রুবাইয়াত রিক্তা: সূচকের ওঠানামা, শেয়ারের দর বৃদ্ধি, হ্রাস ও পতন এসব নিয়েই পুঁজিবাজার। এ বাজারে অতিরিক্ত কিছুই ভালো নয়। যেমন, বেশি দরবৃদ্ধি বড় পতন ডেকে আনে। বড় পতন বাজারে অনাস্থার সৃষ্টি করে। ধীরে ধীরে বাজার পরিপক্ব হওয়াটাই কল্যাণকর। তাই বলে পুঁজিবাজার শম্বুকগতির হলে চলবে না। তাতে সমস্যা। তবে কচ্ছপগতি হলে চলবে। যেমন, গত ১০ দিন ব্যাংকের শেয়ারদর ১০-২০ পয়সা করে বেড়েছে। বিনিয়োগকারীরা মুনাফা তুলে নেওয়ায় বিক্রির চাপ বেড়ে গেছে। এতে গতকাল ব্যাংকের দর কমেছে। এটা ভালো লক্ষণ। এভাবে দরবৃদ্ধি-হ্রাস বিনিয়োগকারীদের জন্য ক্ষতিকর নয়; বরং আশাব্যঞ্জক।
পুঁজিবাজারে একধরনের শেয়ার রয়েছে, যেগুলো দর ওঠানামার মধ্যে ভারসাম্য থাকে। কখনোই অতিরিক্ত বাড়া-কমা করে না। কোম্পানিগুলো নিয়মিত ডিভিডেন্ড দেয়। সেটার ওপর ভরসা করে অনেকে বিনিয়োগ করেন। এসব কোম্পানি নিয়ে বাজারে কোনো গল্প-গুজব নেই। নেই কোনো আহামরি খবর। মোটেও জনপ্রিয় নয় এসব কোম্পানি। কারণ তাদের নিয়ে জুয়া খেলা নেই। তাই বড় ধরনের লাভ-ক্ষতিরও সম্ভাবনা নেই। এগুলো ঝুঁকিমুক্ত শেয়ার।
অনেক কোম্পানি রয়েছে, যেগুলো প্রতি বছর ১০-২০ শতাংশ হারে বোনাস বা ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেয়। বছর বছর তাদের মুনাফা না বাড়লেও কমে না। এটা কোম্পানির জন্য বড় শক্তি। দীর্ঘ মেয়াদে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ অনেক বেশি লাভজনক। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সব খাতেই এ ধরনের কিছু কোম্পানি রয়েছে। তারা প্রকৃত মৌলভিত্তির। এসব কোম্পানি খুঁজে বিনিয়োগ করলে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে গত তিন কার্যদিবসে সূচক ৮০ পয়েন্ট বাড়ার পরেও গতকাল সূচক বেড়েছে ৪ পয়েন্ট। সূচক ৪ পয়েন্ট বাড়লেও লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা। গতকাল বাজারে ১৪৫টি কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে, ১৪৫টির দর বেড়েছে আর ৪০টি কোম্পানির দর অপরিবর্তিত ছিল। গতকাল ব্যাংকিং খাতের ১১ কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে। এ কারণে সূচক তেমন বাড়তে পারেনি। সূচকের পতন ঠেকিয়েছে মূলত আর্থিক খাত। এ খাতের ১৪টি কোম্পানির দর বেড়েছে।
গতকাল বাজারে সামনের সারিতে নেতৃত্ব দিয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেড, বেক্স ফার্মা, ফার কেমিক্যাল, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স ও আইপিডিসি। দিনশেষে ১ কোটি ৮১ লাখ শেয়ার লেনদেন হয় বেক্সিমকো লিমিটেডের। কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান বিশ্বের সেরা ধনীদের একজন হওয়ায় বেক্সিমকোর দাম বেড়ে গেছে। গতকাল বেক্স ফার্মারও দর বেড়েছে ৩ টাকা। শেয়ারটি সর্বশেষ ১০১ টাকা ৬০ পয়সায় লেনদেন হয়। গতকাল সকাল থেকেই বাজারে ফার কেমিক্যালের লেনদেন বাড়তে থাকে। দিনশেষে তা ১ কোটি ৮১ লাখে পৌঁছে। রেকর্ড ডেটের পর গতকাল নতুনভাবে বাজারে এসেই বাজিমাত করে লংকাবাংলা ফাইন্যান্স। সকালে শেয়ারটি ৬২ টাকা ৪০ পয়সা দরে বিক্রি হয়। দিনশেষে তা নেমে আসে ৫৯ টাকা ৮০ পয়সায়। গতকাল ১ কোটি ১৩ লাখ শেয়ার লেনদেন হয় লংকাবাংলার। সার্বিক লেনদেন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, গতকাল বাজার কিছুটা সংশোধন হওয়ার কথা ছিল। সূচক কমারও কথা ছিল। তা ঠেকিয়েছে বেক্সিমকো, লংকাবাংলা ও আইপিডিসি। তবে আজ তার একটা প্রভাব পড়তে পারে। সেটি মাথায় রেখেই বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিন।