নাইমুর রহমান, নাটোর: নাটোরের বিভিন্ন উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত হচ্ছে ফুল। উপজেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে সিংড়া, লালপুর ও বাগাতিপাড়া। এর মধ্যে সিংড়ায় ০.১৩ হেক্টর, লালপুরে ৬২ হেক্টর আর বাগাতিপাড়ায় ৫.২৬ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হচ্ছে। ফুল চাষ করে একদিকে যেমন বেকাররা নিজেদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন করছেন, সে সঙ্গে অনেকের কর্মসংস্থানও হয়েছে। নাটোরে উৎপাদিত ফুলের মধ্যে রজনীগন্ধা, গোলাপ, গাঁদা, কাঠবেলি, চেরি ও চায়না বেলি ফুল অন্যতম।
নাটোর জেলার ৭৬ চাষি জমি লিজ নিয়ে বিভিন্ন জাতের ফুল চাষ করে স্বাবলম্বী হলেও সুনাম অর্জন করেছে নাটোরের চায়না বেলি ফুল। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নাটোরের উৎপাদিত বিভিন্ন ফুলের সঙ্গে এ চায়না বেলি শোভা পাচ্ছে বাসরঘর, বিয়ের গাড়িসহ বিভিন্ন উৎসবে। বাণিজ্যিকভাবে নাটোরে ফুল চাষের ইতিহাস প্রায় ৩৫ বছর হলেও সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন উপজেলায় এর সম্প্রসারণ ঘটছে। নাটোরের ফুলচাষিরা ঢাকা, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, যশোর, দিনাজপুর, খুলনাসহ বিভিন্ন জেলায় তাদের উৎপাদিত ফুল বিক্রি করছেন। পাশাপাশি তারা ফুলের বীজও বাজারজাত করছেন।
বাগাতিপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাবলু কুমার সূত্রধর জানান, উপজেলার বাগাতিপাড়া ইউনিয়নের ঠেঙ্গামারা এলাকায় জাহাঙ্গীর ও রবিউল প্রথম ফুল চাষ শুরু করেন। এরপর অন্যান্য যুবক ফুল চাষে আগ্রহী হন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১৫ বছর থেকে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ করা হচ্ছে। ফুল চাষে সফলতা আনতে চাষিদের উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ট্রেনিং, মনিটরিং ও কীট দমনে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়। আগে এক বিঘা জমিতে ধানসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করে যেখানে একজন কৃষক মাত্র চার-পাঁচ হাজার টাকা লাভ করতেন। বর্তমানে ফুল চাষ করে বিঘাপ্রতি তাদের লাভের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে প্রায় এক লাখ টাকা। এ লাভের বিষয়টি জানতে পেরে কৃষকরা এখন একের পর এক ফুল চাষে ঝুঁকছেন। শুধু ফুল চাষই নয় বরং কৃষকরা এখন ফুলের বীজও উৎপাদন করে বাজারজাত করছেন।
লালপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুল ইসলাম খান জানান, লালপুর উপজেলা মূলত উষ্ণ এলাকা হওয়ায় এখানে আখ ছাড়া তেমন কোনো ফসল উৎপন্ন হতো না। এখানে পদ্মার চরও রয়েছে। এ কারণে বেশ কিছু জমি রয়েছে, যা অনুর্বর। দীর্ঘদিন থেকে জমিগুলো পরিত্যক্ত ছিল। উপজেলা কৃষি বিভাগের সহায়তায় বেশ কজন যুবক এখন এসব জমিতে ফুল চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
ফসলি জমি লিজ নিয়েও এখানকার বেকার যুবকরা এখন বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ করছেন। তবে আখের চেয়ে ফুল চাষ করে চাষিরা প্রায় তিনগুণ বেশি লাভবান হচ্ছেন। ফুল চাষে সম্পৃক্ত হয়ে শত শত মহিলাও স্বাবলম্বী হচ্ছেন বলে দাবি করেন তিনি।
লালপুর উপজেলার ঈশ্বরদী ইউনিয়নের নবীনগর গ্রামের আফজাল হোসেন বলেন, প্রায় ৩৫ বছর আগে লালপুর উপজেলায় তিনিই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ শুরু করেন। প্রথমে তিনি ১৫ হাজার টাকা বছর হিসেবে ২০ বছরের চুক্তিতে তিন বিঘা জমি লিজ নিয়ে ফুলের চাষ শুরু করেন। বর্তমানে তিনি প্রায় ৪০ বিঘা জমিতে ফুল চাষ করছেন। তার দেখাদেখি অনেকেই এখন বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ করছেন। আর বাগানের ফুল নিয়ে মালা গেঁথে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন উপজেলার প্রায় ১০ হাজার মহিলা। মহিলারা তাদের সংসারের কাজের ফাঁকে প্রতিটি ফুলের মালা এক টাকা হিসেবে গেঁথে প্রতিদিন গড়ে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা আয় করছেন। তার বাগানের ফুল ঢাকার শাহবাগ, আগারগাঁও ছাড়াও রাজশাহী, বগুড়া, সিলেট, নওগাঁ প্রভৃতি জেলায় বিক্রি হয়।
নাটোর শহরের ছায়াবাণী সিনেমা হল মোড়ের ফুল বিক্রেতা মাহবুব আলম সজল জানান, তিনি রজনীগন্ধা স্টিক ১৫ টাকা, গোলাপ ২০-৩০ টাকা ও গাঁদা চেইন ৫০-৬০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।
ফুল বিক্রেতা শাহাদত হোসেন জানান, তিনি প্রতিদিন গড়ে ১৫০টি গোলাপ ও ৫০টি রজনীগন্ধা বিক্রি করেন।
নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক রফিকুল ইসলাম জানান, কৃষকদের বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষে উৎসাহিত করার জন্য কৃষি বিভাগ ইতোমধ্যে তিনটি উপজেলায় কাজ শুরু করেছে। অল্প সময়ের মধ্যে সমগ্র নাটোরে ফুল চাষের সম্ভাব্যতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।