এম.এ. শাহরিয়ার, বান্দরবান: অবিরাম বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সড়ক প্লাবিত হওয়ায় বান্দরবানের সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ তৃতীয় দিনের মতো বিচ্ছিন্ন রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সদরে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চলের সহস্রাধিক ঘরবাড়ি। সাঙ্গু নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় খোলা ১২৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে সাত শতাধিকেরও বেশি লোকজন। অব্যাহত ভারি বর্ষণে পাহাড় ধসের শঙ্কায় ঝুঁকিপূর্ণ বসতিগুলো ছেড়ে লোকজনদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। দুর্গমাঞ্চলের দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমণে পর্যটকদের জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে প্রশাসন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গত শনিবার থেকে বান্দরবানের সাত উপজেলায় অবিরাম ভারি বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বান্দরবান-কেরানীহাট প্রধান সড়কের বাজালিয়া, বরদুয়ারা ও দস্তিদারহাট এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। সড়কে চার-পাঁচ ফুট পানি জমে থাকায় সারা দেশের সঙ্গে বান্দরবানের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে তৃতীয় দিনের মতো। যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। তবে মধ্যখানের কয়েকশ’ ফুট প্লাবিত সড়ক নৌকা, রিকশা এবং ভ্যান গাড়িতে করে পার হচ্ছে মানুষ। প্লাবিত সড়কের দু’পাশে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে অবিরাম বর্ষণে বান্দরবানের সাঙ্গু নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদী তীরবর্তী উজানীপাড়া, মধ্যমপাড়া, মুসলিমপাড়াসহ আশেপাশের শত শত ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। জেলা সদরের মেম্বারপাড়া, ওয়াপদাব্রিজ, কাশেমপাড়া, শেরেবাংলা নগর, ইসলামপুরসহ আশেপাশের নিম্নাঞ্চলের শতাধিক ঘরবাড়ি বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বন্ধ রয়েছে রুমা এবং থানচি রুটে নৌ-চলাচলও। দুর্গমাঞ্চলের দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমণে পর্যটকদের জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে প্রশাসন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
শৈলসভা পরিবহন মালিক শ্রমিক সমিতির সভাপতি আবদুল কুদ্দুছ জানান, বন্যার পানিতে প্রধান সড়ক প্লাবিত হওয়ায় বান্দরবানের সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তিন দিন ধরে বান্দরবান-চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং ঢাকা রুটে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। পাহাড় ধসের কারণে রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি এবং বান্দরবান-লামা অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগও ব্যাহত হচ্ছে।
এদিকে টানা ভারি বর্ষণে বান্দরবানের সাত উপজেলায় ছোট ছোট পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। পাহাড় ধসে বহু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সদরের ইসলামপুর, কালাঘাটা, লেম্বছুড়িসহ লামা, রুমা, থানচি, আলীকদম এবং নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায়। তবে বড় ধরনের কোনো ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। পাহাড় ধসে প্রাণহানি ঠেকাতে ঝুঁকিপূর্ণ বসতিগুলো থেকে লোকজনদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে।
মৃত্তিকা পানি সংরক্ষণ কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহাবুবুল ইসলাম জানান, বান্দরবানে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে সকাল থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারি বর্ষণের ফলে পাহাড় ধসের শঙ্কা বাড়ছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক দাউদুল ইসলাম জানান, ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১২৬টি। দুর্যোগ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণও মওজুদ রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
