সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: দেশের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ-আছদগঞ্জ-চাক্তাই। এক পসলা বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয় এখানে। সম্প্রতি কালবৈশাখী ঝড় আর মৌসুমি বৃষ্টিতে বেশ কয়েকবার জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। আগেও বেশ কয়েকবার অপ্রত্যাশিত জলাবদ্ধতায় লোকসান গুনতে হয়েছিল শত শত কোটি টাকা। ফলে এ বাণিজ্যিক এলাকার ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত জলাবদ্ধতার আতঙ্কে ভোগেন।
তবে জলাবদ্ধতা নিরসনে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও এখনও শেষ হয়নি। এর মধ্যে এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে অনেক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। যা আবারও নতুন করে আতঙ্কিত করছে সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্যবসায়ীদের।
খাতুনগঞ্জ-আছদগঞ্জ-চাক্তাই এলাকার ব্যবসায়ীদের মতে, স্বাধীনতার পর বন্দর সুবিধা ও নদী তীরবর্তী বাজার হওয়ায় খাতুনগঞ্জের জৌলুস দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সম্প্রসারিত হয়নি রাস্তা, প্রশস্ত হয়নি পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা, বাড়েনি নালা ও খালের আয়তন, দখল হয়ে যায় খালের দুই পাড়। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে নদীর জোয়ার-ভাটা কিংবা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার কারণেই বর্ষা মৌসুমে পণ্য নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। যা নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। অথচ ভোগ্যপণ্য আমদানিকারকদের জন্য বর্ষাকাল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় ব্যবসায়ীরা চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে পণ্য আমদানি করেন। বর্ষা ও জলাবদ্ধতার কারণে প্রতি বছর ভেঙে পড়ে পণ্য সরবরাহ ও পরিবহন ব্যবস্থা। ফলে চাহিদা কমে যাওয়ায় ব্যাংক ঋণসহ প্রয়োজনীয় খরচ পরিশোধে লোকসানে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হন অনেক ব্যবসায়ী। তারা বলেন, খাতুনগঞ্জ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও এখানকার ব্যবসায়ীরা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। কর্ণফুলী নদীতে অপরিকল্পিত ড্রেজিং ও অবৈধ স্থাপনার কারণে জোয়ারের পানিতে প্রায়ই জলাবদ্ধতা তৈরি হয় চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ এলাকায়। এতে প্রতি বছর লোকসানে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন, কর্ণফুলী নদী তীরবর্তী এলাকায় পরিকল্পিত প্রতিরক্ষা বাঁধ ও খালের মুখে পাম্প হাউজসহ সøুইস গেট নির্মাণের দাবি জানান ব্যবসায়ীরা।
গত শুক্রবার সান্ধ্য সাড়ে ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৩৫ দশমিক ছয় মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে বলে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে। এ বৃষ্টিতে নগরীর অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমর পানি। সঙ্গে ছিল ঝড়োহাওয়া। অল্প বৃষ্টিতে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার বেশি পানি জমেছে। বেশকিছু বিপণিবিতানে পানি ঢুকে পড়ে। এতে করে স্বস্তিকর হয়নি ঈদবাজার। একটানা ভারি বর্ষণে দুর্ভোগে পড়ছেন ক্রেতা ও পথচারী। এ সময় বেশ কয়েকজন খুচরো বিক্রেতা জানান, প্রতি বছর বর্ষা আর জোয়ারের পানি আমাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পানিতে ডুবে যায়। প্রতিবারই সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার কাছ থেকে আশ্বাস আর আশার বাণী শোনানো হয়। কিন্তু বাস্তবায়নের হার উল্লেখ করার মতো নয়। অথচ প্রতিবছর এ বাণিজ্য অঞ্চল থেকে সরকার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করছে।
খাতুনগঞ্জ আড়তদার সমিতির সভাপতি সোলাইমান আলম বাদশা শেয়ার বিজকে বলেন, শুক্রবার শহরের বিভিন্ন স্থানে পানিতে তলিয়ে গেলেও খাতুনগঞ্জ এলাকায় পানি ওঠেনি। কারণ, নালাগুলো পরিষ্কার ছিল। তবে বৃষ্টি যদি আরও কিছুক্ষণ থাকত, তাহলে পানি উঠে যেত। তিনি আরও বলেন, খালগুলোতে যেসব বাঁধ দেওয়া হয়েছে, তা অপসারণ করা হয়নি, কর্ণফুলী ড্রেজিংয়ের কাজ, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ ধীরগতিতে চলছে। ফলে এবার আগের চেয়ে বেশি জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছি। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা কঠিন হবে।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগির আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, চট্টগ্রামকে স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতামুক্ত করার জন্য সরকার সিডিএকে একটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ দেয়। প্রথমে জোরালোভাবে কাজ শুরু হলেও এখন খুবই ধীরগতিতে চলছে। এছাড়া খালের মাটি অপসারণ করা হয়নি। ফলে আসন্ন বর্ষা ও পূর্ণিমার জোয়ারের পানিতে আগের মতো জলাবদ্ধতা হবে। এতে ক্ষতির সম্মুখীন হবেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। এ ক্ষতির দায় কে বহন করবে?
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা শেয়ার বিজকে বলেন, চট্টগ্রাম নগরীকে স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতামুক্ত করার একটি মেগা প্রকল্প সিডিএ পায়। যেটি বাস্তবায়নের কাজ পায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। তারা সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের সঙ্গে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বৈঠক করে। এ বৈঠকে চসিকের পক্ষে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়। আশা করছি দ্রুত ভালো ফল পাওয়া যাবে। এর মধ্যে দুই সংস্থা সমন্বয় করে কাজ করছে।
উল্লেখ্য, দেশের বৃহৎ এ পাইকারি বাজারে কয়েক হাজার পাইকারি পণ্যের দোকান, আড়ত আছে। এসব দোকানে স্বাভাবিক সময়ে ৮০০ থেকে এক হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। কিন্তু বর্ষায় টানা বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় পণ্য সরবরাহ বিঘিœত হওয়ায় লেনদেনের পরিমাণ অর্ধেকে নেমে এসেছে।
