নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ, রফতানি বাণিজ্য এবং ওয়েজ আর্নারস রেমিট্যান্স ভালো ছিল। এতে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক ছিল স্থিতিশীল। ফলে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয় সাত দশমিক ৮৬ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি এ সময়ে সাড়ে পাঁচ শতাংশের ঘরে ছিল। কিন্তু ব্যাংক খাতের বিভিন্ন সূচকের নিন্ম মুখী প্রবণতা দেখা গেছে। বেড়েছে ঝুঁকির পরিমাণ। কমেছে ব্যাংক খাতের মুনাফা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্টে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল এ রিপোর্ট প্রকাশ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। প্রতিবছর এটি অনুষ্ঠান করে প্রচার করলেও এ বছর করা হয়েছে ঘরোয়াভাবে।
রিপোর্টে উঠে এসেছে, ব্যাংক খাতের নিট মুনাফা ৫৭ দশমিক পাঁচ শতাংশ কমে গেছে। সম্পদের বিপরীতে আয় হার হয় ৪০ বেসিস পয়েন্ট কমে শূন্য দশমিক তিন শতাংশ। মূলধনের বিপরীতে আয় হার ৬০০ বেসিস পয়েন্ট কমে চার দশমিক চার শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ব্যাসেল-৩ মূলধন কাঠামোর আওতায় নির্ধারিত মাত্রা শতকরা এক দশমিক ৮৭৫-এর বিপরীতে ব্যাংক খাত শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ সংরক্ষণ করেছে।
২০১৮ সালে ব্যাংক খাতের ঝুঁকি সহনীয় মাত্রায় ছিল। সার্বিক ঝুঁকি পরিমাপক নির্দেশক রিস্ক ওয়েডেট অ্যাসেট ডেনসিটি রেশিও বেড়েছে। ব্যাংক খাতের মোট ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের মধ্যে ঋণ ঝুঁকির পরিমাণ ছিল ৮৮ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতের তারল্য পরিস্থিতি ২০১৮ সালে তুলনামূলক চাপের মুখে ছিল। বছর শেষে আগাম-আমানত অনুপাত বেড়ে ৭৭ দশমিক ছয় শতাংশ হয়। এ সময় কলমানি হারে মিশ্র প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়। অবশ্য ব্যাংক খাতে সম্পদ ১১ দশমিক পাঁচ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ঋণ ও আগাম ১৪ দশমিক এক শতাংশ এবং আমানত ১০ দশমিক পাঁচ শতাংশ বেড়েছে।
এদিকে সার্বিক অর্থনীতি বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের স্থিতি পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় কিছুটা কমে ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। আলোচ্য অর্থবছরে রফতানি বাণিজ্য এবং ওয়েজ আর্নারস রেমিট্যান্স যথাক্রমে ছয় দশমিক চার ও ১৭ দশমিক তিন শতাংশ বেড়েছে। এ সময় আমদানি বাণিজ্য ২৫ দশমিক দুই শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় চলতি হিসাবের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক আট বিলিয়ন ডলারে। এটি জিডিপির তিন দশমিক ছয় শতাংশ। চলতি হিসাবের ঘাটতি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় সামগ্রিক ব্যালেন্স অব পেমেন্টে ঋণাত্মক প্রবণতা দেখা দেয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল। এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ডেপুটি গভর্নর এসএম মনিরুজ্জামান, চেইঞ্জ ম্যানেজমেন্ট অ্যাডভাইজর আল্লাহ মালিক কাজেমি, ব্যাংকিং রিফর্ম অ্যাডভাইজর এস. কে. সুর চৌধুরী।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার অধ্যাপক স্বপন কুমার বালা, ইন্স্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটির নির্বাহী পরিচালক ড. শেখ মো. রেজাউল ইসলাম, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সহসভাপতি শফিকুল আলম, বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি আরিফ খান।
প্রতিবেদনটির ওপর একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক ড. মো. কবির আহাম্মদ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন একই বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির অন্যতম হিসেবে পূর্বের যে কোনো সময়ের তুলনায় বাংলাদেশ বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে অনেক বেশি সম্পৃক্ত। ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থ, বাণিজ্য ও রাজনীতিতে সংঘটিত নানা পরিবর্তন আমাদের জন্য বিভিন্ন আশঙ্কার পাশাপাশি সম্ভাবনার সুযোগও তৈরি করছে। তিনি আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশ্ব অর্থনীতির বিভিন্ন পরিবর্তনের গতি-প্রকৃতির প্রতি গভীর মনোযোগী থাকার পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক শ্লথ প্রবৃদ্ধির হার ও নানামুখী ঝুঁকি সত্ত্বেও নিন্মমুখী মুদ্রাস্ফীতি, রেমিট্যান্স ও রফতানি প্রবৃদ্ধি এবং আর্থিক খাত নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রবৃদ্ধিসহায়ক নীতিমালার পাশাপাশি শক্তিশালী রাজস্ব ব্যবস্থাপনার ফলে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সামগ্রিকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে। দেশের প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে ঋণ ও আমানতের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।