রহমত রহমান: দেশে সরষের উৎপাদন বাড়ছে। দেশে উৎপাদিত সরষে থেকে উৎপাদিত তেলের চাহিদা মেটানো হয়। আর সব পর্যায়ের ভোক্তাদের কাছে সরষের তেলের চাহিদা রয়েছে। তবে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে সরষের তেলের উৎপাদন পর্যায়ে পাঁচ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে খোলা ও বোতলজাত তেলে কেজিপ্রতি পাঁচ থেকে সাত টাকা বেড়ে যেতে পারে। বাড়তি এ দাম ভোক্তার ঘাড়ে পড়বে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট আরোপ করায় সরষে আমদানি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে স্থানীয় কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ভোক্তা ও কৃষকের কথা বিবেচনা করে সরষের তেলে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে।
সূত্রমতে, ১৯৯১ সালে ভ্যাট আইন চালু হয়। ভোজ্য তেলের মধ্যে সরষের তেল অত্যাবশ্যকীয়। এছাড়া দেশে উৎপাদিত সরষে থেকে উৎপাদিত তেলের চাহিদা রয়েছে এবং ধীরে ধীরে চাহিদা বাড়ছে। আগে খোলা সরষের তেলের চাহিদা থাকলেও বর্তমানে বোতলজাত করা তেলের চাহিদা রয়েছে। কয়েকটি দেশীয় কোম্পানি প্রক্রিয়াজাত করে বাজারজাত করে আসছে। সব পর্যায়ের ভোক্তাদের কথা চিন্তা করে ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের ২৮ বছরেও সরষের তেলের ওপর ভ্যাট আরোপ করেনি সরকার।
অব্যাহতি দেওয়ার ফলে বছর বছর সরষের তেলের দাম তুলনামূলকভাবে বাড়েনি। আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হচ্ছে। নতুন আইনে সরষের তেলের উৎপাদন পর্যায়ে পাঁচ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে সরষের তেলের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। ভোক্তাপর্যায়ে খোলা ও বোতলজাত সরষের তেলে কেজিপ্রতি পাঁচ থেকে সাত টাকা বেড়ে যেতে পারে বলে ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা। এ ব্যয় সরাসরি ভোক্তাপর্যায়ে পড়বে। তবে এরই মধ্যে বাজারে সরষের তেলের দাম বেড়ে গেছে বলে জানা গেছে।
অপরদিকে সানফ্লাওয়ার তেল বিদেশ থেকে বছরে দেড় থেকে দুই লাখ মেট্রিক টন আমদানি হয়। কিন্তু এ তেলে ভ্যাট অব্যাহতি অব্যাহত রাখা হয়েছে। দেশীয় কৃষকের চাষ করা সরষে থেকে উৎপাদিত তেল উচ্চবিত্ত থেকে নিন্মবিত্ত পর্যন্ত মানুষ খায় ও ব্যবহার করে। নিত্যপ্রয়োজনীয় এ ভোগ্যপণ্যে ভ্যাট বসানো হলেও আমদানি করা সানফ্লাওয়ার তেলে ভ্যাট আরোপ না করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, দেশে সরষের তেলের চাহিদা চার থেকে পাঁচ লাখ মেট্রিক টন। এ তেল উৎপাদনে প্রয়োজনীয় সরষের পুরোটাই দেশে উৎপাদিত হয়, ফলে আমদানি করতে হয় না। প্রতি কেজি ধানের দাম ৬০০ টাকা আর প্রতি কেজি সরষের দাম প্রায় এক হাজার ৮০০ টাকা। সরষের উৎপাদন খরচ ধানের চেয়ে সাশ্রয়ী হওয়ায় অনেক কৃষক ধান উৎপাদন না করে সরষে উৎপাদন করেন। কিন্তু সরষের তেলের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলে ব্যবসায়ীরা দেশীয় কৃষকের কাছ থেকে সরষে না কিনে আমদানি করবেন, কারণ আমদানি পর্যায়ে ছাড় রয়েছে। ফলে দেশীয় কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আমদানি-নির্ভরতা বাড়লে দেশে সরষের উৎপাদন কমে যাবে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১৭-১৮ সালে দেশে মোট চার লাখ ৭৭ হাজার হেক্টর জমিতে সরষে চাষ হয়। মোট ফলন হয় ছয় লাখ পাঁচ হাজার টন। এ সরষে থেকে দুই দশমিক ৫০ লাখ টন তেল উৎপন্ন হয়।
এ বিষয়ে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক নেতা গোলাম মাওলা শেয়ার বিজকে বলেন, ভ্যাটের কারণে দাম বেড়ে যেতে পারে। আমরা মন্ত্রীকে বিষয়টি তুলে ধরেছি। তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।
এ বিষয়ে এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের একজন কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, বর্তমানে বেশ কিছু কোম্পানি সরষের তেল উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। বাজারে এসব তেলের চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। সেজন্য আমরা হিসাব করেই ভ্যাট প্রত্যাহার করে পাঁচ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করেছি। এ ভ্যাট উৎপাদন পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানকে দিতে হবে। এত বছর ভ্যাট আরোপ না করার পরও প্রতিবছর প্রতিষ্ঠানগুলো দাম বাড়ায়। পাঁচ শতাংশ ভ্যাটের ফলে কেজিতে সামান্য ভ্যাট হবে। তবে ভ্যাটের বিষয়টি এনবিআর বিবেচনা করছে।
এনবিআর সূত্র জানায়, সরষে, সয়াবিনসহ ভোজ্যতেলে ভ্যাট প্রত্যাহারে সম্প্রতি এ খাতের ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে সচিবালয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্যের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়। ভ্যাট প্রত্যাহার না হলে তেলের দাম বাড়বে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। এ ভ্যাট প্রত্যাহারে চলতি সপ্তাহে বাণিজ্যমন্ত্রী এনবিআর চেয়ারম্যানকে ডিও লেটার দেন। এছাড়া ভোজ্যতেলে ভ্যাট নিয়ে এনবিআরে একাধিক বৈঠক হয়েছে। সহসাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে সারসংক্ষেপ পাঠানো হবে। সেখানে উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাটে কিছুটা ছাড় থাকতে পারে।
