নিজস্ব প্রতিবেদক: এনবিআরের ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেট রাজস্ব আহরণে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। এ রাজস্বের ক্ষেত্রে সদ্যসমাপ্ত অর্থবছর ২০১৮-১৯-এর বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ শতাংশ, যা সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি। অন্যদিকে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধিতে গত পাঁচ বছরের মধ্যে এবার সর্বোচ্চ অবস্থানে যশোর কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেট। গত অর্থবছরে যশোর কাস্টমসের রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি হার দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ০১ শতাংশ, যেখানে সারা দেশে এ হার ছিল মাত্র ১১ শতাংশ।
গতকাল ভ্যাট আহরণের চূড়ান্ত হিসাব অনুযায়ী এ তথ্য উঠে এসেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেটে জুন মাসে রাজস্ব আদায়ে একক প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৬১ শতাংশ। ওই মাসে আদায় হয়েছে ৫২৬ কোটি ২১ কোটি টাকা। গতবছর একই মাসে আদায় হয়েছিল ৩২৬ কোটি টাকা।
জুন মাসসহ অর্থবছরের (জুলাই-জুন) মোট রাজস্বের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৭৮০ কোটি ৯৩ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছর ছিল দুই হাজার ২৮০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। সে হিসেবে সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ শতাংশ। এখানে উল্লেখ্য, অর্থবছরের রাজস্ব আহরণে প্রথম সাত মাসে গড়ে প্রবৃদ্ধি ছিল সিঙ্গেল ডিজিটে (এক সংখ্যা) সীমিত। পরবর্তী পাঁচ মাসে বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণের কারণে প্রতি মাসে ৩০ শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি হয়। ফলে অর্থবছরের মোট রাজস্ব ডাবল ডিজিটে (দুই অঙ্কে) উন্নীত হয়।
ভ্যাট কমিশনার ড. মইনুল খান ভ্যাট রাজস্ব আহরণে এ অর্জনকে ঢাকা পশ্চিমের প্রতিটি কর্মচারীর নিরলস প্রচেষ্টার ফসল হিসেবে দেখতে চান। তার মতে, কর্মকর্তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ, ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধকরণ, এনবিআরের কঠোর মনিটরিং এবং উন্নততর ব্যবস্থাপনা কৌশল প্রয়োগের কারণেই রাজস্ব আহরণের সাফল্য এসেছে। ড. মইনুল খান জাতীয় পর্যায়ে প্রবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ঢাকা পশ্চিম ভ্যাটের এ আহরণকে অসামান্য অর্জন বলে মনে করেন। ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেট চলতি বছরের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা থেকেও অসামান্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। বাণিজ্যমেলা থেকে আগের বছরের তুলনায় এ বছরের ভ্যাট আদায় বেশি হয়েছিল ৩৬ শতাংশ।
উল্লেখ্য, ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেটে ড. মইনুল খান অর্থবছরের শেষের মাত্র পাঁচ মাস আগে কমিশনার হিসেবে যোগদান করেন।
এদিকে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধিতে গত পাঁচ বছরের মধ্যে এবার সর্বোচ্চ অবস্থানে যশোর কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেট। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে যশোর কাস্টমসের রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি হার দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ০১ শতাংশ। সারা দেশে এ হার ছিল মাত্র ১১ শতাংশ।
যশোর কাস্টমস সূত্র জানায়, বিগত তিন অর্থবছরে যশোর কাস্টমসের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বেড়েছে। এর মধ্যে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাজস্ব আয় হয় এক হাজার ৩৫০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ও প্রবৃদ্ধির হার ২৩ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাজস্ব আয় ও প্রবৃদ্ধি হয় যথাক্রমে এক হাজার ৫৮৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। ওই বছর প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১৮ শতাংশ। আর গত অর্থবছরে অর্জিত প্রবৃদ্ধির হার গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ দুই হাজার ৪৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা এবং প্রবৃদ্ধির হার ২৯ দশমিক ০১ শতাংশ।
যশোর কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনার মো. শওকাত হোসেন বলেন, টিম ওয়ার্ক, দক্ষ ও যোগ্য কর্মকর্তাদের যথাযথ স্থানে পদায়ন এবং এনবিআরের সদস্যদের (বাস্তবায়ন) সার্বক্ষণিক সহায়তা মনোভাবাপন্ন মনিটরিংয়ের ফলেই তার কমিশনারেটের এ সফলতা অর্জন সম্ভব হয়েছে। এনবিআর যশোরে নিটল মোটরসকে রাজস্বমুক্ত ঘোষণা করায় এ বছর প্রতিষ্ঠানটি থেকে কোনো রাজস্ব পাওয়া যায়নি। অথচ সেখান থেকে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট ছিল ৪৬ কোটি টাকা। এছাড়া বেনাপোল বন্দর দিয়ে এবার আমদানি কম হওয়ায় অ্যাডভান্স ট্রেড ভ্যাট (এটিভি) প্রাপ্তির পরিমাণও কমেছে। নিয়মিত রেভিনিউ মিটিংসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিনি নানাভাবে কাউন্সেলিং করায় সবাই কারও চাপে বা ভয়ে নয়, বরং দায়িত্ববোধের তাগিদে কাজ করেছেন। সফলতার পেছনে এটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
