সেন্ট্রাল ফার্মার ৫ পরিচালকের সব শেয়ার কিনছে আলিফ গ্রুপ

নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ‘সেন্ট্রাল ফার্মা’র শীর্ষ পাঁচ শেয়ারধারী পরিচালকের সব শেয়ার কিনবে ব্যবসায়ী আজিজুল ইসলামের মালিকানাধীন আলিফ গ্রুপ। এজন্য সেন্ট্রাল ফার্মার পাঁচ পরিচালকের সঙ্গে আলিফ গ্রুপের একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেন্ট্রাল ফার্মা পরিচালনা পর্ষদ। গতকাল বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, চুক্তি স্বাক্ষরের পর সেন্ট্রাল ফার্মার পরিচালকরা শিগগিরই ব্লক মার্কেটে শেয়ারগুলো আলিফ গ্রুপের কাছে বিক্রি করবেন। শেয়ার বিক্রি সম্পন্ন হলে সেন্ট্রাল ফার্মার পর্ষদে নতুন চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সেন্ট্রাল ফার্মা।

কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, সেন্ট্রাল ফার্মার পর্ষদের পাঁচ উদ্যোক্তা-পরিচালক হলেনÑ চেয়ারম্যান মোরশেদা আহমেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনসুর আহমেদ, মো. রোকনুজ্জামান, নাসিমা আকতার ও পারভেজ আহমেদ ভুঁইয়া। তাদের হাতে কোম্পানিটির মোট ৩০ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। এ শেয়ারগুলো আলিফ গ্রুপের কাছে বিক্রি করবেন তারা।

এদিকে কত কয়েকদিন ধরে সেন্ট্রাল ফার্মার শেয়ারদর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। কোম্পানিটির শেয়ারের অস্বাভাবিক দর বাড়ার পেছনে কারণ জানতে চেয়ে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি নোটিস পাঠায় ডিএসই। ১৯ ফেব্রুয়ারি অস্বাভাবিক দর বাড়ার পেছনে ‘কোনো কারণ নেই’ বলে ডিএসইকে জানিয়ে দেয় কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ৩০ জানুয়ারি থেকে কোম্পানিটির শেয়ারদর টানা বেড়ে চলেছে। আলোচিত সময়ে শেয়ারটির দর ২৫ টাকা থেকে বেড়ে সর্বশেষ ৩৪ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে। শেয়ারটির এই দর বাড়াকে অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন ডিএসই কর্তৃপক্ষ।

এদিকে কোম্পানির পক্ষ থেকে ‘কোনো মূল্যসংবেদনশীল তথ্য নেই’ জানানোর মাত্র দুই কার্যদিবস পরে পরিচালকদের শেয়ার বিক্রির ঘোষণাটি এক ধরনের কারসাজি বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।

তাদের মতে, কোনো ধরনের মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ ছাড়াই অস্বাভাবিকভাবে শেয়ারদর বাড়িয়ে পরিচালকরা লাভবান হওয়ার চেষ্টা করেছেন। এরপর ডিএসই কর্তৃপক্ষ তথ্য জানতে চাইলেও কোম্পানি গোঁজামিলের আশ্রয় নিয়েছে।

শেয়ারদর উত্থানের পর শেয়ার ক্রয় করা এক বিনিয়োগকারী শেয়ার বিজকে বলেন, পরিচালকরা কোনো ধরনের ঘোষণা না দিয়ে শেয়ারদর বাড়িয়েছে। এতে তারা নিজেরা লাভবান হবেন। অন্যদিকে আমাদের মতো সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার উপক্রম।

এ বিষয়ে গতকাল বুধবার কথা হয় সেন্ট্রাল ফার্মার প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) নুরুদ্দিন জঙ্গীর সঙ্গে। ‘ডিএসই যখন কোম্পানিকে নোটিস দেয়, তখন কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছিল না’ দাবি করে তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, ‘কোম্পানির পাঁচ উদ্যোক্তা পরিচালকের হাতে সব শেয়ার। তাদের হাতে থাকা সব শেয়ার আলিফ গ্রুপের কাছে বিক্রি করতে একটি চুক্তি সইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোর্ড। কত দামে বা কত দিনের মধ্যে এ বিক্রয় কার্যক্রম সম্পন্ন হবে, তা এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলে তা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে ঘোষণা আকারে জানানো হবে।’

২০১৩ সালে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ১০৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এর ১৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ শেয়ার প্রতিষ্ঠানের কাছে এবং বাকি ৫৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে রয়েছে।

‘এ’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানিটি সর্বশেষ ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর’১৬) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৭৩ পয়সা; যা আগের বছরে একই সময়ে ছিল ৫৫ পয়সা। সর্বশেষ তিন মাসে (অক্টোবর-ডিসেম্বর’১৬) কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৬১ পয়সা; যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২৮ পয়সা। ৩০ জুন ২০১৬ শেষে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি প্রকৃত সম্পদ (এনএভি) হয়েছিল ১৬ টাকা ৪৬ পয়সা।

এদিকে কোম্পানির ৩০ জুন, ২০১৬ সমাপ্ত হিসাববছরের আর্থিক প্রতিবেদন মূল্যায়ন করেছে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান। মূল্যায়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, আর্থিক প্রতিবেদনে ঋণের সুদের হার বিধান সঠিকভাবে তৈরি হয়নি। প্রতিবেদনে ২ কোটি ৩৮ লাখ টাকার একটি সংক্ষিপ্ত বিধান রয়েছে। এছাড়া প্রতিবেদনে কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদি সুদের হার সঠিকভাবে উল্লেখ হয়নি। বর্তমান সুদ ও দীর্ঘমেয়াদি সুদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এর ফলে সেন্ট্রাল ফার্মার আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানির অতীত ও বর্তমান দায় সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়নি।

জানা গেছে, নতুন বিনিয়োগের জন্য আলিফ গ্রুপকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে প্রস্তাব দেয় সেন্ট্রাল ফার্মা। পরে কোম্পানিটি ক্রয় করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন আলিফ গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম। তার এ প্রস্তাবে রাজি হন সেন্ট্রাল ফার্মার পরিচালকরা। এর আগে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের মালিকানাধীন সিএমসি কামাল টেক্সটাইলের বড় অংশ শেয়ার কিনে নেয় আলিফ গ্রুপ। দ্বিতীয় ধাপে চেষ্টা চলছে সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস নিয়ে।