগ্রহ। এছাড়া ‘এ’ ক্যাটেগরির তুলনামূলক দুর্বল কোম্পানিতে তাদের আগ্রহ বেশি। বিএসইসি একটি সিস্টেমের মধ্য দিয়ে পুঁজিবাজারের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ন্ত্রণ করে। চাইলেই প্রতিদিন শেয়ারদর বৃদ্ধি নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় না। তাহলে আবার বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আর পুঁজিবাজারে সব সময় একটি গ্রুপ থাকে, যারা টার্গেট করে কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে।
সাইফুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আনুপাতিক হার বেশি। যাদের এককভাবে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা ও প্রবণতা নেই, এরা সাধারণত গুজবভিত্তিক ও বড় বিনিয়োগকারীদের অনুসরণ করে। যাতে তাদের বিনিয়োগ থেকে মুনাফা করা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এমনকি তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মাহবুব আলম ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
প্রসঙ্গত, আগামী ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ-১৮’। যা চলবে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত। সাইফুর রহমান জানান, আগামী ৭ থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপী ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ-১৮’ উদ্যাপন করা হবে। ৭ অক্টোবর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ’ উদ্বোধন করবেন। এতে বিশেষ অতিথি থাকবেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান।