রোহিঙ্গাদের মোবাইল সেবা বন্ধে বিটিআরসির নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সাত দিনের মধ্যে মোবাইল ফোন সেবা বন্ধের জন্য দেশে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এ বিষয়ে গতকাল রোববার মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলেও জানিয়েছেন বিটিআরসির সহকারী সিনিয়র পরিচালক (মিডিয়া) মো. জাকির হোসেন খান।
বিটিআরসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও গুরুত্ব বিবেচনা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জনসুরক্ষার স্বার্থে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যাতে মোবাইল সুবিধা না পায় সে বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য আপনাদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছিল। কিন্তু রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকারী কমিটি এবং বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে কমিশন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী কর্তৃক ব্যাপক হারে সিম/রিম ব্যবহার সংক্রান্ত তথ্য পেয়েছে। এমতাবস্থায়, আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোনো ধরনের সিম বিক্রি, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী কর্তৃক সিম ব্যবহার বন্ধ তথা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মোবাইল সুবিধাদি প্রদান না করা সংক্রান্ত সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করে বিটিআরসিকে অবহিত করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হলো।’
বিটিআরসি কর্মকর্তারা জানান, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের কাছ থেকে ‘জরুরি ব্যবস্থা’ নেওয়ার নির্দেশনা পেয়ে রোববার তারা অপারেটরদের চিঠি পাঠান।
নেটওয়ার্ক বন্ধকরণ সিদ্ধান্তের বিরোধিতাকারী কয়েকটি এনজিওর কারণে সাত লক্ষাধিক রোহিঙ্গা ব্যবহার করছে মোবাইল ফোন। রোহিঙ্গাদের হাতে থাকা মোবাইলের নেটওয়ার্ক বন্ধ না হওয়ায় শিবিরে প্রতিনিয়ত নানা অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের অনিবন্ধিত সিম বিক্রি বেআইনি। আর মোবাইল সিম নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজন হয় জাতীয় পরিচয়পত্র। নির্বাচন কমিশনে সংরক্ষিত জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভাণ্ডারের সঙ্গে আঙ্গুলের ছাপ মেলানোর পর ‘বায়োমেট্রিক’ নিবন্ধনের কাজ শেষ হয়।
এ নিয়ম অনুসরণ করা হলে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বৈধভাবে মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুযোগ পাওয়ার কথা নয়। কিন্তু কক্সবাজারের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকা সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গার একটি বড় অংশের হাতে মোবাইল ফোন রয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে বিভিন্ন সময়ে।
এসব অবৈধ মোবাইল সিম চাঁদাবাজি, মাদক চোরাচালানসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।
বিটিআরসির নির্দেশনার পর রবি আজিয়াটা এক বিজ্ঞপ্তি জানায়, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, জাতীয় পরিচয় তথ্যভাণ্ডারে (এনআইডি) সংরক্ষিত তথ্যের সঙ্গে বায়োমেট্রিক যাচাইকরণের মাধ্যমে একজন ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরেই একটি মোবাইল সিম বিক্রয় করা হয়। অর্থাৎ মোবাইল সিম কিনতে হলে একজন ব্যক্তির বৈধ জাতীয় পরিচয়পত্র থাকতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি যে, সিম সংক্রান্ত যে কোনো সমস্যার সমাধান শুধু বৈধ নাগরিকদের আঙুলের ছাপ (ফিঙ্গারপ্রিন্ট) ও এনআইডি ডেটাবেজে নিবন্ধন নিশ্চিত করার মধ্যেই নিহিত রয়েছে।