নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: অবশেষে ১৯ ঘণ্টা পর নৌযান শ্রমিকরা আন্দোলন স্থগিত করেন। তবে এ ১৯ ঘণ্টা ১১ দফা দাবিতে সারা দেশে তাদের কর্মবিরতির অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকে ছোট (লাইটার) জাহাজে পণ্য খালাস বন্ধ ছিল। গতকাল ভোর রাত থেকে লাইটার শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে দেন। এতে বিপাকে পড়েন দেশের আমদানিকারকরা। আর এমনিতেই বন্দর থেকে পণ্য খালাস প্রক্রিয়ায় ভোগান্তিতে আছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে এ ধরনের অপেশাদার কার্যক্রম আরও লোকসান বাড়াবেÑএমন আশঙ্কা প্রকাশ করেন আমদানি ও রফতানিকারক তথা ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন সূত্রে জানা যায়, নৌপথে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, শ্রমিক নির্যাতন বন্ধ ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার, নৌযান শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাস, জাহাজে কর্মরত প্রত্যেক নৌ-শ্রমিককে মালিক কর্তৃক বিনা পয়সায় খাবারের ব্যবস্থা করা, কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় মৃত নৌ-শ্রমিকের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান, মাস্টার/ড্রাইভারদের ইনচার্জ, এনড্রোসমেন্ট ও টেকনিক্যাল ভাতা পুনঃনির্ধারণ, সমুদ্র ভাতা ও রাত্রিকালীন ভাতা নির্ধারণসহ ১১ দফা দাবিতে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকে বুধবার দিবাগত রাত ১২টা এক মিনিট থেকে সারা দেশে সব নৌযানে লাগাতার কর্মবিরতি পালন শুরু হয়। এর অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকে ছোট (লাইটার) জাহাজে পণ্য খালাস বন্ধ হয়ে যায়।
পাশাপাশি সারা দেশে যাত্রীবাহী নৌযানও চলাচল বন্ধ রাখা হয়। এতে মানুষের ভোগান্তির শেষ ছিল না। পরে শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে প্রথমে যাত্রীবাহী নৌযানের ধর্মঘট স্থগিত করা হয়। দাবি পূরণের আশ্বাসে পরে সব ধরনের ধর্মঘট স্থগিত করা হয়।
আমদানিকারকরা বলেন, পণ্য পরিবহনে খরচ কমাতে শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা বিদেশ থেকে বড় জাহাজে লবণ, পাথর, কয়লা, চিনি, চাল, ডাল, ছোলা, সিমেন্ট ক্লিংকার, তেল প্রভৃতি পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে (সাগরে) নিয়ে আসা হয়। সেখানে বড় জাহাজের পাশে ছোট জাহাজ বেঁধে ক্রেনের সাহায্যে খালাস করে নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন নদীবন্দর ও কর্ণফুলীর ঘাটে নিয়ে আসা হয়। কর্ণফুলী নদীর চ্যানেলের গভীরতা কম থাকায় বন্দরের মূল জেটিতে বড় জাহাজগুলো ভিড়তে পারে না। তবে বুধবার ভোর রাত থেকে লাইটার শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে দেন। এতে বিপাকে পড়েন দেশের আমদানিকারকরা।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিবহন বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, ২৩ জুলাই বন্দরের বহির্নোঙরে ৩৯ জাহাজে পণ্য খালাস হয়েছিল। এর মধ্যে চারটি খাদ্যশস্য, ১৯টি সাধারণ পণ্য, ১১টি সিমেন্ট ক্লিংকার, একটি চিনি, একটি লবণ ও তিনটি তেলবাহী জাহাজ ছিল। ২২টি জাহাজ অপেক্ষমাণ ছিল। তারা আরও বলেন, শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে বহির্নোঙরে পণ্য খালাসে সমস্যা হয়। তবে বন্দরের মূল জেটিতে কনটেইনার হ্যান্ডলিং অব্যাহত রয়েছে।
