জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশ্ব দরবারের কাছে আরও আর্থিক ও কৌশলগত সাহায্য প্রত্যাশা করেছে বাংলাদেশ। গতকাল থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনএসকাপ) সদর দফতরে এক প্যানেল আলোচনায় পরিকল্পনামন্ত্রী এ সাহায্য চান।
ব্যাংককে ৭৫তম ইউএনএসকাপের বার্ষিক অধিবেশন শুরু হয়েছে গত সোমবার। তাতে পরিকল্পনামন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল যোগ দেয়। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, অধিবেশনের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার ইউএনএসকাপের নির্বাহী সম্পাদকের সঙ্গে বৈঠক করেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
এর আগে মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক এক প্যানেল আলোচনার সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশের এ মন্ত্রী। এতে তিনি ‘স্পেশাল বডি অন লিস্ট ডেভেলপমেন্ট, ল্যান্ডলকড ডেভেলপিং অ্যান্ড প্যাসিফিক আইসল্যান্ড ডেভেলপিং কান্ট্রিজ’ শিরোনামে বক্তব্য তুলে ধরেন।
প্যানেল আলোচনায় এমএ মান্নান বলেন, ‘বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিশ্বের অত্যন্ত দরিদ্র দেশগুলো। অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণে দরিদ্র দেশগুলোর কোনো ভূমিকাই নেই। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশকেও ক্ষতির শিকার হতে হচ্ছে। প্রতি বছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (জিডিপি) প্রায় দুই শতাংশ খরচ করতে হয় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায়।’
তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, বিশ্বের অত্যন্ত দরিদ্র দেশগুলোরও প্রায় একই রকম অর্থ খরচ করতে হচ্ছে এর পেছনে।’ এ সময় জলবায়ুর এ হুমকি মোকাবিলায় আরও আর্থিক সাহায্য ও কলাকৌশলের প্রয়োজন বলেও জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।
বাংলাদেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে আলোচনায় পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত এক দশকে জিডিপির ব্যাপক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। ২০১৪ সালে যেখানে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ছিল ছয় দশমিক পাঁচ শতাংশ, সেখানে গত বছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় আট দশমিক ১৩ শতাংশে। ২০০৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে ২৫০ শতাংশের বেশি। ২০০৬ সালে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪০ শতাংশ, ২০১৮ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ৪ শতাংশে।’
এদিকে ইউএনএসকাপ সদর দফতরের নির্বাহী সম্পাদক আরমিডা সালসিয়া অ্যালিসজাবানার সঙ্গে বৈঠকে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, বৈঠকে দক্ষতা বৃদ্ধি, যোগাযোগ, বাণিজ্য সম্প্রসারণ ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ইউএনএসকাপের নির্বাহী সম্পাদক এসব বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করবেন বলেও জানিয়েছেন।
এমএ মান্নান আরও বলেন, কেউ আসুক বা না আসুক আমরা আমাদের কাজ করে যাব। অনেক বৃহৎ প্রকল্প আমরা নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছি। আমাদের উন্নয়নে কেউ যদি অংশগ্রহণ করতে চায় তাকে স্বাগতম, না আসলে আমরা আমাদের কাজ করে যাব।
ইউএনএসকাপের নির্বাহী সম্পাদকের সঙ্গে বৈঠকে মন্ত্রী আরও বলেন, আমরা দারিদ্র্য বিমোচন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নিরাপদ খাবার পানি ব্যবস্থা ইত্যাদি মৌলিক বিষয়ের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। কেউ আমাদের সাঙ্গে না আসলেও আমাদের জনগণের জীবনমান উন্নয়নে এ কাজগুলো আমরা করে যাব।
এর আগে পরিকল্পনামন্ত্রীকে তার দফতরে স্বাগত জানান ইউএনএসকাপের নির্বাহী সম্পাদক। তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশের যে কোনো প্রয়োজনে তারা পাশে থাকবেন বলে জানান।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক কার্যালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মোকাম্মেল হোসেন, ইআরডির যুগ্ম সচিব আবদুল বাকী, ব্যাংককে নিযুক্ত ইকোনমিক কাউন্সিলর কবির আহমেদ, ইআরডির যুগ্ম প্রধান ফরিদ আজিজ, ইআরডির যুগ্ম সচিব মো. আনোয়ার হোসেন।