সমুদ্রে পণ্য পরিবহনে যুক্ত হলো পাঁচ জাহাজ

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চলতি অর্থবছরের বাজেটে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দেওয়া যায়। এ খাতে রাষ্ট্রীয় প্রণোদনা আর বাজার সম্ভাবনা থাকায় সমুদ্রে পণ্য পরিবহনে দেশের বৃহৎ শিল্পগ্রুপগুলো বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। এর মধ্যে আজিজ গ্রুপ দুটি; মেঘনা, ওরিয়ন ও চট্টগ্রামের কবির গ্রুপ একটি করে মোট পাঁচটি জাহাজ পরিচালনায় আসে। এ পাঁচটি জাহাজের মধ্যে দুটি অয়েল ট্যাংকার ও তিনটি বাল্ক ক্যারিয়ার; যা তেল, পাথর, গমসহ আমদানি-রফতানি কাজে ব্যবহৃত হবে।
সমুদ্রগামী বাণিজ্যিক জাহাজ মালিক ও ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ হয় সমুদ্রপথে। গত অর্থবছরে আমদানি-রফতানিবাহী পণ্য পরিবহন করে তিন হাজার ৩৮২ জাহাজ। কিন্তু এতে দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজ ব্যবহৃত হয়েছে মাত্র ৩৬টি, যা শতাংশ হিসেবে মাত্র এক শতাংশ। আর সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনে গত অর্থবছরে ব্যবসা হয় প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা। প্রতিবছরই বাড়ছে এ লেনদেন। অথচ জাহাজ সংকট ও বিনিয়োগের অভাবে নির্ভরতা বাড়ছে বিদেশি জলযান প্রতিষ্ঠানের ওপর। ফলে বাড়ছে ব্যবসায়ীদের ব্যয় ও ভোগান্তি। তবে বর্তমান সরকার এ খাতে বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দেওয়ায় দীর্ঘদিন পর আবারও এ খাতে বিনিয়োগ আসছে।
গত কয়েক বছরের নৌবাণিজ্যে বাংলাদেশি জাহাজের সংখ্যা কমতে থাকলেও চলতি বছর পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এ খাতে নতুন বিনিয়োগ আসছে এবং আরও আসবে। নিজেদের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের আমদানি করা পাথর, ক্লিংকার, কাঁচামাল, এলপিজি গ্যাস, পেট্রোলিয়াম, বাণিজ্যিকভাবে পণ্য পরিবহন, নিজস্ব উৎপাদিত পণ্য রফতানি প্রভৃতি কাজে এসব জাহাজ ব্যবহার করা হবে। আর এজন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ক্লিয়ারেন্স ও প্রয়োজনীয় অনুমোদন নেওয়ার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছেন জাহাজ মালিকরা। কারণ, দ্রুত সময়ে জাহাজ পরিচালনায় যুক্ত হতে চায় আগ্রহী কোম্পানিগুলো। এছাড়া বসুন্ধরাসহ আরও কয়েকটি বড় কোম্পানি নতুন নতুন জাহাজ সংগ্রহের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
নৌ-বাণিজ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে জাহাজের বিক্রয়মূল্য হ্রাস, অপরদিকে দেশে জাহাজ আমদানিতে ভ্যাট ও শুল্ক কমানো, আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা থাকায় দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজে বিনিয়োগে মনোযোগী আকিজ গ্রুপ, কবির গ্রুপ, মেঘনা, ওরিয়ন, জিপিএইচ, বেক্সিমকো, ইস্ট কোস্ট। চলতি অর্থবছরে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনে এসব গ্রুপ মোট ১৭টি সমুদ্রগামী আমদানিতে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। আর এসব জাহাজ নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে নৌ-বাণিজ্য দফতরে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং তিনটি, আকিজ গ্রুপ তিনটি, জিপিএইচ গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ক্রাউন শিপিং দুটি, বেক্সিমকো গ্রুপ তিনটি, ইস্ট কোস্ট গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ওমেরা এলজিপি দুটি এবং মেঘনা গ্রুপ চারটি জাহাজের জন্য নিবন্ধন করেছে। এছাড়া ওরিয়ন অয়েল অ্যান্ড শিপিং তেল পরিবহনে অয়েল ট্যাংকার ওরিয়ন এক্সপ্রেস, আজিজ ওশেন লাইন লিমিটেড, বাল্ক ক্যারিয়ার হিসেবে আজিজ ওশেন এবং আজিজ গ্লোব, মেঘনা এডিবল অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড অয়েল ট্যাংকার মেঘনা প্রাইড এবং জাহান মেরিন (প্রা.) লিমিটেড বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ জাহান নামে এসব জাহাজ সংগ্রহ ও পরিচালনা করছে।
এ প্রসঙ্গে সবচেয়ে বেশি পতাকাবাহী জাহাজ মালিক প্রতিষ্ঠান কবির গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম শেয়ার বিজকে বলেন, চলতি অর্থবছরে সরকার এ খাতে অনেক সুবিধা দিয়েছে। আর দেশের আমদানি ও রফতানি কার্যক্রমও বাড়ছে। ফলে সমুদ্র পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তাই এ খাতে নতুন নতুন বিনিয়োগ আসছে। এ খাতে আরও বিনিয়োগ আসবে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে বাংলাদেশের বিদেশগামী জাহাজের সংখ্যা ছিল ৩৬টি। কয়েক মাসে যুক্ত আরও পাঁচটি জাহাজ। এতে বর্তমানে মোট জাহাজের সংখ্যা হয় ৪১টি। এর মধ্যে কবির গ্রুপের ১৭টি, আজিজ গ্রুপের চারটি, বসুন্ধরা গ্রুপের তিনটি, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের দুটি, মেঘনা গ্রুপের দুটি, ক্রিস্টাল গ্রুপের দুটি, এমআর শিপিংয়ের দুটি করে জাহাজ আছে। এছাড়া কনটিনেন্টাল লাইন, ওমেরার, ওরিয়ন, এমআই সিমেন্ট, ওশেন মেরিন প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের একটি করে জাহাজ আছে।