কবিরহাটে সন্ত্রাসী কায়দায় কৃষকের বাড়ি দখল, মামলা হলেও গ্রেফতার নেই

প্রতিনিধি, নোয়াখালী: নোয়াখালীর কবিরহাটে রাতের আঁধারে সন্ত্রাসী কায়দায় এক অসহায় ও হতদরিদ্র কৃষকের বাড়ি দখলের অভিযোগ করা হয়েছে। এ সময় ৯০ বছরের এক বৃদ্ধসহ ছয়জনকে কুপিয়ে আহত করা হয়।

এ ঘটনায় মামলা হলেও এখনো কেউ গ্রেফতার হয়নি। সন্ত্রাসীদের বিচার চেয়েছে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগীরা। মঙ্গলবার (৫ মে) দুপুরে নোয়াখালী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করা হয়েছে।

এর আগে ভুক্তভোগী গ্রাম পুলিশ আবদুর রহিম বাদী হয়ে ২৩ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ১০০-১৫০ জনকে আসামী করে কবিরহাট থানায় মামলা করা হয়।

এর আগে শনিবার (২ মে) ভোর রাতে উপজেলার ৩ নং ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের নলুয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আদালতের ১৪৪ ধারা অমান্য করে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মুনাফের ইন্ধনে এ হামলা ও লুট করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে গুরুতর আহত বৃদ্ধ আবুল কালাম, মোজাম্মেল হোসেন, তার স্ত্রী হালিমা খাতুন এবং গ্রাম পুলিশ আবদুর রহিম উপস্থিত হয়ে নির্মম সেই ঘটনার বর্ণনা দেন।

ভুক্তভোগীরা বলেন, ‘আমাদের মালিকীয় ও ভোগ দখলীয় জমিতে আদালতের ১৪৪ ধারা অমান্য করে গ্রীস প্রবাসী নুর মোহাম্মদের নেতৃত্বে বসত বাড়ি ও ঘরে হামলা করেন। এ সময় ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করে তারা বাড়ি দখলের চেষ্টা করে। অস্ত্রধারীদের আঘাতে কৃষক মোজাম্মেলের শ্বশুর ৯০ বছরের বৃদ্ধ আবুল কালামসহ ৬ জন গুরুতর আহত হয়। এলাকাবাসী তাদের উদ্ধার করে নোয়াখালী ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করেন। এর মধ্যে বৃদ্ধ আবুল কালাম, মোজাম্মেল হোসেনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।’

 ‘‘এ ঘটনায় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মুনাফ ও গ্রীস প্রবাসী নুর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে হামলা ও দখলে সরাসরি সন্ত্রাসীদের ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।’’

ভুক্তভোগীরা দাবি করেন, ‘নলুয়া মৌজায় বিভিন্ন খরিদীয় দলিল মূলে ৭ একর ৬২ শতক জমির মালিক ছিলেন এ কে এম নিজাম উদ্দিন মাষ্টার। তিনি মৃত্যুর সময় নি:সন্তান ছিলেন। ফলে ওয়ারিশ সূত্রে এ সম্পত্তির মালিক হন তার মা, এক ভাই ও বোন। আহত কৃষক মোজাম্মেল ওই জমির মালিক এ কে এম নিজাম উদ্দিন মাষ্টারের বোন কামরুন নাহারের কাছ থেকে ১ একর ৫৪ শতক জমি কিনে নেন। পরে ওই জমিতে বাড়ি-ঘর নিমার্ণ করে ভোগ দখল ও চাষাবাদ করে আসছিলেন। কিন্তু প্রবাসী নুর মোহাম্মদ ও তার পরিবারের লোকজন দীর্ঘদিন এ জমি দখল করে রাখে। এ নিয়ে আদালতে মামলা হয়। আদালত এ জমির উপর ১৮৯৮ সালের ফৌজধারী আইন অনুযায়ী ১৪৪ ধারা জারি করে।’

আরো অভিযোগ করা হয়, ‘গ্রীস প্রবাসী নুর আহম্মদের নেতৃত্বে আবুল কাসেম, নুরুজ্জামান বাটু, ফয়েজ আহম্মদ, তোফায়েল আহম্মদসহ ১০০-১৫০ জন বহিরাগত সন্ত্রাসী অস্ত্র নিয়ে রাতের আঁধারে অসহায়, নিরীহ ও হতদরিদ্র্য মোজাম্মেল হোসেনের বসত বাড়িতে হামলা চালায়। এ দিন ভোর বেলায় পরিবারের লোকজন কিছু বুঝে উঠার আগেই সন্ত্রাসীরা বসত ঘরের ছাল, দরজা, জানালা, বেড়া কেটে নিয়ে যায়। তারা বসত ঘরের প্রয়োজনীয় ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে পুরো ঘরের নিশানা মুছে দেয়। এ সময় ওই পরিবারের আবুল কালাম, মোজাম্মেল হোসেন, হালিমাসহ অপরাপরদের বেদড়ক পিটিয়ে ও কুপিয়ে রক্তাক্ত করে পৈশাচিক কান্ড চালায়।’

তারা বলেন, ‘আজো ঘরের ভিটিতে চাল, ডালসহ ঘরের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মাটিতে তছনছ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সন্ত্রাসীরা পুকুরে পবিত্র কোরআনসহ পরিবারের ব্যবহার করা লেপ-তোষক পানিতে ফেলে দেয়। এছাড়া সন্ত্রাসীদের কোপের রোষানল থেকে ঘরের পাশের সৃজিত কড়ই, কলা গাছসহ মূল্যবান ফলজ গাছপালাও রক্ষা পায়নি। বর্তমানে তারা খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন, তাদের যাওয়ার আর কোন জায়গা নেই। এছাড়া সন্ত্রাসীরা প্রতিনিয়ত তাদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। এতে এ পরিবারের আনুমানিক ৬-৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন তারা।’