ইপিজেডের কিছু সেবায় ভ্যাট অব্যাহতি

নিজস্ব প্রতিবেদক: নতুন ভ্যাট আইনে রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট (মূসক) অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এবার ইপিজেডের প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল সংগ্রহ, গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ বিলের ওপর শর্ত সাপেক্ষে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দ্বিতীয় সচিব (মূসক আইন ও বিধি) সই করা প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ভ্যাট আইন অনুযায়ী ইপিজেড এলাকায় অব্যাহতি প্রাপ্ত সেবা হলো প্রাকৃতিক গ্যাস, ওয়াসা, বিদ্যুৎ বিল, বন্দর, ফ্রেইট, ফরোয়ার্ড, ক্লিয়ারিং ও ফরোয়ার্ডিং সংস্থা, বিমা কোম্পানি ও শিপিং এজেন্ট সেবা। শতভাগ রফতানিকারক, শতভাগ প্রচ্ছন্ন রফতানিকারক ও রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় অবস্থিত শিল্প-কারখানায় পণ্য ও সেবায় ভ্যাট অব্যাহতি প্রযোজ্য হবে এমন সেবাকে কিছু শর্ত পরিপালন করতে হবে।
শর্ত হিসেবে নির্দেশনায় বলা হয়, প্রাকৃতিক গ্যাস, ওয়াসা ও বিদ্যুতের ক্ষেত্রে রফতানি প্রমাণসহ নির্দিষ্ট কোম্পানির নামেই মিটার হতে হবে। এক মিটারে একাধিক প্রতিষ্ঠান এ সুবিধা নিতে পারবে না। অব্যাহতি পেতে মাস শেষ হওয়ার পর ১৫ তারিখের মধ্যে আবেদন করতে হবে। অন্যদিকে, বন্দরসহ অন্যান্য সেবায় অব্যাহতি পেতে সংশ্লিষ্ট ইপিজেডের ছাড়পত্র দেখাতে হবে। এছাড়া রফতানিকারকদের অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সনদও দেখাতে হবে অব্যাহতির সুযোগ পেতে।
অপরদিকে; বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিনিয়োগকারীদের সমান কর রেয়াত এবং অ-আর্থিক প্রণোদনা সুবিধা চেয়েছে ইপিজেডে স্থাপিত শিল্প-প্রতিষ্ঠানসমূহ। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) গত ৪ সেপ্টেম্বর কর রেয়াত বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দিয়েছে। এ নিয়ে এনবিআর কাজ করছে। এতে সংস্থাটি উল্লেখ করেছে, বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রদেয় সুবিধাদির বৈপরিত্য ও বৈষম্যর ফলে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের প্রতিযোগিতার বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলের ন্যায় আর্থিক প্রণোদনাসমূহ ইপিজেডের বিনিয়োগকারীদের প্রদান করা হলে মোংলা, উত্তরা ও ঈশ্বরদী ইপিজেডসহ অন্যান্য ইপিজেডে বিনিয়োগ, রফতানি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে।
বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল এসএম সালাহউদ্দিন ইসলাম স্বাক্ষরিত আবেদনপত্রে বলা হয়েছে, ৩১ ডিসেম্বর ২০১১ পর্যন্ত স্থাপিত ইপিজেডের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য ১০ বছর কর রেয়াত সুবিধা এবং ১ জানুয়ারি ২০১২ সাল কিংবা এর পরবর্তীতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কর্ণফুলী, কুমিল্লা এবং আদমজী ইপিজেডে স্থাপিত শিল্প-প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রথম ও দ্বিতীয় বছর ১০০ শতাংশ, পরবর্তী দুবছর (তৃতীয় ও চতুর্থ) ৫০ শতাংশ, পঞ্চম বছরে ২৫ শতাংশ হারে কর রেয়াত সুবিধা এবং ইশ্বরদী, উত্তরা ও মোংলা ইপিজেডে স্থাপিত শিল্প-প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রথম তিন বছর (প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়) ১০০ শতাংশ, পরবর্তী তিন বছর (চতুর্থ, পঞ্চম ও যষ্ঠ) ৫০ শতাংশ এবং পরবর্তী এক বছর ২৫ শতাংশ হারে কর রেয়াত প্রদান করা হচ্ছে।
অন্যদিকে; বেজার অধীনে স্থাপিত অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ বছর কর রেয়াত সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। প্রথম তিন বছর ১০০ শতাংশ, চতুর্থ বছর ৮০ শতাংশ, পঞ্চম বছর ৭০ শতাংশ, যষ্ঠ বছর ৬০ শতাংশ, সপ্তম বছর ৫০ শতাংশ, অষ্টম বছর ৪০ শতাংশ, নবম বছর ৩০ শতাংশ এবং দশম বছর ২০ শতাংশ। এছাড়া বিদেশি কর্মীদের জন্য কর মওকুফ সুবিধা বেজার অধীন স্থাপিত শিল্প-প্রতিষ্ঠান পেয়ে থাকলেও ইপিজেডের বিনিয়োগকারীরা এ সুবিধা পাচ্ছেন না। পাশাপাশি অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রতিষ্ঠানসমূহ দু-তিনটি গাড়ি শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনার সুযোগ পাচ্ছে, যা ইপিজেডের শিল্প-প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নেই।