অপকৌশলে এলপিজির দাম বৃদ্ধি ঠেকান

বর্তমানে বিভিন্ন শহরের বাসাবাড়িতে পাইপলাইনে রান্নার গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এ ব্যবস্থায় অনেক বেশি অপচয় হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই রান্নায় গ্যাস ব্যবহারের আধুনিক পদ্ধতি হিসেবে আবির্ভাব হয়েছে সিলিন্ডারে লিকুইফায়েড পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) বিতরণ ব্যবস্থার। গ্রাহকও একে সানন্দে গ্রহণ করেছেন। এ ব্যবস্থায় চাহিদা বাড়ছে জ্বালানিটির। এ সুযোগে উচ্চমুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে এর সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো। প্রায় খেয়াল-খুশিমতো দাম বাড়াচ্ছে তারা। এতে গ্রাহকের গলা কাটা পড়লেও মুনাফালোভী কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
শেয়ার বিজে গতকাল ‘ঘোষণা ছাড়াই দাম বাড়ল এলপিজি সিলিন্ডারের’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এর তথ্যমতে, ১২ কেজি ওজনের এক সিলিন্ডার গ্যাসের দাম ১০০ টাকা হারে বেড়েছে। তবে এমন কৌশলে বাড়ানো হয়েছে যে, কোম্পানিকে দাম বৃদ্ধির জন্য দায়ী করা কঠিন। কোম্পানি ঘোষিত দাম আগেরটি বহাল রেখে ডিলারদের কমিশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আগে ১২ কেজির সিলিন্ডারে পুনরায় গ্যাস ভরতে ডিলাররা নিতেন ৯৯৫ টাকা। খুচরা বিক্রেতারা তা বিক্রি করতেন এক হাজার ৫০ টাকায়। আর ডিলাররা কোম্পানির কাছ থেকে যে দামে কিনতেন, এর মধ্য থেকে তাদের ১০০ টাকা কমিশন দেওয়া হতো। সম্প্রতি সব এলপিজি সরবরাহকারী কোম্পানি সেলফোনে এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়েছে, তারা কোম্পানির পক্ষ থেকে কোনো ইনসেনটিভ দেবে না। অর্থাৎ কোম্পানির দাম আগেরটাই বহাল থাকল। কিন্তু ডিলারের কমিশন বন্ধ করে দেওয়ায় তাদের সিলিন্ডারপ্রতি ১০০ টাকা মুনাফা বেড়ে গেল। এদিকে ডিলার মুনাফা ঠিক রাখতে তার ১০০ টাকা কমিশন খুচরা বিক্রেতার কাছ থেকে নিচ্ছেন। খুচরা বিক্রেতাও আনুপাতিক হারে গ্রাহকের কাছ থেকে ১০০ টাকা বাড়তি নিচ্ছেন। এ প্রক্রিয়ায় সরবরাহকারী কোম্পানি সিলিন্ডারপ্রতি ১০০ টাকা বেশি মুনাফা করছে।
এটি এক ধরনের অপকৌশল। কিন্তু দেশে এসব অপকৌশল প্রতিরোধে কোনো কর্তৃপক্ষ না থাকায় বাজারের সর্বোত্তম সুফল তুলে নিচ্ছে বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। এক্ষেত্রে সাধারণ ভোক্তার স্বার্থরক্ষায় একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র প্রাইস কমিশন থাকা জরুরি, যেটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সেবা ও পণ্যের এমন অবিবেচনাপ্রসূত দাম বৃদ্ধি রোধে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনও (বিপিসি) সিলিন্ডারে করে এলপিজি বিক্রি করে। এক্ষেত্রে ১২ কেজি ওজনের এক সিলিন্ডার রিফিলের দাম নির্ধারণ করা আছে ৭৫০ টাকা। কিন্তু বেসরকারি যেসব প্রতিষ্ঠান একই জ্বালানি সরবরাহ করছে, তাদের ক্ষেত্রে দাম নির্ধারিত নেই। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে পণ্যের দাম নির্ধারণের সুযোগ কোম্পানির হাতে থাকতেই পারে। তার মানে এ নয় যে, তাদের ওপর রাষ্ট্রীয় কোনো কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। কোনো পণ্যের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে পূর্বঘোষণাও বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের উচিত বিষয়টি দেখভাল করা।