মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: বিদায়ী বছরে আইপিও’র শেয়ার থেকে বাজিমাত মুনাফা করেছেন লটারি বিজয়ীরা। যারা আইপিও’র শেয়ার পেয়েছেন, তারা প্রথম দিনেই এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার থেকে নজরকাড়া মুনাফা করেছেন। প্রথম দিনে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর বেড়েছে ৮২ থেকে ৩৮৪ শতাংশ। বছর শেষেও আইপিও’র মাধ্যমে বাজারে আসা বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর অভিষেক দিনের মতো বাড়তে দেখা যায়।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮ সালে পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু করা কোম্পানিগুলো হচ্ছে অ্যাডভেন্ট ফার্মা, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যাল, ইন্ট্রাকো, এসকে ট্রিমস, কুইন সাউথ টেক্সটাইল, কাট্টলী টেক্সটাইল, এমএল ডায়িং, ভিএফএস থ্রেড, আমান কটন ও বসুন্ধরা পেপার।
গত বছর লেনদেন শুরু হওয়া কোম্পানির মধ্যে প্রথম কার্যদিবসে সবচেয়ে বেশি দর বাড়তে দেখা যায় অ্যাডভেন্ট ফার্মার শেয়ারের। প্রথম দিন ১০ টাকা অভিহিত দরের এ শেয়ার ৪৮ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হয়। শতাংশের হিসাবে প্রতিটি শেয়ারদর বাড়ে ৩৮৪ শতাংশ।
পরের অবস্থানে ছিল ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিটিক্যাল। প্রথমদিনে এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর বাড়ে ৩৪৩ শতাংশ। ১০ টাকার শেয়ার লেনদেন হয় ৪৪ টাকা ৩০ পয়সায়। একইভাবে ইন্ট্রাকোর শেয়ারদর বাড়ে ৩৩৬ শতাংশ। প্রথম দিনে এ শেয়ার লেনদেন হয় ৪৩ টাকা ৬০ পয়সায়।
তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে কুইন সাউথ টেক্সটাইলের শেয়ার প্রথম দিনে লেনদেন হয় ৪০ টাকায়। শতাংশের হিসাবে দর বাড়ে ৩০৯ শতাংশ। একইভাবে প্রথম দিনে ভিএফএস থ্রেডের শেয়ারদর ২২৫ শতাংশ, সিলভা ফার্মাসিটিক্যালের ১৯০ শতাংশ, কাট্টলী টেক্সটাইলের ১৪৪ শতাংশ, এমএল ডায়িংয়ের ১৪১ শতাংশ, আমান কটনের ১০৬ শতাংশ এবং বসুন্ধরা পেপার মিলের শেয়ারদর বাড়ে ৮২ শতাংশ।
বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে বাজার বিশ্লেষকরা বলেন, পুঁজিবাজারে যেসব কোম্পানি নতুন তালিকাভুক্ত হয় এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতি বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা বেশি থাকে। নতুন কোম্পানি ভালো লভ্যাংশ দেবে বলে প্রত্যাশা থাকে বিনিয়োগকারীদের। সে জন্য এসব কোম্পানিতে নজর থাকে বিনিয়োগকারীদের। কারণ নতুন একটা প্রতিষ্ঠানের গতিবিধি জানতে বিনিয়োগকারীদের কমপক্ষে এক বছর অপেক্ষা করতে হয়। লভ্যাংশ প্রদানের পরই কেবল প্রতিষ্ঠানের গতিবিধি বোঝা যায়। তাছাড়া কোনো কোম্পানির আর্থিক অবস্থার কতটা পরিবর্তন হবে, সেটা জানতেও সময় লাগে। কিন্তু নতুন প্রতিষ্ঠানের প্রতি সবারই ইতিবাচক মনোভাব দেখা যায়। সেই জন্য তারা এসব শেয়ার ক্রয়ে আগ্রহ দেখান। যার ফলে দর বাড়ে।
এদিকে গত বছরের বেশিরভাগ সময়ই সেকেন্ডারি মার্কেটে মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করে। সে কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা নতুন কোম্পানির দিকে ঝুঁকে পড়েন বলে মন্তব্য করেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।
জানতে চাইলে ডিবিএ’র প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী বলেন, সবসময়ই নতুন কোম্পানির প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেশি দেখা যায়। সে জন্য এসব শেয়ারের দাম বাড়ে। তবে আমার মতে, কোম্পানির নতুন-পুরোনো যেমনই হোক না কেন, তার আগের এবং বর্তমান অবস্থা কেমন তা জেনেই বিনিয়োগ করা উচিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর একজন পরিচালক বলেন, প্রথম দিনে আইপিও’র শেয়ার তিন থেকে চার বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। গত বছর যেসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে তার সবগুলোই খুব ভালো কোম্পানি; তা বলা যায় না। এসব কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি আরও বেশি শক্তিশালী হলে দর আরও বেশি বাড়লেও অবাক হওয়ার কিছু ছিল না।
তালিকাভুক্ত এসব কোম্পানির মধ্যে প্রথম বছরে ১০ শতাংশ করে লভ্যাংশ প্রদান করে ইন্ট্রাকো, ইন্দো-বাংলা, কাট্টলী টেক্সটাইল ও আমান কটন। ১২ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করে অ্যাডভেন্ট ফার্মা। এছাড়া ২০ শতাংশ করে লভ্যাংশ দেয় এমএল ডায়িং ও বসুন্ধরা পেপার।