দুর্নীতি প্রতিরোধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নিন

আমাদের দেশের জন্য যে বিষয়গুলো বড় হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে, এর মধ্যে দুর্নীতি অন্যতম। প্রতি বছর দুর্নীতিবিষয়ক যেসব বৈশ্বিক র‌্যাংকিং হচ্ছে তার মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম সারিতে থাকছে। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, বিভিন্ন সরকারি দফতরে এ ধরনের ঘুষ, অনিয়ম, দুর্নীতি রীতিমতো নিয়মে পরিণত হয়েছে। ফলে নাভিশ্বাস উঠছে মানুষের। সর্বশেষ স্বাস্থ্য অধিদফতরের অ্যাকাউন্টস অফিসার হয়েও হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়ে ওঠা আবজাল হোসেনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মাত্র ৩০ হাজার টাকা বেতনের একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে এত অর্থসম্পদের মালিক কীভাবে হওয়া সম্ভব হতে পারে, তা সম্ভবত ধারণারও বাইরে।
গত কয়েকদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, রাজধানীর অভিজাত এলাকা উত্তরা, গুলশান, বনানী, বারিধারাসহ সারা দেশে অসংখ্য প্লট-বাড়ি রয়েছে আবজাল হোসেন ও তার স্ত্রী রুবিনা খানমের নামে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন কানাডা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রেও। ২৪ বছরের চাকরি জীবনে হাজার কোটি টাকার সম্পদ অর্জন তার বলে গণমাধ্যমে জানানো হচ্ছে। চলেন দামি গাড়িতে। সরকারি একজন কর্মচারীর এত সম্পদের মালিক হয়ে ওঠা শুধু রহস্যজনকই নয়, অসম্ভব বলেই আমরা মনে করি।
আবজাল হোসেনের সম্পদের বিষয়ে ইতোমধ্যে অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পাশাপাশি স্ত্রীসহ দেশ ছাড়ায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। দুদকের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ ব্যবস্থার পাশাপাশি তার সব সম্পদের বিষয়ে দ্রুত এবং কার্যকর অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা দুদক গ্রহণ করবে বলে আমরা আশা করি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনানুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে এমন ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি, যাতে ভবিষ্যতে সরকারি কিংবা বেসরকারি পর্যায়ে কেউই কোনো ধরনের দুর্নীতি করার সাহস না পায়।
অন্যদিকে গতকালের দৈনিক শেয়ার বিজে ‘চট্টগ্রামে পূবালী ব্যাংকের তিন কর্মকর্তা আটক’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থ আত্মসাতের দায়ে পূবালী ব্যাংকের চট্টগ্রামের চকবাজার শাখার তিন কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে। একজন গ্রাহকের টাকা পরিকল্পিতভাবে ব্যবসায়ী ও ব্যাংকার মিলে ভুয়া লেনদেন দেখিয়ে আত্মসাৎ করেন তারা। ব্যাংক খাতে ছোট-বড় অসংখ্য দুর্নীতির কারণে মানুষের আস্থা তলানিতে পৌঁছেছে। এভাবে প্রতিনিয়ত দুর্নীতি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন খাতে। দ্রুত এর অবসান না হলে দেশের আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বিপর্যয় নেমে আসবে বলে আমরা মনে করি। এক্ষেত্রে দুদক, সরকারি বিভিন্ন দফতর, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান আরও কঠোর ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা আশা করব। এছাড়া সাধারণ মানুষের আরও সচেতন ও দায়িত্বশীল হওয়া জরুরি।