কোনো গোষ্ঠীর চাপে আইন সংশোধন গ্রহণযোগ্য নয়

সড়কে প্রতিদিন গড়ে ২০ জন নিহত হচ্ছেন। এর ৯০ ভাগ কারণই হলো চালকের বেপরোয়া মনোভাগ ও অতিরিক্ত গতি। সড়কের অব্যবস্থাপনা ও বেহাল দশার পাশাপাশি পথচারীর অসচেতনতাও এর জন্য কিছুটা দায়ী। তবে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার উপায় যে সরকারের অজানা, তা নয়। তবে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে যে ৯টি পদক্ষেপ নিয়েছে, তার বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। কার্যত সরকার-সংশ্লিষ্ট কিছু ঊর্ধ্বতন ব্যক্তির স্বার্থরক্ষায় সরকার নিজের দেওয়া প্রতিশ্রুতিই রক্ষা করতে পারেনি। এসব খবর ও সমালোচনা পত্রিকায় প্রকাশ এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চাউর হওয়ার পরও সরকার পরিবহন মালিক ও শ্রমিকের দাবি মানতে বাধ্য বা নতজানু হতে পারে না। একই সঙ্গে জনসচেতনতা ও সড়ক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতের বিকল্প থাকে না।
রাজধানীতে যাত্রী পরিবহনে চলছে চরম যথেচ্চাচারিতা। ভাড়া নির্ধারণ ও যাত্রীসেবায় পরিবহন মালিক-শ্রমিক কারও তোয়াক্কা করছে না। এমনকি সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করার অবাধ্য আচরণ দেখে জনসাধারণ রাষ্ট্রের মধ্যে আরেক রাষ্ট্রের অস্তিত্ব অনুমান করে। কার্যত ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’-এর গেজেট জারি হওয়ার পরও মালিক-শ্রমিকের বাধার মুখে আইন বাস্তবায়নে সরকার পিছু হটে। এখন আইন সংশোধনে উদ্যোগ নিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন উপকমিটি। উপকমিটি সংশোধনী প্রতিবেদন জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের কাছে মূল্যায়নের জন্য হস্তান্তর করবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। অথচ যারা মূল্যায়ন করবেন, তারা নিজেরাই সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের ধরন ও কারণের সঠিক পরিসংখ্যান সংরক্ষণ করেন না। পুলিশের নথির ওপর নির্ভর করা হয়ে থাকে। কিন্তু সেসব দুর্ঘটনার বিষয়টিই নথিতে রাখেন, যেগুলোয় মামলা হয়ে থাকে। অথচ দেশে অনেক দুর্ঘটনা উভয় পক্ষের মীমাংসায় নিষ্পত্তি হলে পুলিশ তার নথি রাখে না। তবে পরিবহন মালিক-শ্রমিকের সব দাবি উপকমিটি গ্রহণ করেনি এ যুক্তিতে সরকারের চেয়ে মালিক-শ্রমিক বেশি শক্তিশালী কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের সঠিক জবাব হয়েছে বলে ধরা যায় না। কেননা, একগুচ্ছ দাবির মধ্যে মালিক-শ্রমিকের স্বেচ্ছাচারী স্বার্থ রক্ষা হয় এমন একটি দাবিও যদি সরকার মেনে নেয়, তবে সড়ক পরিবহন আইনটি জনসাধারণ ও জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হবে। কার্যত, প্রতি বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় রাষ্ট্রীয় ক্ষতির পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপিকে দুই বা তিন শতাংশ কর্তন করে।
হতাহতের মধ্যে বেশিরভাগই যখন তরুণ ও কর্মক্ষম, তখন রাষ্ট্রজনকে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা রক্ষায় নিশ্চয়ই সাহসী তথা ন্যায্য সড়ক আইন বাস্তবায়ন করতে হবে।