আয়করের টাকা আত্মসাৎ, সাতজন গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক: জনগণের আয়করের টাকা সরকারি হিসাবে জমা না করে অভিনব কৌশলে আত্মসাতের দায়ে পঞ্চগড় ও দিনাজপুর কর অফিসের সাত কর্মচারীকে গ্রেফতার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বিভিন্ন জেলা থেকে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। দিনাজপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের একটি টিম ওই আসামিদের গ্রেফতার করে। দিনাজপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক আবু হেনা আশিকুর রহমান গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে পঞ্চগড় কর অঞ্চলের (সার্কেল-২০) উচ্চমান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. রফিকুল ইসলামকে কুড়িগ্রাম থেকে, অফিস সহকারী মো. ফিরোজ জামানকে নীলফামারী থেকে এবং একই সার্কেলের নিরাপত্তা প্রহরী মো. রাজেকুল ইসলামকে পঞ্চগড় থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে করের এক কোটি ৬৪ লাখ ৬৯ হাজার ৭৯১ টাকা আত্মসাতের দায়ে গত ১৬ মে পঞ্চগড় থানায় মামলা করে কর অফিস। এ মামলায় মোট সাতজনসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। অন্যদিকে; দিনাজপুর কর অফিসের (সার্কেল-৮) প্রধান সহকারী মো. আবদুল মজিদকে লালমনিরহাট থেকে, সার্কেল-৯ এর অস্থায়ী অফিস সহকারী নীরেন চন্দ্র সরকারকে দিনাজপুর উপকর কমিশনারের কার্যালয় থেকে এবং সার্কেল-৮ এর অস্থায়ী অফিস সহকারী মো. আক্তারুজ্জামান ওরফে আপেলকে দিনাজপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া মো. হাবিবকেও (অফিসার ক্যাশ, সোনালী ব্যাংক) গ্রেফতার করা হয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে করের ৩৯ লাখ ৬৫ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাতের দায়ে গত ২০ মে দিনাজপুর কোতোয়ালি থানায় মামলা করা হয়। গ্রেফতারকৃতসহ এ মামলার মোট আসামি ছয়জন। ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলা দুটি দায়ের করা হয়। গত ২৮ এপ্রিল রংপুরের আয়কর বিভাগের আওতাধীন দিনাজপুর কর অফিসে অভিযান চালিয়ে বেতনের একটি হিসাব থেকে প্রায় ৪০ লাখ টাকা অনৈতিকভাবে উত্তোলনের প্রমাণ পায় দুদক। আরও কিছু হিসাব যাচাই করলে আত্মসাৎকৃত অর্থ পাওয়া যাবে বলে টিম মনে করে। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অভিযান সূত্রে দুদক জানায়, দিনাজপুর আয়কর অফিসে করদাতা প্রদত্ত আয়কর বাবদ আদায়কৃত টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযাগের প্রেক্ষিতে দিনাজপুরের সোনালী ব্যাংকের করপোরেট শাখা ও আয়কর অফিস পরিচালনা করে দুদকের পরিদর্শন টিম। অভিযান পরিচালনাকালে দেখা যায় করদাতাদের আয়কর পরিশোধের পে-অর্ডারগুলো (১-১১৪১-০০৬৫-০১১১) জমা না করে ব্যাংক ও আয়কর অফিসের একটি জালিয়াতচক্র দিনাজপুর আয়কর অফিসের সার্কেল-৮ এর কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ সংক্রান্ত চলতি তিনটি হিসাবে (হিসাব নং-১৮০৯৩৩৩০০১৯৬৪, ১৮০৯৩৩৩০০৫২৫৫ ও ১৮০৯৩৩৩০০৪৩৬৪) জমা করে। যা পরে বিভিন্ন সময় উত্তোলন করে আত্মসাৎ করে। গত ২৮ এপ্রিল অভিযানকালে তাৎক্ষণিকভাবে ৩৯ লাখ ৯৪ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া যায়। দুদকের অনুসন্ধান থেকে এটা পরিষ্কার যে, দিনাজপুরের তিনটি আয়কর সার্কেলে জালিয়াতচক্র একই প্রক্রিয়ায় সরকারি টাকা আত্মসাৎ করছে।
এরপর পুরো জালিয়াতচক্রকে আইনের আওতায় আনতে এবং খোয়া যাওয়া করের টাকা উদ্ধারে অনুসন্ধানের অনুমতি চায় দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শন টিম। অন্যদিকে, দুদকের পাশাপাশি অভিযোগ বিষয়ে পৃথকভাবে তদন্ত নামে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একটি টিম। রংপুর কর অঞ্চলের অতিরিক্তি কর কমিশনার শেখ মো. মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি টিমকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।