ইস্যু মূল্যের নিচে ২৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজারে পতনের ধারা অব্যাহত থাকায় ক্রমেই সস্তা হতে শুরু করেছে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারদর। এর জেরে শেয়ারদর অভিহিত দর ও ইস্যুমূল্যের নিচে নেমে যাচ্ছে। বর্তমানে (২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) তালিকাভুক্ত ২৬ দশমিক ৪০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর ইস্যু ও অভিহিত দরের নিচে অবস্থান করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি নাজুক পরিস্থিতিতে রয়েছে বস্ত্র খাতের কোম্পানি। বর্তমানে ৬২ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর ইস্যু মূল্যের নিচে রয়েছে। এর মধ্যে বস্ত্র খাতের কোম্পানি সবচেয়ে বেশি। এ খাতের সবচেয়ে বেশি কোম্পানির শেয়ারদর ইস্যু মূল্য ও অভিহিত দর বা ১০ টাকার নিচে অবস্থান করছে।
বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত ৫৫ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর অভিহিত দরের নিচে অবস্থান করছে। এগুলো হচ্ছে: জাহিন টেক্সটাইল, জাহিন স্পিনিং, তুংহাই নিটিং, অলটেক্স, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, সিএনএ টেক্সটাইল, ঢাকা ডায়িং, ডেল্টা স্পিনিং, জেনারেশন নেক্সট টেক্সটাইল, ফ্যামিলি টেক্স, ম্যাকসন স্পিনিং, মেট্রো স্পিনিং, মোজাফফর হোসেন স্পিনিং মিল, আরএন স্পিনিং ও তাল্লু স্পিনিং।
এদিকে পুঁজিবাজারে সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যাংক খাতের শেয়ারের অবস্থাও ভালো নেই। পতনের ধাক্কায় এ খাতের অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর তলানিতে অবস্থান করছে। বর্তমানে এ খাতের ছয় প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর অভিহিত দরের নিচে অবস্থান করেছে। এগুলো হচ্ছে: এবি ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, এনবিএল ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক।
একইভাবে প্রকৌশল খাতের অলিম্পিক এক্সেসরিজ, গোল্ডেন সন ও ইয়াকিন পলিমারের শেয়ারদর অভিহিত দরের নিচে রয়েছে। এছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাতটি, খাদ্য খাতের একটি, বিবিধ খাতের একটি, ওষুধ ও রসায়ন খাতের চারটি এবং ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের দুই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর অভিহিত দরের নিচে রয়েছে। অন্যদিকে তালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে বর্তমানে অভিহিত দরের নিচে রয়েছে ৩২ ফান্ডের ইউনিট দর।
বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলেন, কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর অস্বাভাবিক হারে কমে যাওয়ার প্রধান কারণ বর্তমান বাজার পরিস্থিতি ও কোম্পানির আর্থিক অবস্থা। প্রতিষ্ঠানগুলো যখন পুঁজিবাজারে আসে, সে তুলনায় এখন আর্থিক অবস্থা করুণ। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান শেয়ারহোল্ডারদের কোনো রিটার্ন বা লভ্যাংশ দিতে পারছে না। অন্যদিকে ভারী হচ্ছে লোকসানের বোঝা। যে কারণে এসব কোম্পানির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ নেই, যার জেরে এসব কোম্পানির শেয়ারদর কমে গেছে। আর চলমান পতন এ পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করেছে।
এ প্রসঙ্গে ডিবিএ’র প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী বলেন, বিনিয়োগকারীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। তারা পুঁজি বিনিয়োগের আগে অনেক ভাবনা-চিন্তা করেন। কারণ, সবাই তার পুঁজির নিরাপত্তা খোঁজেন। বিনিয়োগকারীদের এমন সচেতনতার জন্যই দুর্বল প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর অনেক কমে গেছে।
একই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এ কথা সত্য যে, এসব কোম্পানির আর্থিক অবস্থা ভালো নয় কিন্তু অস্বাভাবিকভাবে দরপতন হওয়ার জন্য দায়ী বাজার পরিস্থিতি। কারণ, সেসব কোম্পানির শেয়ার পাঁচ টাকার কমেও পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে ‘এ’ ক্যাটেগরির কোম্পানিও রয়েছে। তবে দুর্বল কোম্পানির শেয়ারদর কমার জন্য বিএসইসিকেও দায়ী করেন তিনি।
তিনি বলেন, বিএসইসি যদি কোম্পানি অনুমোদন করার ক্ষেত্রে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে, তাহলে কোম্পানিগুলোর এমন অবস্থা হয় না। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও অনেক উপকৃত হন। বিএসইসি যদি দ্রুত বাইব্যাক আইন প্রণয়ন করে, তাহলে প্রতিষ্ঠানগুলোর টনক নড়বে। আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তারা পুঁজিবাজারে আসবেন না।