শাড়িতে কারচুপি নকশা করা পোশাকের কদর রয়েছে দেশজুড়ে। এ কাজের সঙ্গে কিশোরগঞ্জের দুই গ্রামের প্রায় ৮০০ পরিবার জড়িত। এর মধ্য দিয়ে পরিবারগুলোর সদস্যরা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদল ইউনিয়নের ধলিয়ারচর ও নধার গ্রামের সহস্রাধিক নারী শাড়িতে কারচুপি নকশা করে তাদের পরিবারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন। অভাবের কারণে একসময় কলহ ও অশান্তিতে থাকা বিষন্ন মুখগুলোয় এখন স্বস্তির হাসি দেখা যায়। সুচের ফোঁড়ে নিপুণ হাতে শাড়ির জমিন তারা ফুটিয়ে তোলেন।
ক’বছর আগেও এ দুই গ্রামের চিত্র এমন ছিল না। কায়িক শ্রমই ছিল এখানকার পুরুষদের রোজগারের একমাত্র উপায়। জীবন-জীবিকার তাগিদে এখানকার নারীরা তাই যুক্ত হন কারচুপি নকশার কাজে। শুরুতে হাতেগোনা কয়েকজন এ কাজে যুক্ত হলেও বর্তমানে এখানের প্রায় সব বাড়ির নারী বাড়তি রোজগারের আশায় অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে এ কাজটি করছেন। শাড়ির জমিনে পুঁতি, চুমকি ও রঙবেরঙের পাথরের নকশার কাজ তাদের নিদারুণ অভাবী জীবনে এনে দিয়েছে সুখ ও সচ্ছলতা। স্বামী-স্ত্রীর সম্মিলিত আয়ে এখন পরিবারগুলো আগের তুলনায় ভালো সময় পার করছে।
বছরজুড়ে মহিলারা সংসারের দৈনন্দিন কাজ সেরে পুঁতি, চুমকি ও পাথর নিয়ে বসে পড়েন। অবসর কিংবা স্কুল ছুটির পর অভিজ্ঞ এসব কারিগরের পাশাপাশি কিশোরী-তরুণীরাও এ কাজে যোগ দেয়।
কিশোরগঞ্জ জেলা সদর থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত ধলিয়ারচর ও নধার গ্রামের অবস্থান। সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় সব বাড়ির উঠানে শাড়ি পেতে নারীরা কারচুপি নকশায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। কাঠের ফ্রেমে শাড়ি আটকে মনের মাধুরী মিশিয়ে পুঁতি, চুমকি আর পাথর বসিয়ে যাচ্ছেন তারা। কারচুপি শিল্পীরা নিজেদের জীবন-জীবিকার তাগিদে এ পেশায় সম্পৃক্ত হলেও এ শিল্পটির বিকাশে কোনো উদ্যোগ কিংবা পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছেন না তারা।
ধলিয়ারচর গ্রামের হারেছা বেগম, নাছিমা খাতুন, জেসমিন আরা, পারভীন বানু, খায়রুন্নেছা শিকদার, রিনা বেগমসহ আরও অনেকে জানান, বড় ব্যবসায়ীরা তাদের শাড়ি, চুমকি, পুঁতি, পাথরসহ সব ধরনের জিনিস সরবরাহ করেন। তারা কেবল শ্রম দেন।
একটি শাড়ির নকশা শেষ করতে সাত থেকে ১০ দিন লাগে। শাড়িপ্রতি তারা ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা মজুরি পান। তারা অভিযোগ করে বলেন, ব্যবসায়ীরা তাদের ঠকাচ্ছেন। একটি শাড়িতে এত কম টাকায় পোষায় না। একেকটি শাড়ি বাজারে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ব্যবসায়ীরা তাদের কারুকাজ করা এসব শাড়ি বিক্রি করে অধিক লাভবান হচ্ছেন।
সাজন আহম্মেদ পাপন