ইমরান হোসাইন, পাথরঘাটা (বরগুনা): চীনসহ বিশ্বজুড়ে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় আমদানি স্থগিত রাখায় রপ্তানির অভাবে বরগুনার পাথরঘাটায় কাঁকড়াচাষিদের কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। চীনে কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় মূল্য নেমে এসেছে শূন্যের কোঠায়। বর্তমানে প্রতিকেজি কাঁকড়া বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়, যা এর আগে বিক্রি হতো দুই হাজার ৫০০ টাকায়। চাষিরা ঋণ নিয়ে কাঁকড়া চাষ করে লাভের মুখ দেখতে চেয়েছিলেন। হঠাৎ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন এলাকার কয়েকশ’ চাষি। প্রতি বছর এ এলাকার কাঁকড়া চীন, থাইল্যান্ড ও তিউনিশিয়ায় রপ্তানি হতো। এবার চাষিরা রপ্তানির আশায় কাঁকড়া চাষ করে বিক্রি করতে না পাড়ায় লোকসানের মুখে পড়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলায় পাঁচ শতাধিক চাষি প্রায় এক হাজার ঘেরে কাঁকড়া চাষ করেছেন। পাথরঘাটা থেকে প্রতিবছর কোটি টাকার কাঁকড়া বিক্রি করে লাভ করেছেন চাষি। গত বছর পাথরঘাটায় প্রায় ৯ হাজার কেজি কাঁকড়া উৎপাদন করা হয়েছিল। দুই হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে আয় হয়েছিল প্রায় দুই কোটি ২৫ লাখ টাকা। চলতি বছরে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১১ হাজার কেজি।
স্থানীয় আড়তদাররা জানান, ঢাকার পাইকাররা জানিয়েছেন, চীনে কাঁকড়া যাচ্ছে না, তাই তারা কিনছেন না। এ জন্য আমরাও চাষিদের কাছ থেকে কাঁকড়া কিনছি না।
উপজেলার চরদুয়ানি ইউনিয়নের কাঁকড়াচাষি উত্তম মজুমদার জানান, তিনি এক একর জমিতে নির্মিত ঘেরে আড়াই হাজার কেজি কাঁকড়া চাষ করছেন। প্রতি মাসে চার লাখ টাকার খাবার দিয়ে তিন মাস ধরে পরিচর্যা করে আসছেন। এখন কাঁকড়া বিক্রির উপযোগী হলেও দাম না থাকায় বিক্রি করতে পারছেন না তারা। একই এলাকার নারী উদ্যোক্তা পুতুল রানী ৩৩ শতাংশ জমিতে ৭৫০ কেজি কাঁকড়ার চাষ করে লোকসানের মুখে পড়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।
পেইচ প্রকল্পের সহকারী ভ্যালুচেইন ফ্যাসিলিটেটর গোলাম মোর্শেদ রাহাত জানান, পিকেএসএফের সহযোগিতায় স্থানীয় এনজিও সংগ্রামের মাধ্যমে পাথরঘাটায় প্রায় পাঁচ শতাধিক উদ্যোক্তাদের কাঁকড়া চাষে উদ্বুদ্ধ করি। এতে তারা বিগত কয়েক বছরে অনেক লাভবান হয়েছেন। বর্তমানে গোনট পূর্ণাঙ্গ কাঁকড়া বিক্রি করতে না পারায় তাদের কোটি টাকা লোকসান গুনতে হবে।

পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু বলেন, চাষিদের একটু ধৈর্য ধরে কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হবে। মড়কের হাত থেকে রক্ষা পেতে চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোস্তাইন বিল্লাহ জানান, আন্তর্জাতিকভাবে করোনাভাইরাসের জন্য বাজার খারাপ হওয়ায় এর প্রভাব আমাদের দেশে পড়তে শুরু করেছে। সংকটের সামাল দিতে চীনের বিকল্প দেশের খোঁজ করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। অতি শিগগিরই একটি সমাধান আসবে বলে তিনি জানান।