একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায় সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক: কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমেই হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আইন-আদালত নয়, রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমেই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনতে হবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টারও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, এ সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রেখে, লাখ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে এবং একদলীয় শাসনব্যবস্থা ‘বাকশাল’ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আমরা কি আবার বাকশালে ফিরে যাব? একদল মেনে নেব? কোনোদিনও মেনে নেব না।
দলের ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল সোমবার বিকালে আয়োজিত র‌্যালির আগে এক সমাবেশে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। বিকাল সাড়ে ৩টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে এ র‌্যালি শুরু হয়।
সভাপতির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আটক করে রেখে, সারা দেশে প্রায় ২৬ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে লাখো মামলা দিয়ে, ৫০০’র বেশি নেতাকর্মীকে গুম করে, হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করে আর আহত করে এ সরকার ভেবেছে গণতন্ত্র মুক্তির আন্দোলন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন তারা পদদলিত করতে পারবে। কিন্তু আজকের এ র‌্যালি প্রমাণ করেছে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র মুক্তির আন্দোলন তারা দমন করতে পারবে না।
সরকার গোটা দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে, বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে, ভ্যাট বাড়িয়েছে; কিন্তু জনগণের সমস্যার কোনো সমাধান তারা করতে পারেনি। ব্যাংকিং ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে, হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছি, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আন্দোলন করে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে এনেছি। সেই গণতন্ত্রকে আমরা কিছুতেই পদদলিত করতে দেব না।
সরকার জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সে জন্যই দেশনেত্রীকে আটকে রেখে, জনগণের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে, নির্যাতন করে, হত্যা করে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। কিন্তু পৃথিবীর কোনো শাসক এভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি। তাই আজ বাংলাদেশের সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে বিএনপির দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। কারণ, বিএনপি সেই দল, যে দল প্রতিষ্ঠা করেছেন জিয়াউর রহমান। তিনি বাংলাদেশের সব দেশপ্রেমী ও গণতন্ত্রকামী মানুষকে এক করে এই দল গঠন করেছিলেন। সে কারণেই গত ৪০ বছরে বিএনপি পাঁচবার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় গেছে।
মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘১৮ মাস ধরে খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বিদেশে নির্বাসিত করে রেখেছে। আমরা যদি দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে চাই, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে চাইÑতাহলে আমাদের অবশ্যই ত্যাগ স্বীকার করে রাজপথে এসে আন্দোলন করতে হবে।’
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আপনাদের বুঝতে হবে, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে আন্দোলন ছাড়া কোনো পথ নেই। খালেদা জিয়ার মুক্তির পথে বাধা কে? আজকের এই সরকার। এ সরকার ২৯ ডিসেম্বর ভোট চুরি করেছে। এ চুরি করা ভোটে গঠিত সরকারকে মানার কোনো প্রয়োজন নেই। এ সরকারের পতন ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। আসুন, আমরা সরকার পতন আন্দোলনে যাই।
সমাবেশে বিএনপি নেতাদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
উপস্থিত ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবীব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, এবিএম মোশাররফ হোসেন, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নাজিম উদ্দিন আলম, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরফত আলী সপু, হাবিবুর রশীদ হাবিব, আমিরুল ইসলাম আলিমসহ অন্যরা।
পরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র‌্যালিটি নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড়, কাকরাইল মোড় হয়ে শান্তিনগর মোড় পর্যন্ত গিয়ে আবার নয়াপল্টনে ফিরে আসে। দলের শীর্ষ নেতারাসহ হাজার হাজার নেতাকর্মী-সমর্থক র‌্যালিতে অংশ নেন। র‌্যালিতে বিপুলসংখ্যক লোক অংশ নেওয়ায় প্রায় দুই ঘণ্টা নয়াপল্টনের সড়কটি বন্ধ থাকে।
র‌্যালিতে অংশ নেওয়া নেতাকর্মী-সমর্থকরা জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সংবলিত পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন প্রদর্শন করে। বাদ্যযন্ত্র, ধানের শীষের রেপ্লিকা, সাউন্ড সিস্টেম মাইক, ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে ঢাকা শহর বিএনপির বিভিন্ন ইউনিট র‌্যালিতে শরিক হয়। ঢাকার আশেপাশের টাঙ্গাইল, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী জেলা থেকে এসেও বিএনপি নেতাকর্মী, সমর্থকরা র‌্যালিতে অংশ নেন।