শেয়ার বিজ ডেস্ক: ভারত পেঁয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরদিনই গতকাল সোমবার যশোর বাজারে ও নীলফামারীর সৈয়দপুরে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১০০ টাকায়। রাতারাতি অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়ায় ক্রেতারা পড়েছেন বিপাকে। দ্রুত এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা। যশোর ও নীলফামারীর সৈয়দপুর প্রতিনিধির পাঠানো খবর:
যশোর: ভারত পেঁয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরদিনই গতকাল সোমবার যশোরের বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১০০ টাকায়। অর্থাৎ গত দু’সপ্তাহে ভারত রফতানি মূল্য বৃদ্ধি আর সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞা জারি করায় যশোরের বাজারে দু’দফায় প্রতি কেজিতে দাম বাড়ল ৪০ টাকা।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর যশোরের বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল প্রতি কেজি ৬০ টাকায়। ভারতে সাম্প্রতিক বন্যায় পেঁয়াজের ফলনে ক্ষতি হওয়ায় সে দেশের সরকার প্রতি টন পেঁয়াজের রফতানিমূল্য ৩০০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৪০০ ডলারে উন্নীত করে। কিন্তু সেদিনই ভারত রফতানিমূল্য নির্ধারণ করে প্রতি টন ৮৫০ ডলার। ভারতের এই ঘোষণার পরদিন ১৪ সেপ্টেম্বর যশোরে পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৮০ টাকায় উঠে যায়। গত রোববার ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিলে গতকাল যশোরে ১০০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়।
যশোর বড়বাজার ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে একশ্রেণির মজুতদারদের হাতে এখনও কয়েক লাখ টন পেঁয়াজ মজুদ আছে। মজুদ পেঁয়াজ বাজারে সরবরাহ করা হলে দাম স্থিতিশীল থাকত। সরকার মজুতদারদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় অচিরেই পেঁয়াজের কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় উঠে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
গতকাল সোমবার যশোরের বড়বাজার পাইকারি মার্কেটে দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হতে দেখা গেছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়। আর ভারতীয় আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়। বড়বাজার হাটখোলা রোডের আড়ত নোয়াখালী এজেন্সির স্বত্বাধিকারী আলমগীর কবির জানান, তিনি দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি পাইকারি ৯০-৯৫ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। আর ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৮৫-৯০ টাকায়।
গতকাল যশোর বড়বাজারে খুচরা দোকানিরা দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করেন ১০০ টাকা কেজি দরে। আগের দিন ২৯ সেপ্টেম্বর তারা এই পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন ৭৫-৮০ টাকা দরে। আর ভারতীয় পেঁয়াজ খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৯০ টাকায়। খুচরা বিক্রেতা মুজাফ্ফার হোসেন জানান, আড়ত থেকে বেশি দাম দিয়ে পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তিনি প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ১০০ টাকায়।
যশোর বেনাপোল বন্দর সূত্রে জানা যায়, গত রোববার সকালেও চারটি ট্রাকে করে ৮১ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। কিন্তু বিকালে ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে বাংলাদেশে ঢোকার জন্য রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা পেঁয়াজের ট্রাকগুলো ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ইমদাদ হোসেন জানান, বাজারে দেশীয় শীতকালীন পেঁয়াজ আসতে এখনও তিন মাস অপেক্ষা করতে হবে। অক্টোবরের শেষের দিকে কৃষক মুড়িকাটা পেঁয়াজ বপন করবে। আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে তা বাজারে উঠবে।
সৈয়দপুর: ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে সোমবার সকালে নীলফামারীর সৈয়দপুরে ১০০ টাকায় উঠেছে প্রতি কেজি পেঁয়াজ। এর আগে বিক্রি করা হচ্ছিল ৬০ টাকা কেজি দরে। সৈয়দপুরেব পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, পেঁয়াজ আমদানি না বাড়লে দাম আরও বৃদ্ধি পাবে। অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়ায় ভোক্তারা আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কারসাজির অভিযোগ তুলেছেন।
গতকাল সোমবার সৈয়দপুর পৌর পাইকারি সবজিবাজার ঘুরে দেখা যায়, দু-চারটি আড়তে পেঁয়াজের দেখা মিললেও অন্যগুলো ছিল প্রায় ফাঁকা। পাইকারি হিসেবে প্রতি কেজি ৮৫-৯০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বাজারের আড়তদার মেসার্স বাঁধন ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী কবিরুল ইসলাম কবির জানান, রোববার বিকালেও প্রতি কেজি ৫৬-৫৮ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর সন্ধ্যা থেকে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
খুচরা বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা জাকিরুল ইসলাম জানান, রোববার সকালেই ৫৮-৬০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। অথচ গতকাল বাজারে সেই পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে ১০০ টাকা দরে। গৃহিণী সুলতানা ও শাহানাজ পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
সৈয়দপুর বণিক সমিতির সভাপতি ইদ্রিস আলী জানান, ভারত রফতানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ায় বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বাজার স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) পরিমল কুমার সরকার জানান, কী কারণে দাম বাড়ল তা খোঁজ নেওয়াসহ বাজার স্বাভাবিক রাখতে মনিটরিংয়ের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
