গণমাধ্যমে বাড়ুক নারীর অংশগ্রহণ ও

শফিকুল ইসলাম খোকন: সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম দুটি শব্দের সঙ্গেই আমরা ভালোভাবে পরিচিত। পাশাপাশি পুরুষের সঙ্গে নারীর সম-অধিকারের বিষয়েও দেশের অনেকেই এখন সোচ্চার। নারী আন্দোলনকারী, সংস্থা বা সরকার, এমনকি এনজিওকর্মীরা নারীর সম-অধিকার নিয়ে কাজ করছে। প্রত্যেক স্তরে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা সমান তালে কাজ করছেন। সাংবাদিকতায় অংশগ্রহণ থাকলেও ইতিপূর্বে গণমাধ্যমে নারীর সম-অধিকার বিষয়ে তেমন কাউকে সোচ্চার হতে দেখিনি।

একবিংশ শতাব্দীতে সাংবাদিকতা আকর্ষণীয় পেশা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। তথ্যপ্রযুক্তি আর প্রতিযোগিতার এ যুগে গণমাধ্যমগুলোর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সবার আগে সংবাদ পৌঁছে দেওয়া। বাংলাদেশসহ বিশ্বের গণমাধ্যমগুলো এ কাজটি সফলতার সঙ্গেই করছে। আর এর পেছনে পুরুষের পাশাপাশি চ্যালেঞ্জের ভাগিদার নারীরাও। বিশাল অবদান সত্ত্বেও গণমাধ্যমে তাদের তেমন ক্ষমতায়ন দেখা যায় না। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষে বৈষম্য হওয়া উচিত নয়।

এখন প্রত্যেক স্তরে নারীর অংশগ্রহণ বা নারী নেতৃত্ব বাড়ছে। বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নারী; বিরোধী দলের নেতাও নারী। দেশ স্বাধীনের পর সম্প্রতি প্রথম নারী নির্বাচন কমিশনার, জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রী, এমপি, সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদ অলংকৃত করছেন নারীরা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে নারীর অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য। এত কিছুর পর নারীর উন্নয়ন বা নেতৃত্ব বাড়লেও কিন্তু বাড়েনি ক্ষমতায়ন। তেমনি গণমাধ্যমে নারীর অংশগ্রহণ ক্রমান্বয়ে বাড়লেও নেতৃত্ব বা ক্ষমতায়ন বাড়েনি। দেখা যায় মাত্র এক থেকে দুটি পত্রিকা, টিভি সম্পাদনা বা পরিচালনায় রয়েছেন নারী। সে হিসেবে এখনও গণমাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন উল্লেখযোগ্য নয়। এক্ষেত্রে নারীদের এগিয়ে আসা উচিত।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, প্রতিটি সংবাদমাধ্যমে এক-তৃতীয়াংশ নারীকর্মী নিয়োগ দিতে হবে। একই সঙ্গে সরকারি নীতিমালার পাশাপাশি প্রত্যেক পত্রিকা অফিসের নিজস্ব নীতিমালা থাকতে হবে। প্রত্যেক সংবাদমাধ্যমে এক-তৃতীয়াংশ নারীকর্মী নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে বাধ্যবাধকতা থাকতে হবে। এ বিষয়ে প্রত্যেক হাউজে তদারকির মাধ্যমে খোঁজ-খবর নিতে হবে।

তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, গণমাধ্যমের প্রতিষ্ঠানিকীকরণের বিষয়ে অনেক কাজ করছি। ইতোমধ্যে ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগ রয়েছে। সেখানে প্রচুর মেয়ে লেখাপড়া করছে। সরকারিভাবে নারী-পুরুষ সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। নারী ও পুরুষ সাংবাদিকদের মধ্যে বৈষম্য দূর করতে হবে। এতে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে সাংবাদিকদেরই।

আমরা শুধু মুখেই বলছি নারীর অধিকার, নারীর সম-অধিকারের কথা; কিন্তু এখনও কর্মস্থল থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য দেখা যায়। গণমাধ্যম বা সাংবাদিকদের বলা হয় ‘চতুর্থ রাষ্ট্র’ কিংবা জাতির আয়না। যারা নিয়ম-অনিয়ম, সমস্যা-সম্ভাবনা জাতির কাছে তুলে ধরেন, সে সাংবাদিকরাই সব সময় থাকেন অবহেলা আর বৈষম্যের মধ্যে। আর নারীর অবস্থান তো বলার অপেক্ষা রাখে না। তারপরও নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে, তাদের প্রতি বৈষম্য কমছে, তাদের সম্মানও বাড়ছে। সবশেষ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নারীর প্রতি সম্মান দেখিয়ে বিচারকার্যের শুরুতে আটজনকে মামলার শুনানিতে বিশেষ সুযোগ দেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ। এ আট আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী ছিলেন নারী। সংসদের ১৪তম অধিবেশনও নারী সদস্যদের দিয়ে শুরু করেন স্পিকার। আরও একটি খবর হলোÑনারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ বলে সংসদে জানান প্রধানমন্ত্রী।

নারী এখন আর আগের মতো পিছিয়ে নেই। তারা পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সবকিছুতে এগিয়ে থাকছে, সর্বক্ষেত্রে অবদান রাখছে। সবশেষে নারীরা ওড়ালেন বিশেষ বিমান। এমনিভাবে সাংবাদিকতায় হোক নারীর যথাযথ ক্ষমতায়ন। যেখানে থাকবে না কোনো বৈষম্য। গণমাধ্যমে বার্তাসহ সব বিভাগে উৎসাহব্যঞ্জক পদচারণা থাকুক তাদের। এক-তৃতীয়াংশও নয়, থাকতে হবে সমানে সমান নারীকর্মীর অংশগ্রহণ বা প্রতিনিধিত্ব।

সাংবাদিক

msi.khokonpÑgmail.com